শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আইনের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র এলপি গ্যাস ও পেট্রল বিক্রি

আইনের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র এলপি গ্যাস ও পেট্রল বিক্রি

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনায় রাস্তাঘাট, বাজার এলাকা ও সড়কের বিভিন্ন মোড়ে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, পেট্রলসহ দাহ্য পদার্থ। দাহ্য পদার্থ বিক্রির নীতিমালা মনছেনা বিক্রেতারা। ফলে যেকোনো সময় বিস্ফোরণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইনের তোয়াক্কা না করে শুধু ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা।

গতকাল শনিবার দাহ্য পদার্থ বিক্রির বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অবাধে বেচাকেনা চলছে। দোকানপাটে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। দোকানদার এক লিটার অথবা দুই লিটারের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে টেবিলের ওপর পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি পেট্রল কিনতে পারছে। অথচ দাহ্য পদার্থ পেট্রল বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়।

উপজেলা ফায়ার সার্ভিস দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক বিপর্যয় রক্ষায় সিও২ ড্রাই পাউডার ও সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে দাহ্য পদার্থ বিক্রয়ে।

দশমিনা সিনিয়র জুডিশিয়ান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি এ্যাড. এনামুল হক রতন বলেন, বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ধারার ২বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোন ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে না বলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী আটটি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১ধারায় বলা আছে, আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রল, মবিল বিক্রির জন্য কমপক্ষে ফ্লোর পাকাসহ আধপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী ওই সব শর্ত পূরণ করলেই কেবল বিস্ফোরক লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না।

দশমিনায় অনুমোদিত পেট্রল পাম্প নেই। পেট্রলসহ বিভিন্ন তেল বিক্রির অনুমোদন রয়েছে ৬ জনের। অন্যদিকে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন পেয়েছেন ২জন।

দূর্ণীতি দমন কমিশন দশমিনা উপজেলা কমিটির সভাপতি আহাম্মেদ ইব্রাহিম অরবিল বলেন, এ উপজেলায় দিন দিন বেড়ে চলেছে দাহ্য পদার্থ বিক্রির দোকানের সংখ্যা। কোমল পানীয়র বোতলে ভরে পেট্রল বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানের পেট্রলের ক্রেতাকে অনেক দোকানি চেনেন না বা জানেন না। এটি খুবই বিপজ্জনক। দুষ্কৃতকারীদের হাতে পেট্রল চলে যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা সদরের এক দাহ্য পদার্থ বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টুকটাক তেল বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাই। আমরা এই আইন সম্পর্কে কিছুই জানি না।’

বাংলাদেশ মনবাধিকার কমিশনের দশমিনা উপজেলা কমিটির সভাপতি এ্যাড. তপন কুমার দেবনাথ বলেন, এ উপজেলার বেতাগী, ঠাকুরবাজার, গোপালদী, নলখোলা, আলীপুর, চাঁনপুর, রণগোপালদী, গুলি, আউলিয়াপুর, যৌতা, আরজবেগী, সেন্টারবাজার, পাগলাবাজার, গোলখালী, হাজিকান্দা, কেদিরহাট, বাঁশবাড়িয়া, গছানী, দক্ষিণদাসপাড়া, বাংলাবাজার, পূঁজাখোলা, আদমপুর, মোল্লারহাট, আমতলা, আয়শারহাট, বগুড়া বাজার ও বাজারে যাতায়ত সড়কের পাশে মুদি ও রকমারি দোকানেও পেট্রলের পাশাপাশি দাহ্য পদার্থ বিক্রি হচ্ছে। এ উপজেলায় এ রকম প্রায় ২০০ দোকান রয়েছে। অনেক দোকানে আবার এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব দোকান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন। সর্বশেষ নলখোলা বন্দরে অগ্নিকান্ডের মূল কারণ পেট্রল ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান জুয়েল এন্টারপ্রাইজ। এতে ওই দোকানসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের পরও এ উপজেলায় যত্রতত্র দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা বন্ধ হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, যাঁদের নামে অনুমোদন আছে, তাঁরাই শুধু এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রলসহ দাহ্য পদার্থ বিক্রি করতে পারবেন। দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। যত্রতত্র বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কর্মকাÐে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#

১৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS