শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পর্যটন কেন্দ্রের শত কোটি টাকার খাস জমি বেদখল

পর্যটন কেন্দ্রের শত কোটি টাকার খাস জমি বেদখল

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : ১৯৯৮ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। কুয়াকাটায় আসা পর্যটক ও স্থানীয় নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর এটিকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। এ সময় জমির দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর এ সুযোগে ভূমি অফিসের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে একটি চিহ্নিত চক্র বহু ভুয়া খতিয়ান খুলে কুয়াকাটায় সরকারের খাস জমি বিক্রি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। এসব লুজ খতিয়ান বাতিল করে খাস জমি উদ্ধারের প্রক্রিয়াও এখন থমকে আছে। এতে বাইরের প্রকৃত লগ্নিকারকরাও পড়েছেন বিপাকে। কুয়াকাটা পৌরসভার অবস্থান লতাচাপলী মৌজায়। এ মৌজায় সরকারি হিসাবে দেড় সহ¯্রাধিক খতিয়ান রয়েছে। যার মধ্যে ১১৫৭টি রয়েছে প্রিন্ট খতিয়ান। বাকি সব লুজ বা ভুয়া খতিয়ান। এর সংখ্যা অন্তত ২০০।

সূত্র মতে, ১১৫৮ থেকে ১৩৫৮ পর্যন্ত খতিয়ানের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সরকারি খাস জমি জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে কুয়াকাটাকে পরিকল্পিত আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ায় আবার মাঠে নেমেছে প্রতারকচক্র। এই সুযোগে কুয়াকাটার ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার জমির ওপরে নজর পড়েছে আবাসন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। বিশেষ করে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এখন এক শতক জমির মূল্য দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত।

ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে একটি চক্র বহু আগেই লুজ খতিয়ান খুলে সরকারের সহ¯্রধিক একর খাস জমি হাতিয়ে নিয়েছে। যার মূল্য বর্তমানে হাজার কোটি টাকা। এই চক্রটির দৌরাত্ম্যের কারণে ভূমি অফিসের সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েন। তারা অফিসের রেকর্ড পর্যন্ত নষ্ট কিংবা গায়েব করে দিয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে। তারাই গুরুত্বপূর্ণ চারটি মৌজার ত্রæটিপূর্ণ মালিকানাধীন জমি দখলের কাজে সক্রিয় রয়েছে।

২০১১ সালের প্রথম দিকে সরকারিভাবে লতাচাপলী, চরচাপলী, কাউয়ারচর ও গঙ্গামতি মৌজার খাস জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। সে বছরের ৭ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৬৯ নম্বর স্বারকে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির নির্দেশনায় তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল আউয়াল প্রায় ৯০০ বন্দোবস্ত কেস যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শনাক্ত করেন। কিন্তু বর্তমানে এ কাজের অগ্রগতি রহস্যজনকভাবে থমকে আছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, লতাচাপলী ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী কোটিপতির প্রত্যক্ষ যোগসাজশে অন্তত ১০০ একর খাস জমি ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার নাম করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এই চক্রের মূল হোতারা সরকারের অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত করেছে। এর মধ্যে ১৩৪৬ খতিয়ানের চার একর ৭৭ শতক খাস জমি হাতিয়ে নেয়ার খবরটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, জেলা ও উপজেলা ভূমি প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে পর্যটন এলাকার হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পতি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৩৪৬ খতিয়ানটি এসপি নম্বর ৫০-কে ৫৩/৫৪ সেটেলমেন্ট কেসের মাধ্যমে মিস কেস ৭১ কে-৬০/৬১ এর মাধ্যমে মালেক ফরাজি গংদের নামে মালিকানা দেখানো হয়। এই জমির ওপর একটি স্থাপনা নির্মাণকাজ প্রশাসনের নির্দেশনায় কিছুদিন বন্ধ থাকে। ২০০৪ সালের ৯ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএ-৩-১১/পটু-২০০৩/১৯২৭ স্মারকে এবং উপজেলা ভূমি অফিসের ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবরের ৯৬৬ স্মারকে খতিয়ানটির মালিকানা বাতিল করা হয়। ঘোষণা করা হয় সরকারি খাস জমি। ইতঃপূর্বে এই জমির ভাগাভাগি নিয়ে কলাপাড়া উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও হয়। ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-যার নামে এই জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে তার (মালেক ফরাজী) ১৯৫৩-৫৪ সালে বয়স ছিল মাত্র সাত বছর। একই অবস্থা ১২৭০সহ একাধিক জাল খতিয়ানের। এসব সরকারি খাস জমি উদ্ধারে স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, সরকারি খাস জমি উদ্ধার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটা অব্যাহত রয়েছে।###

৪১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS