শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
<span class="entry-title-primary">নেত্রকোনা পিবিআই-এর চাঞ্চল্যকর রাজীব হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন</span> <span class="entry-subtitle">মাদক পরিবহনে অপারগতা প্রকাশ করায় মোটর সাইকেল চালক খুন</span>

নেত্রকোনা পিবিআই-এর চাঞ্চল্যকর রাজীব হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন মাদক পরিবহনে অপারগতা প্রকাশ করায় মোটর সাইকেল চালক খুন

এ কে এম আব্দুল্লাহ্, নেত্রকোনা : নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার চাঞ্চল্যকর রাজীব হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

নেত্রকোনা পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বুধবার তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মাদক পরিবহন করতে অস্বীকার করায় সাড়ে চার হাজার টাকায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক রেজাউল করিম রাজীবকে (২২) হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য শরীরের সাথে সিমেন্টের জমাট বাঁধা পাথর বেঁধে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দেয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, মোহনগঞ্জ পৌরসভার দেওথান এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে রাজীব (২২) ভাড়ায় মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

বিগত ২০২১ সালের ৫ মে রাত ১০টার দিকে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক রাজীব দুই জন যাত্রী নিয়ে মোহনগঞ্জ থেকে আদর্শ নগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। ভাটিয়া গ্রামের স্থানীয় লোকজন ৭ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেখ ইসলামের পুকুর পাড়ে মাটি চাপা দেয়া বস্তা দেখে মোহনগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি সরিয়ে সিমেন্টের বস্তায় ভরা লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে এটি নিখোঁজ রাজীবের লাশ বলে পরিবারের লোকজন সনাক্ত করে।

এ ব্যাপারে নিহত রাজীবের পিতা মোঃ বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে সন্দেহজনক ১২ জনকে আসামি করে ঘটনার দুইদিন পর ৯ মে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মোহনগঞ্জ থানার পুলিশ মামলার কোন কূল কিনারা করতে না পারায় ১৭ মে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় নেত্রকোনা পিবিআইকে।

পিবিআই রাজীবের গলায় পেঁচানো শার্টের সূত্র ধরে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তদন্তকালে শার্টের মালিক হাটনাইয়া গ্রামের যতন মিয়াকে (৪২) খুঁজে বের করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে দেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই ভাড়াটিয়া খুনি দেলোয়ার হোসেন দিলুকে (৩৭) ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে, মোঃ মাহবুবকে (২১) হাটনাইয়া থেকে, সিরাজুলকে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দার নলদীঘির পূর্বপাড়া থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরো জানান, মোহনগঞ্জ উপজেলার হাটনাইয়া গ্রামের মাহবুব ও আবুল হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি তাদের ইয়াবা মোটর সাইকেলে আনা নেয়ার করার জন্যে রাজীবকে প্রস্তাব করলে সে ইয়াবা আনা নেয়া করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে মাহবুব ও আবুল হোসেন তার উপর ক্ষিপ্ত হন। এর কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে হত্যা ও একাধিক অস্ত্র মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন দিলু তাদের গ্রামের বাড়ি হাটনাইয়া বেড়াতে আসে। পরবর্তীতে তারা দিলুকে সাড়ে চার হাজার টাকায় রাজীবকে হত্যার জন্যে ভাড়া করেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তাদের সহযোগী আনোয়ার ও শুক্কুর ৫ মে রাতে ২ শত টাকায় মোহনগঞ্জ থেকে আর্দশ নগর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজীবের মোটর সাইকেল ভাড়া করে ভাটিয়া গ্রামের শেখ ইসলামের ফিসারীতে নিয়ে যায়। পরে আট জনে মিলে রাজীবকে হত্যা করে।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত খুনি দিলুকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে সে বিজ্ঞ বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

২৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS