শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে ৬০ কোটি টাকার মিশনের নিয়োগ বানিজ্য সুজন বাক্কারে এমপির বিষ ফোড়া

তানোরে ৬০ কোটি টাকার মিশনের নিয়োগ বানিজ্য সুজন বাক্কারে এমপির বিষ ফোড়া

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহী তানোরে অন্তত ৬০ কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্যের মিশন নিয়ে প্রায় দিন কোন না কোন স্কুলে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ করছেন উড়ে এসে জুড়ে বসা বহিরাগত হাট ব্যবসায়ী আবুল বাসার সুজন ও হাতুড়ী প্রতীকের প্রশ্নবিদ্ধ ভাইস চেয়ারম্যান নব্য আওয়ামীলীগ আবু বাক্কার সিদ্দিক বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই না  এক পদে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে টাকা বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। এমন বেপরোয়া নিয়োগ বানিজ্যের খবরে নেতাকর্মীরা চরম হতাশ। কারন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুজন ও বাক্কার বিষফোড়া হয়ে উঠেছেন। সুতরাং এদের লাগাম টানতে এমপি ফারুক চৌধুরীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তৃনমুলের নেতাকর্মীরা। নয়তো ভোটের মাঠে এর চরম বিরুপ প্রভাব পড়বে। যার জবাব এমপিকেই দিতে হবে, সুজন ও বাক্কারকে দিতে হবে না। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে এদেরকে এসব দায়িত্ব দেওয়া মোটেও সঠিক হয়নি। তাদের দলীয় কোন পদ নেই। অথচ অনেক সিনিয়র ত্যাগী নেতারা এসব কারনে চরম হতাশ। এর অনেক কারনও রয়েছে এত সিনিয়র নেতা থাকতে যাদের কোন পদ পদবি তো নেই বরং তারা মৌসুমি নেতা, তাদের এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া মোটেও সঠিক হয় নি। যা এমপি এখন বুঝতে পারছেন না, তিনি বুঝবেন অল্প সময়ের মধ্যে যখন আর কিছুই করনীয় থাকবে না এবং কিনারাও খুজে পাবেন না।
জানা গেছে, উপজেলায় এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে  ৫৪ টি নন এমপি ৫ টি সব  মিলে ৬১ টি, মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত ২০ নন এমপিও ৮ মোট ২৮ টি ও এমপিওভুক্ত কলেজ ১৩ টি, টিবিএম ২ টি নন এমপিও ৪ টি মোট ১৯ টি। স্কুল ও কলেজ এবং মাদ্রাসা মিলে ১০৮ টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিম্মে ৩ টি উর্ধ্বে ৫ টি পদে কর্মচারী নিয়োগ চলছে। প্রতি পদে প্রকার ভেদে নিম্মে ১২ লাখ  উর্ধ্বে ১৬ লাখ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।  ১০৮টি প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৪ টি করে পদে ১৪ লাখ টাকা করে নিলে মোট ৬০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে আসে। তবে অনেকেই বলছেন এক পদে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে যে ভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে তাতে করে ৬০ কোটি না ১০০ কোটি টাকার নিয়োগ মিশন চলছে বলে সিনিয়র নেতাদের ধারনা।
দলীয় সুত্র জানায়, চলতি বছর থেকে আওয়ামীলীগের সম্মেলন জুলাই মাস পর্যন্ত নিয়োগ বানিজ্য হাতেগোনা ছিল। কিন্ত সম্মেলন পরবর্তী পাইকারি ভাবে অপেন নিয়োগ বানিজ্য শুরু করেন এমপির আস্থাশীল আবুল বাসার সুজন ও নব্য আওয়ামীলীগ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু বাক্কার সিদ্দিক। শুধু নিয়োগ বানিজ্য না তারা অনেক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। সুজন ও বাক্কার সম্মেলনের আগে এমপির কাছে সে ভাবে ছিল না। কিন্তু সম্মেলনের পর এমপিকে এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে, আর এমন কিছু ভুলভাল বুঝিয়েছেন সেটাকে মাথায় নিয়ে সুজন ও বাক্কার যে ভাবে নিয়োগ বানিজ্য শুরু করেছেন যা কল্পনাতীত। হাটে গরু যেমন দাম দর করে প্রকাশ্যে যে ভাবে কেনাবেচা হয়, ঠিক একই কায়দায় নিয়োগ প্রার্থীদের কাছে দর দাম তুলে যার দাম বেশি হচ্ছে সে পাচ্ছে নিয়োগ। সে হোক বিএনপি কিংবা জামাত পরিবারের, এটা কোন বিষয় না, দাম যে দেবে বেশি সে পাবে নিয়োগ পরিস্কার কথা। কিন্তু এমপির ভাবা উচিৎ ছিল আগামীতে জাতীয় নির্বাচন, তার আগে কোন নির্বাচন নেই। এসময় দলীয় ভাবে কাজ করা একান্ত প্রয়োজন ছিল।
আমরা ভেবেছিলাম রাব্বানী মামুন বিদ্রোহ করার জন্য বাদ পড়েছে। কিন্তু যারা নতুন এসেছেন তারা তো নামের মাত্র। শুধু দলীয় সভায়। কোন ধরনের সুযোগ নেই। এরকম অকেজো কমিটির মাথার উপর ভর করে অন্যকে দিয়ে বানিজ্য কেউ মানবে না। এখন সবাই মুখ বন্ধ করে আছে,  যখন শুরু হবে তখন আর থামানো যাবে না।
অনেক দলীয় লোকজন টাকার জন্য চাকুরী পাচ্ছে না। তারা যে একেবারেই টাকা দিবে না সেটাও না। চাহিদা দিয়েছে ১২ লাখ টাকা, দিতে পারছে ১০ লাখ টাকা, তাও হবে না নিয়োগ। তাহলে ভোটের মাঠে কি জবাব দিব আমরা। সুজন বাক্কারের কাছে কেউ কিছু বলবে না, বলছে মাঠের নেতাদের, শুনতেও হচ্ছে আজেবাজে কথা।
তৃনমুলের  এক নেত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, সারা জীবন দল করে আসলাম, আয়া পদে আবেদন করেছিলাম, ১০ লাখ টাকাও দিতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে চাকুরী তো দুরে থাক নিয়োগ কখন হয়েছে সেটাও জানিনা, পরে জানতে পারছি ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে শহরে বসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাত্র ২ লাখ টাকার জন্য চাকুরী হল না। ১০ লাখ দিতে চেয়েছিলাম, আর ২ লাখ লাগবে বললে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দিতাম। অথচ নিয়োগের দায়িত্বে থাকা আবুল বাসার সুজনকে একাধিকবার বলেছি, আশ্বাসও দিয়েছিল, পরে বলছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করা হয়নি। এর চেয়ে কষ্টের আর  কি হতে পারে,।  হাওমাও করে কান্না শুরু করেন।
চাপড়া স্কুলে অফিস সহকারী পদে গোকুল গ্রামের জামাত পরিবারের সাফিউলের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা দিয়েছেন জমিজমা কট রেখে দিয়েছে, সে এখন চৌবাড়িয়া হাটের শ্রমিক। তালন্দ কলেজে একই পদে  তিন জনের কাছ থেকে। চাদপুর স্কুলে আয়া পদে তিন জনের কাছ থেকে, নারায়নপুর স্কুলেও একই অবস্থা। সবচেয়ে হতাশ হবার বিষয় অসহায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মাহবুরের পিয়নের চাকুরীর জন্য ১২ লাখ টাকা দাবি করলে ৮ লাখ দিয়েছে, একই আরো দুজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
এভাবে প্রায় প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হচ্ছে। এমন নিয়োগ বোর্ডও বাহিরে বসানো হচ্ছে।
সুজন কেমন আওয়ামী লীগ করেন সাবেক মেয়র মিজানের যুবদলের নেতারা তার হাটের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। আবার তারই সহচর সুইট গোল্লাপাড়ায় সেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাহবুরের উপর হামলা করে উল্টো মামলা করল। এঘটনাকে সবাই ঘৃনার চোখে দেখছেন।
পৌরসভার এক বিরোধী নেতা বলেন, সুজন কোন কথা ছাড়াই আপামর পৌরবাসী ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করত। তিনি যে সব সামাজিক মানবিক কাজের মাধ্যমে মনে জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু নিয়োগ বানিজ্যের কারনে সুজনে পচন ধরেছে এবং প্রচুর সমালোচিতও হচ্ছেন।
তানোর পৌরসভা স্কুলে দুটি নিয়োগ ২৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ও মাদ্রাসার এক নিয়োগে একজন ৬ লাখ আরেক জন ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন।
ফেসবুকে উঠে এসেছে, উপজেলার পাচন্দর ইউপির ইলামদহী বালিকা বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী পদে চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাম কে দেওয়া হয়েছে চাকুরী। তিনি চেয়ারম্যান মতিনের একান্ত সহচর। সেই মাহাম ফেসবুকে এমপিকে নিয়ে কুরুচি পূর্ন লিখা পোষ্ট করেন। কেন এমন ব্যক্তিকে চাকুরী দেওয়া হল, এর দায়ভার নিবে কে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েক মাস আগে চাঁদপুর মাদ্রাসার নিয়োগ পরিক্ষা, বোর্ড বসে রাজশাহী মাদ্রাসায়। টাকার বানিজ্য হলেও তিল পরিমান পায়নি অবহেলিত মাদ্রাসাটি।
আরেক আইডিতে তো ঋন করে, জমি, পুকুর পানের বরসহ সবকিছু বিক্রি করে চাকুরীর জন্য ছুটাছুটি করছেন। কেউ হাটের কর্মচারী, কেউ ম্যানেজার।
বেশকিছু স্কুল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সহ অন্যরা জানান, নিয়োগ কি ভাবে হয় সবার জানা। এখানে আমাদের শুধু সহি করা ছাড়া উপায় নেই। পুরো টাকা আদায় করছেন সুজন ও বাক্কার।
তবে অবাক করার বিষয় সুজন বাক্কার কান্ডে ফুসে উঠলেও সবাই নিরব ভুমিকায়। এই নিয়োগ বানিজ্যের কারনে পাড়া মহল্লায় গ্রুপিং লবিং প্রকট আকার ধারন করছে। যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে, জবাবও থাকবে না এমনটাই মনে করছেন সিনিয়র নেতারা।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক হোসেন জানান নিয়োগ স্কুলেই দিতে হবে কে বলেছে, শহরে কেন রাজধানীতেও নিয়োগ বোর্ড বসানো যাবে বলে দম্ভক্তি প্রকাশ করেন।
আবুল বাসার সুজন ও আবু বাক্কার সিদ্দিক জানান, আমরা যা কিছু করছি এমপির নির্দেশনায়। তিনি যে ভাবে বলছেন সে ভাবেই কাজ করা হচ্ছে। তারা আরো জানান আমাদের দিয়ে এসব করানো হচ্ছে এটা অনেকের মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
এমপি ফারুক চৌধুরীর মোবাইলে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
২০০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares