শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, English Version

গুপ্তঘরে বন্দি দুই দিনের রিমান্ডে প্রধান আসামী গ্রাম্য চিকিৎসক আরাফাত

গুপ্তঘরে বন্দি দুই দিনের রিমান্ডে প্রধান আসামী গ্রাম্য চিকিৎসক আরাফাত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে গুপ্তঘরে আব্দুল জুব্বার (৭৫) নামে এক বৃদ্ধকে পাঁচ মাস ২৫ দিন বন্দি রাখার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রাম্য চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম আরাফাতের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।  রোববার (৪মে) বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ (রায়গঞ্জ আমলি আদালত) আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিরাজগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক মো. আসলাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নাজমুল ইসলাম আরাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক দ’ুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তার বিরুদ্ধে অপর একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করা হয়েছে। আরাফাত সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লক্ষীকোলা গ্রামের মৃত রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে।
এর আগে শুক্রবার (২মে) ভোরে রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সোনারাম গ্রামে দিনমজুর জহুরুল ইসলামের বাড়িতে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে গোপন ঘর থেকে মাটি খুঁড়ে সুরঙ্গ পথ তৈরি করে বেরিয়ে আসেন শিল্পী ও জুব্বার নামে এক নারী ও পুরুষ। খবরটা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা জহুরুলের বাড়িঘর এবং গুপ্তঘরটি ভাঙচুর  করে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। একই দিনে পশ্চিম লক্ষীকোলা গ্রামে নাজমুল ইসলাম আরাফাতের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সেদিন পশ্চিম লক্ষীকোলা গ্রামের আরাফাতের সেচ পাম্প ঘরে আরও একটি গুপ্তঘরের সন্ধান পায় স্থানীয়রা।  ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন ও আব্দুল জুব্বার বলেন, ছয় মাস আগে তাদের কৌশলে তুলে নিয়ে যায় আরাফাত। এরপর হাত-পা বেঁধে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে পাঁচ মাস ২৫ দিন আগে জুব্বারকে এবং চার মাস আগে শিল্পী খাতুনকে গোপন ঘরটিতে বন্দী করে রাখে। আরাফাত তাদের মেরে কিডনিসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির কথাও বলেছিল। গোপন ঘরে তাদের দিনে একবার খেতে দেওয়া হতো। গোসলেরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। প্রায় ছয় মাস পর মুক্তি পেয়ে তারা গোসল দিয়েছেন। অন্ধকার কক্ষে ছিল না আলোর ব্যবস্থা। আরাফাতের রেখে যাওয়া একটি কেচি দিয়ে পাঁচদিন ধরে মাটি খুঁড়ে সুরঙ্গ পথ তৈরি করে বেরিয়ে আসেন তারা।  স্থানীয়রা বলেন, আরাফাত কখনো সাংবাদিকতা, কখনো সমন্বয়কের পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান। তিনি গ্রাম্য চিকিৎসক হলেও তার কোনো সার্টিফিকেট নেই। ভাই নাঈম আহমেদ বাধন সাভারে এনাম মেডিকেলের ডাক্তার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তৎকালীন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামের দাপট দেখিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলাবাজি, চুরি, ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও গুপ্তঘরে মানুষকে আটকে রেখে তাদের সঙ্গে কি করা হতো সে বিষয়টি সবারই অজানা ছিল।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, শিল্পী খাতুনের স্বামী মনসুর আলী ও আব্দুল জুব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আরাফাতকে প্রধান আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি আরাফাতকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।  তিনি বলেন, দুটি গ্রামে আন্ডারগ্রাউন্ড কক্ষ পাওয়া গেছে। প্রতিটি কক্ষ মাত্র ৪ ফুট উঁচু দৈর্ঘ্য ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট।

১৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS