শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পদ্মা সেতুর সুফলবঞ্চিত দক্ষিনের পটুয়াখালীর তিনটি উপজেলা

পদ্মা সেতুর সুফলবঞ্চিত দক্ষিনের পটুয়াখালীর তিনটি উপজেলা

সঞ্জয় ব্যানার্জী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি : স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুরে ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো ফেরিমুক্ত হলেও রাজধানী ঢাকাসহ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক পথে যাতায়াতে ফেরি দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনি পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার প্রায় ১৬লক্ষ মানুষের।

জানা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক পথে ওই তিন উপজেলা থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম যেতে জেলার বাউফল ও দুমকি উপজেলার সীমানা নির্দেশকারী মধ্যবর্তী লোহালিয়া নদীর বগা-চরগরবদী পয়েন্টে সেতু না থাকায় যানবাহন পার হচ্ছে ফেরিতে। ফলে জেলার ওই তিন উপজেলার মানুষ এখনও পুরোপুরি পদ্মা সেতুর সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ওই তিন উপজেলার প্রবেশদ্বার বগা-চরগরবদী ঘাটে ফেরির স্বল্পতা থাকায় প্রায়শই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে নদী পারাপার হতে হয়। অনেক সময় ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দিলে বা জোয়ারের কারণে ফেরি ঘাটের পল্টুনের গ্যাংওয়ে ও অ্যাপ্রোচ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেলে যানবাহনগুলোর পারাপারে তিন-চার ঘন্টাও লেগে যায়। তাতে দূরপাল্লার যাত্রীরা বাধ্য হয়ে গাড়িতে অপেক্ষা করলেও জেলা ও বিভাগীয় শহরের সঙ্গে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বাধ্য হয়েই গাড়ি থেকে নেমে সঙ্গে থাকা মালামাল হাতে বা মাথায় নিয়ে ঝুঁঁকিপূর্ণ ভাবে খেয়া পার হয়ে বাড়তি ব্যয়ে বিকল্প ভাবে গন্তব্যে যাত্রা করে। এতে বিশেষ করে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ ও রোগীদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। এছাড়াও রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরী সরকারি ও বেসরকারি যানবাহনগুলো পরে নানা বিপাকে।

সড়কপথে ঢাকা থেকে দশমিনাগামী যাত্রী মো. শ্যমল চন্দ্র বলেন, ‘রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে বগা ফেরি ঘাট পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার পথ আসতে সময় লেগেছে পৌণে চার ঘন্টা। অথচ ওই ফেরি ঘাটে দেরী হওয়ার কারণে বগা থেকে দশমিনা পর্যন্ত মাত্র ২৮ কিলোমিটার পথ আসতে সময় লেগেছে আড়াই ঘন্টা।’

দশমিনা বেসকারি এ্যাম্বুলেন্স চালত মো. মিরাজ হোসেন বলেন,’ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চার ঘন্টায় বগা ঘাটে এসে প্রায় দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ফেরি পারাপারের জন্য। বগা সেতু নির্মিত হলে আমাদের আর কোন ভোগান্তি থাকবে না রোগী নিয়ে যেতে ও আসতে।’

দশমিনা মিতালী মৎস্য আড়তের স্বত্ত¡াধিকারী রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, ‘বগা পয়েন্টে সেতু না থাকায় রাজধানীতে আমাদের মাছ পাঠাতে অতিরিক্ত দেড়-দুই ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। ওখানে সেতু নির্মাণ হলে আমরা চার ঘন্টায় এ অঞ্চলের তাজা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারবো।’

গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর দশমিনা, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলায় পদ্মা সেতুর পরিপূর্ণ সুফল পেতে বগা সেতু নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।’

দশমিনা সরকারি আবদুর রশিদ তালুকদার কলেজের প্রভাষক আকন্দ এমবিএ বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় এ অঞ্চলের উন্নয়নের দ্বার উম্মোচন হয়েছে। এখন বগা সেতু নির্মাণ হলে এই তিন উপজেলা উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হবে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এই তিন উপজেলার শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাশ করতে পারবে। বগা সেতু নির্মাণ এখন এই তিন উপজেলার প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবি।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘বগা সেতু নির্মাণ সংক্রান্তে ২০২০ সালের দিকে একটি টিম ভিজিট করতে আসার কথা ছিল। করোনা মহামারীর কারণে আসতে পারেনি। এই সেতু নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কিত ঢাকার সড়ক ভবন তথ্য দিতে পারবে।’

২২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS