শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে ক্যান্সার রোগীর চেক বাড়িতে পৌঁছে দিলেন সমাজ সেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম ।

ডোমারে ক্যান্সার রোগীর চেক বাড়িতে পৌঁছে দিলেন সমাজ সেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম ।

রবিউল  হক  রতন , ডোমার( নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য বরাদ্দকৃত পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক রোগীর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম মধু।
সোমবার ৬জুন দুপুরে উপজেলার ১ নং ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নে ৮ নং ওয়ার্ড উত্তর চিলাহাটি সরকার পাড়া যা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন এলাকার শাহের আলীর স্ত্রী আয়েশা বেগম (৪৭)। আয়েশা বেগম দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন, তার স্বামী ও পরিবার মিলে তার চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছিলেন। ইতিমধ্যে ২০২১ সালের শেষের দিকে তিনি ডোমার উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে চিকিৎসার সেবার সাহায্যের জন্য একটি আবেদন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১মে নীলফামারী জেলার সমাজসেবা কার্যালয় হইতে উপজেলার দশটি ইউনিয়নে মধ্যে ২৪ জন আবেদন কারির নামে ৬টি রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারি ভাবে সাহায্যের অনুমোদন হয়ে আসে। ৬টি রোগের মধ্যে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্টক প্যারালাইষ্ট, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসিমিয়া। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রমিজ আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ২১টি বিভিন্ন রোগের উপর সরকারি সাহায্যের অর্থ পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক ২১ জন রোগীর মাঝে বিতরণ করেন। এবং এই সরকারি বরাদ্দ অনুমোদিত হয়ে আসার আগেই ২জন ক্যান্সার রোগী ইতিমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। এরা হলেন, ডোমার পৌরসভা এলাকার চিকনমাটি মৃত আজিজার রহমানের পুত্র জনি, অপরজন হলেন উপজেলার ৭নং বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বাগডোকরা এলাকার মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে সফিয়ার রহমান। অপরদিকে ১নং ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের ক্যান্সার রোগী আয়েশা বেগমের কাগজে উল্লেখিত মোবাইল নম্বর সঠিক না থাকায় সোমবার দুপুরে সরকারি বরাদ্দকৃত ক্যান্সার রোগীর পঞ্চাশ টাকার চেক নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম নিজেই বেড়িয়ে পড়েন আয়েশা বেগমের খোঁজে। এরপর তিনি ১নং ভোগডাবুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালুকে সাথে নিয়ে উল্লেখিত আয়েশা বেগমের বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে তার সাথে দেখা করে অত্র ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভুক্তভোগীর হাতে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা বাবদ সরকারি সাহায্যের পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
এসময় ক্যান্সারে আক্রান্ত আয়েশা বেগমের পরিবারের লোকজন তার এই অন্তিম মূহুর্তে চেকটি পেয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন এই মূহুর্তে তাকে আরেকটি থ্যারাপী দেওয়ার সময় হয়েছে, আমরা ভিষণ চিন্তিত হয়ে পরেছি, আয়েশার থ্যারাপি দেওয়ার টাকার জোগাড় নিয়ে, এযাবত ৫টা থ্যারাপি দেয়া হয়েছে এবং এক একটা থ্যারাপি দিতে খরচ হয় ৩৭ হাজার টাকা। ডাঃ বলেছে আরও ২/৩ টা থ্যারাপি দিতে হতে পারে। টাকার চিন্তায় আমরা ব্যকুল হয়ে পরেছি।আমরা তো জানি না যে আয়েশার চিকিৎসার জন্য সরকারি ভাবে সাহায্যে বরাদ্দ হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নিজের তাগিদে আয়শার ঠিকানা খুঁজে বের করে এমন মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, আমরা পরিবারের লোকজন খোদার কাছে দোয়া করি, স্যারের এই মহানুভবতার জন্য বিধাতা যেন স্যারকে উপযুক্ত পুরস্কার দান করেন। ওনার সহযোগিতায় আল্লাহর রহমতে পরবর্তী থ্যারাপির টাকার যোগান নিশ্চিত হয়েছে।  ২/৩ দিনের মধ্যেই আমরা আয়েশার থ্যারাপির ডোজ সম্পন্ন করতে পারবো।
সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে অসহায় দরিদ্র মেহনতি মানুষদের সাথে কথা বললে বিভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ডোমার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম ডোমার উপজেলায় যোগদানের পর থেকে দশটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় সততা দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে তার কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগেও আমরা অনেক অফিসার দেখেছি সবগুলোর চেয়ে ইনি মহান আদর্শিক গুনাবলি এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী। বিভিন্ন সময়ে আমরা তাকে এতো চেষ্টা করেও এককাপ চা পর্যন্ত খাওয়াইতে পারিনি। অথচ এর আগে অনেক অফিসার ছিলেন তারা তো  সরাসরি লেনদেনের বিষয়ে বলে ফেলতেন।
এবিষয়ে ১নং ভোগডাবুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালু বলেন, বর্তমান সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম একজন ভালো মনের মানুষ। আমি যতদিন থেকে জানি তিনি একজন হৃদয়বান মহৎপ্রাণ এবং ন্যায়, সততা এবং নিষ্ঠার সাথে ডোমার উপজেলার অসহায় মানুষের জন্য সঠিক সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে কোন সমাজসেবা অফিসার এরকম রোগীর চেক নিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেননি। ওনি আজকে আমাকে সাথে নিয়ে নিজের তাগিদে উল্লেখিত আয়েশা বেগমের বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে তার ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তার এমন মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ। আমি তার কর্মময় জীবনের সাফল্য কামনা করছি।
২৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS