শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে দপ্তরী কর্তৃক স্কুলে ছাত্রীকে  শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ  উঠেছে ।

ডোমারে দপ্তরী কর্তৃক স্কুলে ছাত্রীকে  শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ  উঠেছে ।

রবিউল  হক  রতন  ,ডোমার (নীলফামারী ) প্রতিনিধিঃ  নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ১নং ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের একরামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী এক সন্তানের জনক মেরাজুল ইসলাম (৩৫) কর্তৃক একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং নির্যাতিত বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তারা জানায়, মেরাজুল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের সাথে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা এবং অশোভন আচরণ করে আসছিল। গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা করে এ সময় বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি দেখে ফেলে। উক্ত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মেরাজুল শিক্ষার্থীদের বলে এই ঘটনা যদি তারা কাউকে জানায় তাহলে তাদের সাথেও এরকম করবে বলে সে হুমকি প্রদান করে। এভাবে বিষয়টি ধামাচাপার মধ্যে চলতে থাকে।  গত এক সপ্তাহ পর ঘটনাটি উক্ত শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। এবং এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মুসা ইসলাম, তরিকুল, নাজমুল,শেফালি বেগম,ফারুক,রাব্বি ইসলাম,আবু সাঈদ,এবং আজাদের সাথে কথা বললে তারা জানায় যে, আমরা কয়েকজন মিলে বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীনকে অবগত করলে তিনি বলেন আপনাদের সন্তানদের সাথে তো এরকম কোন কিছু হয়নি আপনারা কেন আসছেন? আমাকে কেউ এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ জানায়নি, যদি অভিযোগ জানায় তাহলে দপ্তরীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।”প্রধান শিক্ষকের এমন কথার প্রেক্ষিতে এলাকার আরও কিছু অভিভাবক এসে সেখানে মিলিত  হয় এবং তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন শিক্ষার্থীর এ বিষয়টি বাড়িতে না জানানোর জন্য শিক্ষর্থীদের ভয়ভীতি দেখান এবং তাদের উপবৃত্তি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, এর আগেও বিদ্যালয়ে ২/৩ বার দপ্তরী মেরাজুল এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা দিনমজুর মানুষ আমরা সারাদিন কাজকর্ম না করে কি বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে পাহারা দিব? কাজকর্ম ছেড়ে যদি বাচ্চাদের পিছনে পাহারা দিয়ে হয় তাহলে আমরা খাব কি,আর আমাদের সংসার চলবে কেমন করে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তারা আরও বলেন, স্কুলে শিক্ষকরা থাকা অবস্থায় কিভাবে মেরাজুল এমন ন্যক্কর জনক ঘটনা ঘটায়? আমরা তাহলে কার ভরসায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব? আমরা তো হাজিরা করে খাই, তাহলে কি আমরা স্কুলে বাচ্চা পাঠিয়ে পাহারা দিব?”
নির্যাতিতা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিশুটির চাচা এসে বাচ্চাটিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়।
এ ঘটনার বিষয়ে গত সোমবার ৩০ মে দুপুর দেড়টায় স্কুলে গেলে দপ্তরী কাম নৈশ্যপ্রহরী মেরাজুলকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্যে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষকা জানান, স্কুল থেকে মেরাজুলকে ছুটি দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে একরামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি।পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিজ বাসায় দেখা করতে বলেন। বাসায় কথা হলে তার বক্তব্য রেকর্ড না করার শর্তে তিনি জানান, মেরাজুল ৮ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে চাকরি করছে এতদিন আমাদের চোখে তার এমন কোন খারাপ আচরণ চোখে পড়েনি, এমনকি এতদিনেও কোন অভিভাবক এসে আমাকে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জানায়নি।গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবার কিছু অভিভাবক এসে মেরাজুলের বিষয়টি অবগত করেন।এবং আমার স্কুলের সহ-সভাপতি হারুন আরেক ম্যাডামকে বিষয়টি জানালে তার কাছ থেকে আমি জানতে পারি। পরে আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতিকে অবগত করি এবং সভাপতি এবং এক ম্যাডামকে নিয়ে নির্যাতিতার বাসায় গিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারি। সেখান থেকে ফিরে এসে আমি মেরাজুলের সাথে কথা বললে সে সবকিছু স্বীকার করে। এরপর আমি সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার এর সাথে কথা বলে বিষয়টি অবগত করে আগামী ৩১ মে মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে মিটিংয়ের আহবান করি।
দুপুর ২টায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সহ-সভাপতি হারুন, প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীনসহ স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সাদেকুর রহমান, গোলাপ এবং নির্যাতিতা শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুলের শিক্ষিকাবৃন্দ ও অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ্যপ্রহরী মেরাজুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেরাজুলের অনুপস্থিতিতেই তাকে৭দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রধান শিক্ষক আরও জানান, আমরা তাকে সাত দিনের সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাতদিনের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাব তারপর যা ব্যবস্থা নেয়ার অফিস নেবে।
এ বিষয়টির ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,“ বিষয়টি আমি শুনেছি কিন্তু কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি, লিখিত   অভিযোগ পেলে দপ্তরী কাম নৈশ্য প্রহরী মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩৯ বার ভিউ হয়েছে
0Shares