শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এমপি আজীমের খুনি আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে

এমপি আজীমের খুনি আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে

ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন। ঘটনার দিন তিনি ভারতেই ছিলেন। এরপর পরই তিনি দেশে ফেরেন এবং নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তিনি কোন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে তিনি নিউ ইয়র্কেই থাকেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমপি আজীম যে বাসায় খুন হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে ওই বাসাটি আকতারুজ্জামানই ভাড়া নিয়েছিলেন। আজীম ভারতে অবস্থানকালে আকতারুজ্জামানও সেখানে ছিলেন। যে ফ্ল্যাটে আজীম খুন হন বলে ধারণা করা হচ্ছে সেই ফ্ল্যাটে আকতারুজ্জামানও ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী আকতারুজ্জামান ঝিনাইদহের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। আজীম খুনের পর তিনি নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গত ২০শে মে ভিসতারা এয়ারে দিল্লি থেকে আকতারুজ্জামান নেপালের কাঠমান্ডু চলে যান। পরের দিন ফ্লাই দুবাইয়ে করে তিনি দুবাই চলে যান। তার পরবর্তী গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র বলে জানা গেছে।
ওদিকে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি’র প্রধান জানিয়েছেন, পূর্ব কলকাতার নিউ টাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরের কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার রায়ের। সন্দ্বীপের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আকতারুজ্জামান। আকতারুজ্জামানই ওই ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীম আনারের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সব খুনিরা একই সময়ে ভারতে গেলেও তারা একসঙ্গে যাননি। কিলিং মিশনের প্রধান মোকাররম এমপি আজীমের পরিচিত। ভারতে যাওয়ার পর তারা একসঙ্গে হন। হত্যাকাণ্ডের সময় সঞ্জিবা অ্যাপার্টমেন্টের ঐ ফ্ল্যাটে ছয় জন ছিলেন। এর মধ্যে তিন জন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হয়েছে। মোকাররম, সিনথিয়া ও মারুফ নামে তিন জনকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। এর মধ্যে মোকাররম পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। আনোয়ারুল আজিম আনারের অন্য কলকাতায় উক্ত ফ্লাটটি ভাড়া করেছিলেন আক্তারুজ্জামান নামের একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি। তিনি কোন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, ‘বুধবার সকালেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তিনি খুন হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ আটককৃতরা কি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে? জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, অনেক তথ্যই জানা গেছে। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
গত ১২ মে ভারতে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আজিম তার পূর্বপরিচিত বন্ধুসম্পর্কীয় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন ১৩ মে বেলা ২টার দিকে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বের হন। এর মধ্যে আজিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন সিনথিয়া ও মোকাররম। তাদের সঙ্গেই তিনি সঞ্জিবা অ্যাপার্টমেন্টের ঐ ফ্ল্যাটে যান। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, আজিমের সঙ্গে তিন জন ভেতরে যাচ্ছেন। এদের এক জন নারী। অন্য দুই জন পুরুষ। ধারণা করা হচ্ছে, এই তিন জন হলেন মোকাররম, সিনথিয়া ও মারুফ। তবে খুনের সময় ছিলেন ছয় জন। অন্য তিন জনের ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত জানতে পারেনি পুলিশ। এদের দুই জন ভারতীয় নাগরিক বলে পুলিশের ধারণা।
ঐ ফ্ল্যাটে আজিমকে হত্যার পর লাশ তিন টুকরো করা হয়। তিনটি ব্যাগে ভরে তিন জনকে ব্যাগগুলো ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাগগুলো তারা কোথায় ফেলেছে, সে ব্যাপারে মোকাররম কিছু বলতে পারেনি। সিসিটিভির ফুটেজ বলছে, ১৩ মে তারা ফ্ল্যাটে ঢুকলেও ঐ দিন কেউ বের হননি। পরে এক জন ১৫ মে, এক জন ১৬ মে, এক জন ১৭ মে বের হন। কিন্তু আজিমকে আর বের হতে দেখা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ঐ ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ পেলেও ফ্ল্যাটের মধ্যে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন লাশের সন্ধানে অভিযান চলছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, মোকাররম দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বড় স্বর্ণ চোরাকারবারি। মারুফ এক সময় ভারতের বাসিন্দা ছিলেন। পরে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায় মাইগ্রেট হয়ে চলে আসেন। তিনি স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িত। এরা দুই জনই আজিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
শাহীনের সঙ্গে আজিমের কেন বিরোধ: মোকাররম গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন, শাহীনের সঙ্গে আজিমের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজিমের চিনির ব্যবসা আছে। এছাড়াও তারা দুই জন আরও কিছু ব্যবসায় জড়িত। সেই ব্যবসার ৪ কোটি টাকা আজিম পাবেন শাহীনের কাছে। কেউ বলছেন, এটা হুন্ডির টাকা, আবার কেউ বলছেন, এটা স্বর্ণ চোরাকারবারির টাকা। মোকাররমও নিশ্চিত নন, এই টাকা আসলে কীসের। তবে ৪ কোটি টাকা বিরোধের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শাহীন টাকা দিচ্ছেন না। নির্বাচনের আগে গত অক্টোবরে এ নিয়ে মীমাংসা বৈঠক হয়। বৈঠকে মীমাংসাও হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের দ্বন্দ্ব থেকে যায়। কয়েক দিন আগে একে অপরকে হুমকি দিয়েছে। সেখানে শাহীন বলেছে, ‘আমি টাকা দেব না’, আর আজিম বলেছে, ‘কীভাবে টাকা আদায় করতে হয় আমি জানি।’ এরপর বিরোধ আরো বাড়ে।
এরপর শাহীন এমপি আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার এই পরিকল্পনায় যোগ দেন মোকাররম ও মারুফ। সিনথিয়াকে ব্যবহার করে কিলিং মিশন সম্পন্ন করেন তারা। হত্যাকাণ্ডের সময় শাহীনও ভারতে ছিলেন। দুই দিন পরই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর এক দিন পরই দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
৩৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares