মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পঞ্চগড়ে ভুয়া কাবিননামা দেখিয়ে দেনমোহরের টাকা আদায়ের চেষ্টা : আদালতে মামলা

পঞ্চগড়ে ভুয়া কাবিননামা দেখিয়ে দেনমোহরের টাকা আদায়ের চেষ্টা : আদালতে মামলা

পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ প্রধানাবাদ এলাকায় বিয়ের দিন ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০৫ টাকার কাবিন নামার তথ্য গোপন করে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০১ টাকার ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে সে টাকা হাতিয়ে নিতে হমকি দিচ্ছেন মেয়ের বাবা। নিরুপায় হয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আদালতে মামলা করেন ছেলে মেহেদী হাসান।
পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর সদর উপজেলার পলাশবাড়ী তরনীবাড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে নারজুনা আক্তারের সাথে বিয়ে হয় দেবীগঞ্জ উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ প্রধানাবাদ এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসানের ।
ঘটনার তথ্য জানা যায়, আদালতে দাখিল করা মামলার কাগজপত্র দেখার পরে। বিয়ের কাবিন নামা অনুয়ায়ী ২০২১ সালের ১৮ জুনে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়।
বিয়ের দিন এ/২০ নং ভলুমের ৫৪ নন্বর পৃষ্ঠায় ২০২১ সালের ১৮ জুলাই ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০৫ টাকার কাবিন নামা করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। সেখানে নগদ পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৩৯ হাজার ৫শ টাকা। কাবিননামায় স্বাক্ষী লেখা রয়েছে ছেলে পক্ষের হায়দার আলী, আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম। মেয়ে পক্ষের স্বাক্ষী লেখা রয়েছে নূর আমিন। ৮ নং ক্রমিকের ২ নং কলামে কোন স্বাক্ষী লেখা হয়নি।
অথচ একই তারিখে তথ্য গোপন করে এ/১৮ নং ভলুমের ৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫শ টাকার ভুয়া কাবিননামা তৈরি করা হয়। সেখানে নগদ পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৩৩ হাজার ৫শ টাকা।
১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০৫ টাকার কাবিননামায় আঃ রহিম ও ছেলের বাবার নাম সফিকুল ইসলাম ও আইজুল হকের নাম লেখা না থাকলেও ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০১ টাকার কাবিননামায় তার নাম লেখা রয়েছে। স্বাক্ষীদের নাম ক্রমিকের নম্বরেও গরমিল রয়েছে।
ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, ২০২৩ সালের পহেলা জুলাই দেবীগঞ্জ চৌরাস্তা মোড়ে আমার স্ত্রী নারজুনা আক্তার ও আমার শ্বশুর শহিদুল ইসলামের সাথে দেখা হয। তখন আমার শ্বশুর আমার হাতে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০১ টাকা লেখা ভূয়া কাবিননামার কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন কাজিকে ম্যানেজ করে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০১ টাকা কাবিননামা তৈরি করেছি। এ টাকা তোমাদের দিতে হবে। না হলে মিথ্যা নারী ও শিশু, যৌতুকের মামলা করবো। মেহেদী হাসান আরও বলেন, কাজি টাকার বিনিময়ে কাবিননামায় দেনমোহর বেশি করেছে সেটা আমার কাছে স্বীকারও করেছেন।
জালিয়াতির মাধ্যমে যাতে দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে এবং ন্যায্য বিচারের জন্য আদালতে মামলাও করেন মেহেদী হাসান। বর্তমানে সে মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
ছেলের বাবা সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। মেয়ের বাবা ভূয়া কাবিননামা তৈরি করে সেখানে বেশি করে দেনমোহরের টাকা লিখে আমার ছেলে ও আমার কাছ থেকে আদায় করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আমার ছেলে আদালতে মামলা দায়ের করেছে, সে মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। টাকা না দিলে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করবে বলে হুমকি দিচ্ছেন।
মেয়ের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের সময় দেনমোহর করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০১ টাকা। তারা দেনমোহরের টাকা কম দেয়ার জন্য অন্য জায়গা হতে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০৫ টাকার ভুয়া কাবিননামা তৈরি করেছে। সেটি আদালত খারিজ করে দিয়েছেন।
নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুল মালেক বলেন, আমি বিয়েটি রেজিস্ট্রেশন করেছি। সেখানে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫শ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছে। ছেলের অভিভাবকরা মামলা হতে বাচার জন্য এবং দেনমোহর কম দেয়ার জন্য তারা ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে। সেখানে তারা দেনমোহর দেখিয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০৫ টাকা। এটা প্রমান হয়েছে যে তারা ভুয়া কাবিননামা তৈরি করেছে।
এবিষয়ে নীলফামারী জেলা রেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এক নিকাহ রেজিস্ট্রার যদি বিয়ের নকল ২টি দিয়ে থাকে এবং দেনমোহর কমবেশি করে থাকে সে ব্যাপারে যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে তাহলে তদন্ত করে দেখবো।

২৩৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares