শনিবার- ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন অসহায় চাষীরা সিন্ডিকেটের হাতে বাজার

ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন অসহায় চাষীরা সিন্ডিকেটের হাতে বাজার

ভোলা প্রতিনিধিঃ মিঠা পানি আর পলিমাটির অঞ্চল ভোলা জেলার উপকূলীয় এলাকায় শুস্ক মৌসুমে হাজার, হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয় রসালো ফল তরমুজ। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে তরমুজের। আর এই তরমুজ সড়ক ও নৌ-পথে রপ্তানী করা হচ্ছে বোলা সদর, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাম্পার ফলনেও চাষীরা রয়েছেন অসহায়। ক্ষেত থেকেও পাকা তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেক চাষী পুরো ক্ষেত অধিক মুনাফায় আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাষীদের মূলধনসহ অধিক মুনাফা উঠে আসবে বলে মনে করেন চাষীরা। তবে জেলার একাধীক চাষী বলেন, গতবছরে তরমুজ হারিয়ে ঋনগ্রস্ত হলেও এবার তা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। এবছর ঋণ নিয়ে তরমুজ আবাদ করলেও প্রথম ক্ষেত থেকেই তরমুজের পাইকাররা নগদ টাকায় ক্রয় করেছেন। তবে দ্বিতিয় কর্তনে মূলধনসহ লাভবান হবেন বলে আশা করছেন এসব তরমুজ চাষীরা। তাবে তা আর হয়ে উঠেনি বলে জানান চাষী মোঃ খোকন।
আগাম তরমুজে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ভোলার আড়ৎদার ও পাইকাররা দালালদের মাধ্যমে চাষীদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। তাদের তরমুজ আড়তে উঠিয়ে কমদামে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে,বিক্রিত টাকা থেকেও শতকরা ১০ টাকা হারে আড়ৎদারী রাখার অভিযোগ করেন চাষীরা। যেখানে অন্য আড়তে আড়ৎদারী রাখা হয় শতকরা ৬ টাকা। বর্তমানে বাজার রয়েছে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বেশী মুনাফার আশায় ২০০ টাকা দরে পিজ তরমুজ ক্রয় করে ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় উপরে বিক্রি করছেন। শহরের প্রতিটি ব্যবসায়ীদের দোকানে একই অবস্থা। অনেক ব্যবসায়ীরা বেশী লাভের আশায় অনেক তরমুজ বাড়ি ও গুদামে মৌজুত করারও অভিযোগ রয়েছে। ওই তরমুজ ১৫-২০ দিন পর্যন্ত মাটির ঘরে মৌজুদ করে রাখা যায় বলে চাষীরা জানান। আর এটাকেই কাজে লাগান সিন্ডিকেট ও মৌজুদদারেরা। ভোলা খাল পাড়ের বাদশা বানিজ্যলয়ের ব্যবসায়ী মাকিং করে ১৫০ টাকা দারে তরমুজ বিক্রির কথা বললেও মুলত ওই তরমুজ গুলো সবই পচা বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। আর ভাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার নিচে কোন তরমুজ নাই বলে জানান তারা।
সোমবার (১এপ্রিল) সরে-জমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদরের ভেলুমিয়া, মাঝেরচর, দৌলতখানের মাঝেরচর, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশনের-মুজিবনগর, নজরুলনগর, কলমী, নীলকমল, নুরাবাদ, আহমদপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ এ তরমুজের ক্ষেতে চাষীরাও রয়েছেন কর্মব্যস্ততায়। তরমুজ চাষী খোকন বলেন, আমি এবার ৩ কানি জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি, খরচ হয়েছে-প্রায় ৪ লাখ টাকা, ইতিমধ্যে জমির অর্ধেক ফলন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বাকী অর্ধেক ওই টাকায় বিক্রি করতে পারবোনা। কারন আড়ৎদার খাল পাড়ের কামরুল ইসলাম দালালের মাধ্যমে আমাদের তরমুজ ভাল দামে বিক্রি করে দিবে বলে ভোলার মনতাজ হাজির খলিয়ানে উঠিয়ে আমাদেরকে ২ দিন ঘুরিয়ে-২২ হাজার টাকার শত তরমুজের দাম দিয়েছে-১৬, ২০-হাজারের টা-১৩, ১৬-হাজারের টা-৭ হাজার টাকা দাম দিয়েছে। গাড়ি ভাড়া কেটেছেন-৮ হাজার ৫০০ টাকা। তাদের সাথে আমরা পেরে উঠিনি। াামাদের টাকা আড়তদার ও দালালেরা ভাগ করে খায়। ভোলায় আর জীনেও তরমুজ বিক্রি করতে আনবোনা। অনে টাকা লোকশানে পরে গেলাম। আগাম তরমুজ চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে হাট বাজার গুলোতে। ফলে সাধারণ ক্রেতারাও সাধ্য মত তরমুজ কিনতে পারছেননা। বাজার অনুযায়ী-১৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা খুচরা মূল্যে ক্রয় করছেন পিপাসা মেটানো রসালো এ তরমুজ। রমজান উপলক্ষে এসব তরমুজের দাম বেশী বলে ক্রেতা মনির, সামাদ, সমশের জানিয়েছেন। আড়তদার কামরুল ইসলাম বলেন, রোজার প্রথমে তরমুজের বাজার ভাল ছিল, মাঝ সময়ে দাম অনেক কমে গেছে, এখন আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে চাষীদের অনেক লাভ হয়েছে। চাষীদের দাম কম দেয়া ও শতকরা ১০ টাকা আড়ৎদারী রাখার বিষয়ে তিন মুখ খুলেননি। বাজারে ভোক্তা অধিকারের কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। তরমুজ চাষীরা যেন বিপাকে না পড়ে এজন্য মাঠ পর্যায়ে আমাদের উপ-সহকারীরা সাবক্ষনিক মাঠ পরিদর্শন ও চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

৪৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares