শনিবার- ১লা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘আসামিরা দাপটে ঘুরে বেড়ায়, স্বামী আমার লজ্জায় দেশে আসে না’

‘আসামিরা দাপটে ঘুরে বেড়ায়, স্বামী আমার লজ্জায় দেশে আসে না’

নাটোর প্রতিনিধি   ‘কৌশলে ঘরের দরজা খুলে, আমার গলায় ছুরি ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে ওরা। মামলা করেছি ২ মাস হয়ে গেলেও পুলিশ আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রেপ্তার হয়না। দাপটে এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এ লজ্জায় স্বামী আমার দেশে আসেনা। দুটা বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি।’
শনিবার (১৭ফেব্রুয়ারি) নাটোর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা গুলো বলছিলেন গত ১৮ ডিসেম্বর তারিখে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামের গনধর্ষণের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী ।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, একজন নারীর জন্য তাঁর মান-সম্মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্মান না থাকলে তাঁর বেঁচে থাকা মূল্যহীন হয়ে যায়। আমার মত একজন বিবাহিত নারীর জন্য এই বিষয়টা আরও দুঃখজনক। আমি সর্বস্ব হারিয়ে আজ অসহায়। এ মুহুর্তে শুধু বেঁচে আছি, আমার উপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের উপযুক্ত বিচারের আশায়। তা না পেলে আমার বেঁচে থাকার অর্থ থাকবে না।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী জানান, তার স্বামী জীবিকার প্রয়োজনে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছে। তিনি (প্রবাসীর স্ত্রী) গত ১৮ ডিসেম্বর রাত ১১টার সময় নিজ বাড়িতে শয়নকক্ষের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় একই গ্রামের তুহিন আলী (২২), ওসমান আলী (৪৫), জীবন (২৪) ও শুভ প্রামাণিক কৌশলে দরজা খুলে তার ঘরে ঢুকে। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে মুখ চেপে ঘর থেকে বের করে অন্য আসামিদের সহযোগীতায় আসামি তুহিন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এঘটনায় পরদিন ১৯ ডিসেম্বর তারিখে আসামিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী তিনি (প্রবাসীর স্ত্রী) নিজে বাদি হয়ে নলডাঙ্গা থানায় মামলা করেন।
প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, আমার মামলা করার দুই মাস অতিবাহিত হচ্ছে অথচ পুলিশসহ আইন শৃংক্ষলা রক্ষাকারি বাহীনির সদস্যরা আমার মামলার আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করেননি। তারা নিজেরাও আদালতে আত্মসমর্পণ করেনি। এই সুযোগে আসামিরা সংশ্লিষ্ট ডাক্তার-পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে মামলাটি তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আসামিরা আমাকেও আমার স্বজনদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
আসামিরা অনেক প্রভাবশালী, তারা টাকা পয়সা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আসামি তুহিন গ্রেপ্তার হলে ডিএনএ টেস্টের মুখোমুখি হবে-এই ভয়ে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেতে যা যা করা দরকার তাই করছে।’ আপনারা জানেন যে, পুলিশ ইচ্ছা করলে যে কোন জঘন্য অপরাধিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পুলিশ না পারলে র‍্যাবকে দায়িত্ব দেয়। তার ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই ভুক্তভোগী।
ভিকটিমের চাচা শশুর আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বাড়িতে গিয়ে গল্প করে চলে যায়, আর আমাদের এসে বলে আসামিদের ধরে দিতে, আমাদের কাজ কি আসামিদের ধরা।’
এবিষয়ে জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলিম সরদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নলডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আসামিরা এমন কৌশল অবলম্বন করেছে যা হয়তো আমাদের আয়ত্বের বাহিরে। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
১৪০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares