শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহীতে নৌপথে নৌযান চলাচলের উদ্বোধন

রাজশাহীতে নৌপথে নৌযান চলাচলের উদ্বোধন

কাজী এনায়েত উল্লাহ, রাজশাহী অফিস:

বহুল কাঙ্খিত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল এবং সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল।

পদ্মা ও মহানন্দা নদীর মোহনায় অবস্থিত গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ অংশ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর এবং ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এদিকে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর ও সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে এক সূধী সমাবেশের আয়োজন করে বিআইডব্লিউটিএ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী -১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্মসচিব সেলিম ফকির।

রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে নৌপথটি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী ও পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত গেছে।

দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, লেখালেখি ও ডিও লেটার দিয়েছি। ফলে এটা গতিশীল হয়েছে।

অবশেষে প্রথম পর্যায়ে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের শুরু হলো। পরবর্তীতে এটি রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত চালু হবে। রাজশাহী নগরীতে নৌবন্দর স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দিত। পিছিয়ে পড়া রাজশাহীতে নৌবন্দর চালু হলো। এটির মাধ্যমে রাজশাহীর ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। আমরা অনেক দিক দিয়ে উপকৃত হবো।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগপর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। পরে রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার বাংলাদেশ সীমান্তের সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনের পরে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদী বন্দরের মর্যাদা পেলো। সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে।

এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।

এর আগে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর।

রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্যতা সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি।

ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া হবে। শুরুতে এই নৌপথে ভারত থেকে পাথর বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী আনা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণের পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি।

সারাবছর সুলতানগঞ্জের এই পয়েন্টে গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত।

ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহী থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান ও মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত নৌরুটে নৌযান চালু ও রাজশাহীতে আন্তজার্তিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠায় গত ৫ বছর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

এটি মেয়র লিটনের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু ও সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচল শুরুর মাধ্যমে মেয়র লিটনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হলো এবং পূরণ হলো রাজশাহীবাসীর বহুল কাঙ্খিত স্বপ্ন।

৫৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS