শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কুড়িগ্রামে জাতীয় পার্টির দুর্গে ধ্বস জামানত হারানোর রেকর্ড

কুড়িগ্রামে জাতীয় পার্টির দুর্গে ধ্বস জামানত হারানোর রেকর্ড

সাইয়েদ বাবু ,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে জামানত হারানোর রেকর্ড হয়েছে। এবারে জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ৩০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এরমধ্যে জামানত হারিয়েছেন মোট ২৩জন। ৪টি আসনে ৪জন বিজয়ী হলেও ৩জন শুধু জামানত হারাননি বাকী সবাই জামানত হারিয়ে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বিরল এক রেকর্ড গড়লেন।

নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি জামানত হারিয়েছেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনে। এই আসনে ১১জন প্রার্থীর মধ্যে ১০জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ।রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামীলীগের তরুণ প্রার্থী অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ বিজয়ী হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে জেলার ৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৭লাখ ৮২হাজার ৩২জন। ভোট পরেছে ৫লাখ ২৯হাজার ৬৮৩ টি। প্রাপ্ত ভোট প্রদানের হার ২৯দশমিক ৭২ভাগ। নির্বাচনে আশানুরুপ ফলাফল করতে পারেনি জাতীয় পার্টির দুর্গ খ্যাত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা। ৪টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনেই জামানত হারিয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীগণ। কুড়িগ্রাম-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক ৪ বারের সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এবার মুখ রক্ষা করেছেন। একমাত্র তিনিই এই আসন থেকে ৮৮হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী গোলাপফুল প্রতীকের আব্দুল হাই মাস্টার ৬১হাজার ১২ ভোট পেয়েছেন। এই আসনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে জয় পাওয়া কঠিন হয়ে যেত এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এমপির। এই আসনটি ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে অপর তিনজন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীক নিয়ে কাজী লতিফুল কবীর পেয়েছেন মাত্র ১হাজার৭৯ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুর মোহাম্মদ আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ১৬৩টি ভোট এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম পাটির মনিরুজ্জামান খান ভাসানী একতারা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১৬৬ ভোট।

জেলার গুরুত্বপূর্ণ কুড়িগ্রাম-২ আসনে নজর ছিল সকলের। এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিলেও পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান। তার সড়ে দাঁড়ানোর ফলে নিশ্চিত ছিলেন লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির এমপি মো. পনির উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু দিন গড়িয়ে যাওয়ার পর বর্ষিয়াণ আওয়ামীলীগ নেতা মো. জাফর আলীকে টপকিয়ে লাঙ্গলের প্রতীক নিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার চিন্তা করলেও বিধি বাম হয়ে দাঁড়ায় তার পক্ষে। এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক চিকিৎসক হামিদুল হক খন্দকার সবাইকে চমকে দিয়ে ১লাখ ১হাজার ৯২৯ ভোট পেয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। লাঙ্গল প্রতীকের সাবেক এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ৪৭হাজার ১০০ ভোট। জেলার ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে এই প্রথম ফুলবাড়ী উপজেলাবাসী নিজেদের এলাকার একজন সাংসদ পেলেন। এই আসনে ৭জন প্রার্থীর মধ্যে অপর ৫জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হোসেন ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩হাজার ৭১৭ ভোট ও আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১হাজার ১৪৯ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির মকবুল হোসেন ডাব প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮৮৯ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুস সালাম আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৬২ ভোট এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬৭টি ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি উলিপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে ৭জন প্রার্থীর মধ্যে ৫জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে (গবা)। তিনি ৫৪হাজার ৪৪৯ ভোট পেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ডা: আক্কাস আলী সরকারকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্কাস আলী পেয়েছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে ৩৪ হাজার ৩০ ভোট। এই আসনে জাতীয় পার্টির তরুন প্রার্থী ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান সম্ভাবনা জাগালেও তাকেও জামানত হারাতে হয়েছে। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭হাজার ২৭৭ ভোট। অপর ৪জন জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অ্যাডভোকেট সাফিউর রহমান নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ২৬০ ভোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান গামছা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২২২ ভোট, তৃণমুল বিএনপির আব্দুল বাতেন সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১২৫ ভোট এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোসাদ্দেকুল আলম আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্রা ৮৭ ভোট।

অপরদিকে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামীলীগের তরুণ প্রার্থী অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮১ হাজার ১৩২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। এই আসনে অপর ১০জন প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৫২ ভোট, জাতীয় পার্টির এ কে এম সাইফুর রহমান পেয়েছেন ১২ হাজার ২৮১ ভোট, অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা: ফারুকুল ইসলাম ঢেকি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭হাজার ৮১৯ ভোট, শহিদুল ইসলাম শালু ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২হাজার ৫৪ ভোট, শাহ মো. নুর-ই-শাহী কলার ছড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৭১ ভোট ও অ্যাডভোকেট মাসুম ইকবাল কাঁচি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১২ ভোট, তণমুল বিএনপির আতিকুর রহমান খান সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৯৬ ভোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মোহাম্মদ আবু শামিম হাবীব গামছা প্রতীখ নিয়ে পেয়েছেন ২০১ ভোট, জাতীয় পাটি, জেপি (মঞ্জু) রুহুল আমিন বাই সাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১১৩ ভোট এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আব্দুল হামিদ ডাব প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭০ ভোট।

এবারে সাড়িবদ্ধভাবে ভোটারদের উপস্থিতি সেভাবে লক্ষ্য করা না গেলেও মানুষ নিজেদের ভোট নিজে দিতে পেরে খুব খুশি। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে পেরে তারা দারুণভাবে ভীষণ উচ্ছ¡সিত। উলিপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা রিফাত জাহান রিতু জানান, ‘আমি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছি। এবার ভোটার হয়েছি। জীবনের প্রথম ভোটটির অনুভ‚তি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি দারুণভাবে উচ্ছসিত

উলিপুর স্বর্ণময়ী স্কুলে ভোট দিতে আসা ৭৬ বছরের বৃদ্ধ অমর আলী জানান, আমি পৌরসভার চোকদার পাড়ায় থাকি। গবাদাকে ভোট দিতে এসেছি। ভালো মানুষ সংসদে যাক এটাই কামনা করছি। উলিপুরের মানুষ আগের এমপিদের প্রতি বিতশ্রদ্ধ। তারা ভোট করে ঢাকায় গিয়ে পরে থাকেন। সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ভোট দিতে এসেছি। এবার আমরা পরিবর্তন চাই।

২১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares