বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মান্দায় সচল অ্যাম্বুলেন্স এবার বন্ধ করে দেওয়া হল অর্থ সংকটে রোগি ও স্বজনদের দুর্ভোগ চরমে

মান্দায় সচল অ্যাম্বুলেন্স এবার বন্ধ করে দেওয়া হল অর্থ সংকটে রোগি ও স্বজনদের দুর্ভোগ চরমে

এম এম হারুন আল রশীদ হীরা; মান্দা (নওগাঁ): মান্দায় সচল অ্যাম্বুলেন্স এবার বন্ধ করে দেওয়া হল অর্থ সংকটে। ১০ লাখ টাকা বকেয়া পড়ায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগি ও তাদের স্বজনরা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দফায় দফায় পত্র দিয়েও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি কোন অর্থ। এ কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়েছে ফিলিং স্টেশনে। বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জ্বালানি সহায়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। উপায়ান্ত না থাকায় বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা কার্যক্রম।

রাজশাহীর নওহাটা এলাকায় অবস্থিত রুচিতা ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাঁকিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছিল মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটিতে। সময় মতো কোন টাকাই পরিশোধ করা হয়নি। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়েছে। বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও বকেয়ার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি সূত্র জানায়, এ উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে মহাসড়ক। রয়েছে কয়েকটি আঞ্চলিক সড়ক। এসব সড়কে প্রায় ঘটে থাকে ছোটবড় নানারকম দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রোগিদের নিতে হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া জরুরিসহ বিভিন্ন ঘটনার রোগিদেরও রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। এ কারণে প্রতিদিন বেশ কয়েক বার রাজশাহী যাতায়াত করে অ্যাম্বুলেন্সটি।

সূত্রটি আরও জানায়, মান্দা উপজেলা সংলগ্ন নিয়ামতপুর ও মহাদেবপুর উপজেলার একাংশের বাসিন্দারাও গুরুতর অসুস্থ রোগিদের এ হাসপাতালের মাধ্যমে রোগিদের রাজশাহীতে নিয়ে থাকেন। এসব কারণে মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবহার নওগাঁর অন্যান্য উপজেলার চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু জ্বালানির জন্য জেলার ছোট উপজেলাগুলোর সাথে একইহারে বরাদ্দ পাওয়া যায়। যা এ উপজেলার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগি আসলাম হোসেন বলেন, অর্থের অভাবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এমন সংবাদ শুনে হতবাক হয়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে জরুরি রোগি পরিবহনে মাইক্রোবাস কিংবা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দ্বারস্থ হতে হবে। এতে করে তাদের খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেক সময় গুনতে হয় আরো বেশি বাড়তি অর্থ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সিদ্দিকা রুমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থ সংকটে জরুরি রোগিদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যাবে না এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এতে মুমূর্ষু ও জরুরি রোগি পরিবহনে চরম বেকাদায় পড়তে হবে রোগির স্বজনদের। সৃষ্টি হবে জনদুর্ভোগের। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানের জোর দাবি করছি।’

রুচিতা ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার পঞ্চম রায় বলেন, মান্দা হাসপাতালের কাছে বর্তমানে ১০ লাখ টাকার ওপরে পাওনা রয়েছে। তাগাদা দেওয়ার পরও তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিজয় কুমার রায় বলেন, জ্বালানি বাবদ বছরে দুইবার যে টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায় তা প্রয়োজনের চেয়ে খুবই অপ্রতুল। এ কারণে বাঁকিতে জ্বালানি কিনে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল রাখা হয়েছিল। কিন্তু বাঁকির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। অধিদপ্তরে বারবার পত্র দেওয়া হলেও কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের কোন বিকল্প উপায় ছিল না। এ জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের আপাতত কিছুই করার নেই।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, অ্যাম্বুলেন্স থেকে আয়ের টাকা ১০দিন পর পর সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। এ কারণে আয়ের টাকা দিয়ে জ্বালানির টাকা সমন্বয় করা যায় না। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ও স্থানীয় প্রশাসনকে মুঠোফোনে অবহিত করা হয়েছে।

১২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS