শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর বাগমারায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শত শত বাঁশ ঝাড়

নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই? কবি যতিন্দ্র মোহ বাগচির, আবেগ ভরা এ কবিতার বাঁশ বাগান, এক সময় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সম্পদ ছিল। চাষ করা হতো ব্যবসায়ীক ভাবে। যা অযত্ন আর অবহেলায় গড়ে উঠত অল্প খরচে। সেই বড় বড় বাঁশ ঝাড় আজ আর নেই। চোখে ভাসছে না গ্রামে গ্রামে যে হারে বাঁশ বাগান দেখা যেত, তা এখন আর দেখা যায়না। এক সময় গ্রামঞ্চলের প্রসুতির নাড়ি কাটার জন্য ব্যবহৃত হত বাঁশের চিকন চাচ যা ধাঁরালো,আর এই বাঁশ ছাড়া মৃত্যুর দাফনও হয় না। সেজন্যই বলা হত জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাছাড়া বাড়ি ঘর নির্মাণ, সবব্জির মাচা তৈরী, বেড়া দেওয়া, চারা গাছের খাঁচা সহ কুটির শিল্পে ব্যবহৃত এই বাঁশ। আগের দিনে বাঁশ বাগান ছিল অহংকারের বিষয়। কোন বংশের লোকের কত বিঘা বাঁশ আছে সেটাই ছিল গর্ভের বিষয়। এখন আর তা খুঁজে পাওয়া যায় না, আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বনজ সম্পদ বাঁশ বাগান। এক সময় এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে বাঁশ কেটে বিক্রি করা হতো হাটে বাজারে। আর বিভিন্ন অঞ্চলের কুটির শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা তা ক্রয় করে নিয়ে যেতো। কুৃটির শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে এই দেশে কাগজ তৈরীতেও ব্যাপক অবদান ছিল। যে বাঁশ বন্যা, বাদলে, গরীবের বাড়ি তৈরীতে ও ধনী-গরীব সকলের মৃত্যুতে প্রধান সহযোগী ছিল। সেই বাঁশ অযত্নে আর অবহেলায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই উপজেলায়। আগের দিনে অনেক পরিবারই ব্যবসায়ীক ভাবে বাঁশ ঝাড়ের খড়কুটা, ছায়, এসকল এনে বাঁশ ঝাড়ের রনাবেনা করতেন । এখন আর সেই পুরনো ঐতিহ্য খুজে পাওয়া যায় না। নেই বাঁশ বাগান বা আর তৈরী হয় না বাঁশের সাঁকো। কুটির শিল্পের সাথে জড়িতরা বাঁশের অভাবে উক্ত পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে। বাঁশ ঝাড়ের এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার আগ্রোহ আর নেই বাগান মালিকদের। বাঁশের বিভিন্ন কাহিনীও রয়েছে, যেমন- বাঁশ দিয়ে তৈরী হতো বাঁশি, আর সেই বাঁশির মাতাল করা সুরে মুগ্ধ হতো ছোট বড় সব শ্রেণীর মানব সমাজ। পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবস উপল্েয লাঠি খেলাতে ব্যবহৃত হত বাঁশ দিয়েই তৈরী লাঠি। রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এক সময় প্রতিটি জমির মালিকদের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ ছিল বাঁশ। আর আজ সেই বাঁশ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাঁশের ঝাড়গুলো নির্মূলভাবে কেটে বিনাশ করে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের বাগান তৈরী করছেন। যেমন- অবহেলায় বাঁশের ঝাড়গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তাতে করে এমন অবহেলা চলতে থাকলে মানুষ মরে যাওয়ার পর কবরে যে বাঁশের চালি বা খাপাচি দেওয়ার জন্য যে বাঁশ দরকার হয় তাও পাওয়া যাবে কিনা এ অশংখ্যা করছেন উপজেলার কিছু সচেতন মানুষ। বাঁশ ঝাড় টিকিয়ে রাখতে সরকারী ভাবে বিশেষ ভূমিকা কামনা করছেন এই উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ। বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় ৩ হাজার ৭ শত ৯০ হেক্টর জমিতে বাঁশ বাগান রয়েছে। যা আগে ছিল ৫ হাজার ৮ শত ৮০ হেক্টর জমিতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রাশেদ বলেন, সরকারীভাবে এ বাঁশ শিল্পের রনাবেন করা সকলের কর্তব্য।

২২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares