শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাউজানের চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যাকান্ডের আরো ২ আসামী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার।

রাউজানের চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যাকান্ডের আরো ২ আসামী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার।

এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামের রাউজানে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়’কে অপহরণ পূর্বক নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আরো ২ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম। গ্রেফতারকৃত আসামী উচিংথোয়াই মারমা হৃদয়কে জবাই করেছিল এবং জবাই করার কাজে তার অন্যতম সহযোগী ছিল ক্যাসাই অং চৌধুরী। চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের মধ্যে র‌্যাব কর্তৃক ২ জন এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ৫ জনসহ মোট ৭ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছে।
৩০ সেপ্টেম্বর’২৩ ইং শনিবার বিকাল ৩ টার সময় চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে হৃদয়কে জবাইকারী অন্যতম আসামী উচিংথোয়াই মারমাকে এবং তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে কর্নফুলী নতুন ব্রীজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা জায়, পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিহত ভিকটিম শিবলি সাদিক হৃদয় স্থানীয় রাউজান থানাধীন কদলপুর ইউপিস্থ সিকদার পাড়ার একটি মুরগী’র খামারে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো। খামারের কাজ নিয়ে খামারে কর্মরত ৫/৭ জন অন্যান্য সহযোগী কর্মচারী বন্ধুদের সাথে ভিকটিম হৃদয়ের বিভিন্ন সময় বাক-বিতন্ডা হত। এ ব্যাপারে খামারের মালিকগণ তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেও তারা হৃদয়কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আসামী উমংচিং মারমা গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখ হৃদয়কে ফোন করে কৌশলে রাস্তায় এনে জোর করে অপহরন করে সিএনজিতে তুলে নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উমংচিং মারমার ব্যবহৃত ফোন হৃদয়’কে দিয়ে তার বাবার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষির এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অপহৃত ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হলে গত ০১ সেপ্টেম্বর’২৩ইং তারিখ হৃদয়ের বাবা ও নানা মুক্তিপণের ২ লক্ষ টাকা বান্দরবানে গিয়ে অপহণকারীদের দিলেও তারা ছেলেকে ফেরত দেয়নি। ছেলেকে ফেরত না পেয়ে গত ০৭ সেপ্টেম্বর’২৩ ইং তারিখ হৃদয়ের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় ০৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে রাউজান থানা পুলিশ অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। গ্রেফতারকৃত সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা আসামী উমংচিং মারমা এর নেতৃত্বে অপহরণ, হত্যা, আলামত ধ্বংস করার জন্য লাশগুম এবং মুক্তিপণ আদায় করে মর্মে চট্টগ্রামের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর ৩য় আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। উল্লেখিত ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে অপহরণ মামলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় রুজু করা হয়। পরবর্তীতে আদালতে দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী হৃদয়’কে হত্যার বিষয়টি উদঘাটিত হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অপহরণ মামলার ধারার সাথে হত্যা মামলার ধারা সংযোজন করার জন্য বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রাম বরাবর আবদেন করেন।
উক্ত অপহরণ এবং হত্যা পরবর্তীতে লাশ বহু খন্ডিত করে গুম করা মামলার অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্তের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় হৃদয় হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান এবং ভিকটিম’কে নৃশংসভাবে জবাইকারী আসামী উচিংথোয়াই মারমা (২৩), পিতা-মংহ্লাজাই মারমা, সাং-কলমপতি, থানা-কাউখালী, জেলা-রাঙ্গামাটি’কে আটক করতে সক্ষম হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অপর আসামী ক্যাসাই অং চৌধুরী (৩৬), পিতা-মৃত ক্য থোয়াই অং চৌধুরী, সাং-আশ্রম পাড়া, থানা-রুমা, জেলা-বান্দরবান’কে একই দিন আনুমানিক ১৭০০ ঘটিকায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন নতুন ব্রীজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত ২ আসামী উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে স্বীকার করে যে, উচিংথোয়াই মারমা নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে হৃদয়কে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে এবং অপর আসামী ক্যাসাই অং চৌধুরী হৃদয়ের দুই পা চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগীতা করে।
উল্লেখ্যঃ রাউজানের কলেজ ছাত্র হৃদয়কে অপহরনকারীরা অপহরন করে নেওয়ার পর ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে অবশেষে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সেই ২ লক্ষ টাকা নিয়ে হৃদয়কে ছেড়ে না দিয়ে উমংচিং মারমা ও অংথুই মং মারমা’র নেতৃত্বে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে একদিন অবরুদ্ধ রাখার পর উচিংথোয়াই মারমা ও ক্যাসাই অং চৌধুরী হৃদয়কে হত্যার দায়িত্ব দেয়। উচিংথোয়াই মারমা হৃদয়কে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ অন্যান্য আসামীরা হৃদয়ের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগীতা করে। এরপর হৃদয়ের লাশ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেয়। পরবর্তীতে আসামী উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্যান্য খুনীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট থেকে বাঁচতে হত্যাকান্ডের আলামত ধ্বংস করার জন্য হৃদয়ের লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেয় এবং হাঁড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয়। হৃদয় হত্যাকান্ডের প্রকাশিত হলে সারাদেশ জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্ঠি হয়। বর্ণিত অপহরণ পরবর্তীতে নৃশংস হত্যাকান্ডে উমংচিং মামরাসহ তার অপরাপর ৯ থেকে ১০ জন সহযোগী অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে র‌্যাব কর্তৃক ২ জন এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ৫ জনসহ মোট ৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে এবং অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

১৭৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares