শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গুরুদাসপুরে সেই শিশুর কোলে কন্যা শিশু!

গুরুদাসপুরে সেই শিশুর কোলে কন্যা শিশু!

ইসাহাক আলী, নাটোর, ০২ সেপ্টেম্বর-নাটোরের গুরুদাসপুরে চতুর্থ শ্রেণির সেই অন্তঃসত্ত¡া স্কুলছাত্রী কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। শনিবার দুপুরে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভুমিষ্ঠ হয়েছে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের। এর আগে প্রতিবেশি সম্পর্কের দাদা জাহিদুল খাঁর পৈশাচিক চাহিদার শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত¡া হয়ে পড়ে ১১ বছরের শিশুটি। এ ঘটনায় মামলা হলে কিছুদিন আগে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাবাস করছেন। তবে নিষ্পাপ ফুটফুটে বাচ্চাটি একনজর দেখতে উৎসুক অনেকেই ভীড় করছেন হাসপাতালে। এর আগে আলট্রাসনোগ্রাফীর মাধ্যমে আগামী ০৮ সেপ্টেম্বর সন্তান প্রসবের তারিখ জানানো হলেও তার ৫দিন আগেই সন্তান প্রসব করলো সে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নারগিস তানজিমা ফেরদৌস ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাহিদুল ইসলাম জানান, স্কুল ছাত্রীটি নিজেই শিশু হওয়ায়, মা ও নবজাতককে বাঁচানো নিয়ে টেনশানে ছিলাম। যা হোক অবশেষে সফল অস্ত্রপাচার হয়েছে। বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ্য রয়েছে।

এদিকে ওই স্কুল ছাত্রীর দাদী হালিমা খাতুন (৬০) জানান, আমি গরিব মানুষ অন্যের বাড়িতে কাজ করে অতি কষ্টে সংসার চালাই। এ ব্যাপারে আমাদের কষ্টের কথা ভেবে প্রয়াত স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ১৫দিন আগে ২০হাজার টাকা দিয়েছিলেন । সেই টাকা দিয়েই নাতনির সেবা করেছি। এখন নানা চিন্তায় আছি শিশু ও তার সন্তান নিয়ে। কি করবো ভেবেই পাচ্ছি না। নবজাতকটিকে কেই দত্তক নিলে কিছুটা হলেও সস্তি পেতাম।

এদিকে পারিবারিক কলহের কারণে চতুর্থ শ্রেণীর শিশুটির বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তারা দুজনেই অনত্র বিয়ে করে। এরপর থেকেই শিশুটি তার দাদির কাছে থাকতো। এলাকার এক দুঃসম্পর্কের দাদা জাহিদুল খাঁ মাঝে মধ্য ওই শিশুটিকে নিয়ে তার ভ্যানে করে স্কুলে আনা নেয়া করতো। গত ৯ মাস ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে শিশুটিকে ধর্ষন করে জাহিদুল খাঁ। তবে এ ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ওই প্রতিবেশি। এর ৫ মাস পর শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের মানুষ জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি শিশুটি। তবে পরবর্তীতে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার মাধ্যমে চিকিৎসক অন্তঃসত্ত¦ার বিষয়টি জানায়। পরে শিশুটি ধর্ষনের ঘটনাটি তার পরিবারকে খুলে বলে। এতে গত ১৮ জুন শিশুটির দাদী হালিমা খাতুন বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

আলোচিত ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে এলাকায় ব্যাপর সমালোচনা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলে দীর্ঘ সময় পরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৫) গত ২৬ আগস্ট সকালে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার হেলেঞ্চা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া জাহিদুল খাঁ গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের মৃত কালু খাঁর ছেলে।

মা হওয়া ১১ বছরের ওই শিশুটি জানায়, অনেক আগে থেকেই তাকে আদর করতেন প্রতিবেশি ওই দাদা, বিভিন্ন সময়ে খাবার জিনিসও কিনে দিতেন। প্রায়ই তার ভ্যানযোগে তাকে স্কুলে আনা-নেয়া করতেন। ঘটনার দিন স্কুলে যাওয়ার জন্য গোসল করে বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল শিশুটি। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল ইসলাম বাড়ির ভেতর ঢুকে ঘরে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করতে বলে। ঘরে ঢুকতেই পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি। ফলে ওই ঘটনা কাউকে বলতে সাহস পায়নি শিশুটি।

বর্তমানে ফুটফুটে সন্তানের মা নিজেই এখনো শিশু। কিভাবে সামলাবেন সন্তানকে আর কিভাবেই লালন পালন করবেন সন্তান। নিজের ভবিষ্যত তো অন্ধকারে বিলীন। সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে মানবতা ও ন্যায় বিচার চায় তার পরিবার ও এলাকাবাসী।

৭২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares