শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নাটোরে আধিপত্যের লড়াইয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন যুবলীগ নেতার-আহত হয়েছেন ৬ সহযোগী

নাটোরে আধিপত্যের লড়াইয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন যুবলীগ নেতার-আহত হয়েছেন ৬ সহযোগী

ইসাহাক আলী, নাটোর, ২৪ জুলাই- নাটোর শহরের বলারীপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীন বিরোধের জেরে মিঠুন আলী নামে এক যুবলীগ নেতার কুপিয়ে হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন সহ জখম করেছে প্রতিপক্ষরা। এ সময় আরো অন্তত ৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মিঠুন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বলারী মহল্লার সাহাব উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছে যুবলীগের নেতৃবৃন্দ ও আহতদের পরিবার। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে শহর জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকাল ৪ টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করবে যুবলীগ।

এলাকাবাসী ও আহতরা জানান, গত রাত পৌনে ১০টার দিকে (রবিবার) মিঠুনসহ তার সহযোগীরা শহরের ভবানীগঞ্জ এলাকার দলীয় কার্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল। বলারীপাড়া মহল্লার রাজারপুকুর পাড় এলাকায় পৌছলে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা ১৫/২০ জনের মুখে মুখোশ পড়া সন্ত্রাসীরা মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেয়। এ সময় তারা দিকবিদীক ছোটার সময় তারা হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে মিঠুনসহ ৬ জনকে আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মিঠুনের ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে মিঠুনের শারিরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হামপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখানে তার কয়েক ঘন্টার অস্ত্রোপচার করে কব্জি জোড়া লাগানো হলেও তার পরিস্থিতি শংকা মুক্ত নয় বলে জানা গেছে। হামলায় আহত আরমান আলী (২৮), আবদুল্লাহ আল রাব্বি (২৭), বাবলু মিয়া (৩৬), সবুজ মিয়া (৩২), স্বপ্ন আলী (২২) ও জাহিদুল ইসলাম (৩৫) সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনার জন্য মিঠুনের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কমিশনার নান্নু শেখের লোকজনকে দায়ী করা হয়েছে। মিঠুনের ভাই স্বপ্ন গতরাতে সদর হাসপাতালে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, তার ভাইকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রমজানের নির্দেশে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। তিনি দলের নেত্রীর কাছে এর বিচার দাবি করেন।

এদিকে এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর নান্নু শেখকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামলার সাথে তার নির্দেশ বা জড়িত থাকার পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি কোন রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব নয়। যিনি এমন অভিযোগ করেছে সে দলের কেউ নয় সে ছোট মানুষ। এটি তাকে শেখানো বুলি। তারা যেহেতু শিমুল সমর্থক তাদের মতো করে এমন অভিযোগ এনেছে। তিনি আরো বলেন, তারা আহত হয়েছে বা যারা হামলা করেছে তারা উভয়েই নান্নু সমর্থক। নান্নুর উপর হামলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। এর সাথে রাজনৈতিক কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা সর্ম্পূর্ণ এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা। তিনি আরো বলেন, আমি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সকল নেতাকর্মিই আমার কাছে নিরাপদ। তবে যারা দলে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে সে ব্যাপারে নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি একটি দলীয় মিটিংএ ছিলাম হামলার খবর শুনেই হাসপাতালে নেতৃবৃন্দকে পাঠিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও খোজ খবর নেয়া হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর পরই হাসপাতালে ছুটে যান জেলা যুবলীগ, আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মিরা। এ সময় তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মিরা। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া বলেন, আহত ব্যক্তিরা নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের সমর্থক। হামলাকারী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নান্নু শেখ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের সমর্থক। এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাঁদর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জেরে গত ১৬ এপ্রিল নান্নু শেখকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে মিঠুনসহ তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর পর থেকেই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল।

হামলার সময় যুবলীগ নেতা মিঠুন আলীর সঙ্গে থাকা তার এক সহযোগী বলেন, নান্নু শেখকে আহত করার মামলার এক আসামি (মিঠুনের অনুসারী) গতকাল সন্ধ্যায় জামিনে ছাড়া পান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষরা পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছিম আহমেদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। তবে এখনো কেউ মামলা করেনি।

এর আগে সম্প্রতি নান্নু শেখকেও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে সন্ত্রাসীরা। সে সময় ভাংচুরও করা হয় কয়েকটি বাড়িতে।

১০২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares