বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলো নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লা

জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলো নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লা

ইসাহাক আলী, নাটোর, ১০ আগস্ট’২৩-দেশের ১৭ তম জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলো নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি কাঁচাগোল্লা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে পেটেন্ট, শিল্প নকশা ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর- শিল্প মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন সনদে নাটোরে কাঁচাগোল্লা’র নাম অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এই স্বীকৃতি দেয়া হলো।

এদিকে কাঁচাগোল্লাাকে জিআই পন্যের স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা। সদ্য বিদায়ী সাবেক জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ জিআই পন্য হিসাবে কাঁচা গোল্লার নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আবেদন করেন।

এদিকে কাঁচা গোল্লা জিআই পন্য হওয়ার খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ¡াস প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে নাটোরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে।

ঐতিহ্যবাহী এই কাঁচাগোল্লা দীর্ঘদিন ধরে বিকৃত আকারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে আসছিলো। গত ফেব্রæয়ারিতে দেশের প্রসিদ্ধ একটি খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মিঠাই নাটোরে তাদের ব্রান্ড শপে গোলাকার কাঁচাগোল্লা বিক্রি শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এরপর থেকে নাটোরের সুধীমহল এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করে।

মূলত তার পরেই ঐতিহ্যবাহী নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন নাটোরের সাবেক জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ। এবছরের ৩০ শে মার্চে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন পাঠায় জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, এটা আমাদের জন্য গৌরবের। কাঁচা গোল্লার সাথে নাটোরের মানুষের আবেগ ও ঐতিহ্য জড়িত। তাই এটাকে সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সব সময় কাজ করে যাবো।

কথিত আছে, কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজাদার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রাণী ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসুদন পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী অসুস্থ হয়ে গেলেন।

মিষ্টি তৈরির জন্যে দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রাণী ভবানীর রাজবাড়িতে।

রাণী ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এটাই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস। এই গল্প বেঁচে আছে শত-শত বছর ধরে মানুষের মুখে- মুখে।

এদিকে নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়, মুখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজও সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।

তবে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি না থাকায় বিদেশে রপ্তানীতে কিছুটা সমস্যা ছিল এখন থেকে সেই জটিলতা কেটে আন্তর্জাতিক বাজারসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানোর নতুন সম্ভাবনা ও ক্ষেত্র তৈরি হবে।

১৫১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares