বিশ্ব শরণার্থী দিবসে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ রিফিউজি জীবন চাই না, মিয়ানমারে ফিরতে চাই

কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার। রিফিউজি জীবন নয়, স্বদেশে (মিয়ানমার) ফেরার দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকালে বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে উখিয়া লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে এ সমাবেশ হয়। শিশু-কিশোরসহ হাজারও রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশ নিয়ে স্বদেশে ফিরতে স্লোগান দেয়। আর দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানায় তারা।

সমাবেশ শুরুর আগে দুপুর থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করে ক্যাম্প-১ এর ফুটবল মাঠে। জড়ো হয় শত শত রোহিঙ্গা। সবার কণ্ঠে ছিল ‘রিফিউজি জীবন চাই না, স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই।

সমাবেশে রোহিঙ্গা আবদু রহিম বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমরা এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। ক্যাম্পে ত্রিপলের জীবন ভালো লাগে না। আমাদের দেশ আছে, নিজ ভিটে-মাটি আছে। আমরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।

এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন বলেন, অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। নিজ দেশে গিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই। কারণ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নই, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের নাগরিকত্ব আর নিজ গ্রামের ভিটে-মাটি ফেরত দিলেই আমরা দ্রুত দেশে ফিরে যাব। এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘রিফিউজি দিবস আসে আর যায়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এই দিনে যাতে আর কোনো মানুষ নতুন করে রিফিউজি না হয়। যাতে আজকের দিনে রিফিউজি দিবস শেষ হয়।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘এই জনপদে শরণার্থী সমস্যা: অতীত ও বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়। এতে বক্তারা বলেন, যুগে যুগে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার হচ্ছে শরণার্থীরা। শরণার্থী সমস্যা সমাধানে পরাশক্তি সম্পন্ন দেশগুলোকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি শরণার্থীদের পক্ষে বিশ্বজুড়ে জনমত তৈরি করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ (বিএসসিএসএস) এই আলোচনা সভা আয়োজন করে। বিএসসিএসএসের সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম। সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার আলোচনায় অংশ নেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণভয়ে পালিয়ে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নতুন ও পুরনো মিলে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অবস্থান কক্সবাজারে।