মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণ ও মানবপাচার চক্রের নারীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণ ও মানবপাচার চক্রের নারীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার।  মানবপাচার ও অপহরণ চক্রের সদস্যরা পাসপোর্ট ভিসার ঝামেলা ছাড়াই উচ্চ বেতন ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য মালয়েশিয়ায় চাকুরীর দেওয়ার এবং সেখানে যাওয়ার পর টাকা পরিশোধের প্রলোভন দেখায়। ফলে তারা প্রলোভনে প্রলুদ্ধ হয়ে বিদেশ যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে।এই সুযোগে অপহরণ ও মানবপাচার চক্রটি উখিয়া থানা এলাকা সংলগ্ন সমুদ্রপথে নৌকাযোগে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাচার করে দেয়। ভিকটিমরা সমুদ্রপথের দুর্গম যাত্রায় কাতর হয়ে পরে এবং মালয়েশিয়া না গিয়ে দেশে ফিরে আসার জন্য কাকুতি-মিনতি করলে পথিমধ্যে মিয়ানমারের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য জনপ্রতি দুইলক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে প্রত্যেক ভিকটিমের বাড়ীতে ফোন করে। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে ভিকটিমদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিসহ তাদেরকে মারধর করার ভিডিও ইমো’তে পরিবারের নিকট প্রেরণ করে।
এঘটনায় পেকুয়া থানাধীন হোসাইনাবাদ এলাকার মোঃ বেলাল র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর নিকট অভিযোগ দায়ের করেন যে, তার ছোট ভাই মোঃ হেলাল (৪১) মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে পাচারের শিকার হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম হেলাল পেশায় একজন কৃষক। সে পানের বরজে কাজ করার সুবাদে পেকুয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গমনাগমন করতো এবং মানব পাচার চক্রের সাথে পরিচয় হয়ে উঠে। একপর্যায়ে মানবপাচারকারী চক্রটি মোঃ হেলাল ও পেকুয়ার আরও ৪ জন ভিকটিমকে পাসপোর্ট এবং ভিসার ঝামেলা ছাড়াই উচ্চ বেতন ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য মালয়েশিয়া চাকুরীর প্রস্তাব এবং সেখানে যাওয়ার পর টাকা পরিশোধের প্রলোভন দেখায়। ফলে তারা প্রলোভনে প্রলুদ্ধ হয়ে গত ৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ ভোর বেলা বাড়ী থেকে বের হলে মানবপাচারকারীরা তাদের অজ্ঞাত স্থানে যায়।
পরদিন ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে উখিয়া থানা এলাকা সংলগ্ন সমুদ্রপথে নৌকাযোগে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাচার করে দেয়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫  উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানব পাচারকারী চক্রের নারীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,১৬ নম্বর শফিউল্লাহকাটা ক্যাম্পের-৩-ডি-ব্লকের মৃত দিল মোহাম্মদ এর ছেলে মোঃ ছাবের (২৫)কেফায়েত উল্লাহ মেয়ে আরাফা (৩৭) ও স্থানীয় রাজাপালং ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকার
মোঃ আলীম এর ছেলে মোঃ শারমিন (২৫)।
 র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)মোঃ আবু সালাম চৌধুরী সোমবার বিকালে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান,এ বিষয়ে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২২ অক্টোব রাতভর র‌্যাব-১৫, সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের চৌকস আভিযানিক দল উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার চক্রের তিনজন’কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরাসহ চক্রটি পরস্পর যোগসাজশে মোঃ হেলাল ও পেকুয়ার আরও ৪ জন ভিকটিমকে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে চক্রের অপর সদস্যদের হেফাজতে মিয়ানমারে আটক করে রেখেছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিমদের চাকুরী ও মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে মিয়ানমারে আটক করতঃ মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল বলে তারা স্বীকার করে।
এ ঘটনায় মোঃ বেলাল বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত তিনজনসহ এজাহারে আরও ৪ জনের নাম উল্লেখ করতঃ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে উখিয়া থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
২০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS