শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গ্রুপিং এ জর্জরিত কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি

গ্রুপিং এ জর্জরিত কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি

সাইয়েদ বাবু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-: গঠনতন্ত্র উপেক্ষা,স্বেচ্ছাচারিতা, গ্রুপিং, ব্যক্তিগত স্বার্থে কমিটি গঠন, সর্বোপরি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র তদারকি না থাকায় জেলা বিএনপি এখন এতিম দশায় পরিণত হয়েছে।ফলে দুই গ্রুপের যাঁতাকলে পড়ে নেতাকর্মীরা ছটফট করছে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয় কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তাসভীর উল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা নির্বাচিত হন এবং ১৫১ বিশিষ্ট কমিটি ২ বছরের জন্য গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর কিছুদিন যেতে না যেতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় দলের মধ্যে বিভক্তি। পরবর্তীতে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। গত ২০২০সালের১৯ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরের ভেলাকোপা এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণে কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এর সামনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সহ ১০ জন মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনায় কেন্দ্র থেকে সাইফুর রহমান গ্রুপের সাইফুর রহমানকে ও তাসভীর গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদকে শোকজ করা হয়। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা ও যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদকে এক মাসের জন্য দলের সকল কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় বিএনপি।এতেও গ্রুপিং মীমাংসিত হয়নি। পরবর্তীতে গ্রুপিং আরো তীব্র আকার ধারণ করে ফলে দুটি পার্টি অফিসের জন্ম হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা শহরের পোস্ট অফিস পাড়া থেকে এবং সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম আমিন মোক্তার পাড়াস্থ অফিস থেকে দায়সারা ভাবে বিএনপি কার্যক্রম চালাচ্ছেন।দুই গ্রুপের গ্রুপিং ছড়িয়ে পড়েছে জেলা পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়েও। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সকল উপজেলা ও পৌর শাখা সহ অঙ্গদল সমূহে দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে । কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির গ্রুপিং নিরসনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গত ২০২১ সালের ১ফেব্রুয়ারী দায়িত্ব প্রদান করেন।তিনি ২০২১ সালের ১২ মার্চ দুই গ্রুপের ৭জন করে মোট ১৪নেতার সাথে ঢাকায় বৈঠক করে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে রিপোর্ট জমা দেন। ঐ বৈঠকের সদস্য জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ঐ রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি।গত ১৬জুন’২০২৩ কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদিত হওয়া সত্ত্বেও একক সিদ্ধান্তে জহুরুল আলমকে আহবায়ক ও মাজেদুল ইসলাম তারাকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এব্যপারে

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক দুই বছরের মেয়াদের কমিটি প্রায় ৮ বছর ধরে চলছে।কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি দুই বছর পর পর কমিটি গঠিত হলে দলের মধ্যে এই বিভাজন থাকত না। তিনি আরো বলেন জেলা কমিটির ১৫১ সদস্যের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ২০ থেকে ২৫জন সক্রিয় থাকলেও গ্রুপিং এর কারণে কমিটির বড় অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তৃণমূলের অভিমত দ্রুত কমিটি গঠন করলে গ্রুপিং নিরসন সম্ভব হবে। সাধারণ সম্পাদক একক সিদ্ধান্তে সদর উপজেলা কমিটি গঠন করেছেন যদিও আগে আরও একটি সদর উপজেলা কমিটি আছে এব্যপারে তাকেই প্রশ্ন করতে পারেন । এব্যপারে সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা বলেন, সভাপতি তাসভীর সাহেব কুড়িগ্রামের রাজনীতির মাঠে আন্দোলন সংগ্রামে উপস্থিত থাকেননা, আন্দোলন বেগবান করতেই সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি করে দিয়েছি, আমাদের পার্টি অফিস দীর্ঘ প্রায় কুড়ি বসর যাবৎ দলীয় কার্যক্রম চলছে এই অফিসেই কেন্দ্রীয় প্রায় সকল নেতা এখানে এসেছেন, এমনকি সভাপতি তাসভীর সাহেব এই অফিস থেকেই যতটুকু সময় পেরেছেন এখানেই এসেছেন, এখন কি কারণে এখানে না এসে সহরের অদুরে আলাদা অফিস খুলেছেন এটি আমার বোধগম্য নয়। আমি আগেও বলেছি বতর্মানেও বলছি এই পার্টি অফিস সবার জন্যেই খোলা সকলে এসে এখান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারেন। সভাপতি

তাসভীর উল ইসলাম বলেন জেলা বিএনপির ৯০ভাগ নেতা কর্মী আমাদের সাথে রয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কিছু লোক বিরোধীতা করতেই পারে। সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে আন্দোলন সংগ্রামে থাকায় সময় দিতে পারেননি। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপি কমিটি সাধারণ সম্পাদক একক সিদ্ধান্তে দিয়েছেন যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। সাধারণ সম্পাদক এহেন কার্যক্রম করায় তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাসচিব বরাবর পত্র দিব।

রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জানান কুড়িগ্রাম বিএনপির গ্রুপিং দীর্ঘদিনের এটি সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে এখন আন্দোলন সংগ্রামের কারণে সময় লাগছে, আশা করছি অতিদ্রুত সমাধান হবে।

কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কুড়িগ্রাম এর গ্রুপিং এর ব্যপারে অত্যন্ত ত্যক্ত বিরোক্ত, তিনি উভয় গ্রুপকে একত্রে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা প্রদান করেছেন ।

৩২২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares