মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
র‌্যাব-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযানে ১ লক্ষ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার

র‌্যাব-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযানে ১ লক্ষ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার

রাজধানীর যাত্রবাড়ী ও চট্টগ্রামে অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুদ এবং বিক্রির অভিযোগে ভ্রম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার লিটার তেল জব্দ ও চট্টগ্রামে গত শুক্রবার থেকে গতকাল পর্যন্ত চার প্রতিষ্ঠান থেকে তিন দিনে ৭৫ হাজার ৩৩৮ লিটার তেলের মজুদের প্রমাণ পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া গতকাল রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের একটি গোডাউন থেকে ২০ হাজার ৪০০ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করেছে পুলিশ। র‌্যাব-৩-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কতিপয় মুদি ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুদ করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত প্রতিলিটারে ৩৪ টাকা বেশি দরে সাধারণ জনগণের কাছে সয়াবিন তেল বিক্রি করে আসছে। আদালত রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত র‌্যাব-৩-এর আভিযানিক দল ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডলের উপস্থিতিতে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
এ সময় উত্তর যাত্রাবাড়ী অদিতি ট্রেডার্স মালিককে ৫০ হাজার, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং মালিককে ৫০ হাজার, মেসার্স মিন্টু স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই তিন দোকান থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল মজুদের সন্ধান পান।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্বীকার করে বলেন, অধিক লাভের আশায় তারা বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুদ করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করে আসছে।
এদিকে চট্টগ্রামের মিলমালিকরা বলে আসছে, ব্যবসায়ীরাই তেল মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা কারখানা থেকে তেল সরবরাহ না করার জন্য মিলমালিকদের দোষারোপ করে আসছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মিলমালিকদের কথাই সত্য। কারণ দাম বৃদ্ধির পরও সয়াবিন তেল মিলছে না দোকানে। তবে একের পর এক গুদামে মিলছে সয়াবিন তেল। গত শুক্রবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে ৭৫ হাজার ৩৭৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভোক্তা অধিকার অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, রমজানের আগে কেনা এসব তেল দোকান মালিক সিরাজ সওদাগর গুদামে রেখে দিয়েছিল; কিন্তু দোকানে তেল ছিল না। সে মোট ১ হাজার ৫০ কার্টনে অন্তত ১৫ হাজার লিটার তেল গুদামে রেখেছিল।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী বাজারের বিল্লি লেনে অভিযান চালিয়ে এক দোকানির গুদাম থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এর আগে রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর সিডিএ কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান চালিয়ে একটি গুদাম থেকে ১ হাজার ৫০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। এই তেলও রমজানের আগে অবৈধভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে খাজা স্টোর নামে ওই দোকানের মালিক। তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় এক দোকানির ঘর থেকে ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় ওই দোকানিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবৈধভাবে মজুদ করা ৫৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে মজুদের দায়ে মেসার্স খান ট্রেডার্সের মালিক ফজলুল করিম পাটোয়ারীকে ১ লাখ ও মেসার্স আলমগীর স্টোরকে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ডিরেক্টর তারিক আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বাড়লেও দেশের বাজারে তেল সরবরাহ করেছে আমদানিকারক মিলমালিকরা। কিন্তু বেশি দামের আশায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করে রাখে। এতে সঙ্কট সৃষ্টি হয়। এখন সেটাই প্রমাণিত।
অন্যদিকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের একটি গোডাউন থেকে ২০ হাজার ৪০০ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করেছে পুলিশ। এ সময় তেল মজুদকারী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম স্বপনকে (৪০) আটক করা হয়েছে। তিনি তাহেরপুর বাজারপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেনের পুত্র।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও বাগমারা থানা পুলিশ এই অভিযান চালায়। জব্দ তেলের মধ্যে ১৯ হাজার ৩৮০ লিটার সয়াবিন ও ১ হাজার ২০ লিটার সরিষার তেল বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম।
তিনি বলেন, তাহেরপুর বাজারে একটি গোডাউনে টিসিবির পণ্য থাকতে পারে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে ১০০ ড্রাম তেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৯৫ ড্রামে ১৯ হাজার ৩৮০ লিটার সয়াবিন তেল এবং পাঁচ ড্রামে ১ হাজার ২০ লিটার সরিষার তেল পাওয়া যায়। অভিযানের সময় তেল মজুদকারী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম স্বপনকে আটক করা হয়। তার গোডাউন সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম, পুঠিয়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস ও বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ।
৬৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares