শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উন্মুক্ত হলো রাজারহাটের চাকিরপশার নদ

উন্মুক্ত হলো রাজারহাটের চাকিরপশার নদ

সাইদ বাবু, কুড়িগ্রাম প্রতি‌নি‌ধি,২৮-০৩-২৩ : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তিস্তার উপনদী চাকিরপশারকে উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এর আগে জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া এই নদটির ইজারাও বাতিল করছে স্থানীয় প্রশাসন। একই সাথে এটি নতুন করে ইজারা দেওয়ার কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। ফলে প্রায় তিন দশক পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে নদটি।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের প্রতিপালন, চাকিরপশার নদের স্বাভাবিক প্রবাহ সচল রাখা, জলাবদ্ধতার হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মৎস্যজীবীদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য তিস্তা নদীর উপনদী চাকিরপশার ১৪১ দশমিক ২৯ একর আয়তনের অংশ উন্মুক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গত চল্লিশ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, চাকিরপশার নদটি রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার কাচকোল নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হত। কিন্তু প্রায় চল্লিশ বছর আগে তিস্তা নদী উত্তরে সরে আসার কারণে এ নদীটি চাকিরপশার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন এ নদীর ভাটির প্রায় ৩০ কিলোমিটার হয় তিস্তার শাখা নদী। উজানের প্রায় ২০ কিলোমিটার নদী হয় তিস্তার উপনদী। রাজারহাট উপজেলার ইটাকুড়ি নামক নিম্নাঞ্চল থেকে উলিপুরের থেতরাই পর্যন্ত প্রবাহটি উজানে চাকিরপশার, কিছুটা ভাটিতে মরাতিস্তা এবং ভাটিতে বুড়িতিস্তা নামে প্রবাহিত। নব্বই এর দশকে রাজারহাটের পাঠানহাট নাম স্থানে নদীটির ওপর আড়াআড়িভাবে একটি সেতুবিহীন সড়ক তৈরি করা হয়। ফলে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। উজানে হাজার হাজার একর জমিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে ভাটিতে অনেক স্থানে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। পানির প্রবাহ বন্ধ হলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজসে নব্বইয়ের দশকে চাকিরপশারকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে লিজ দেওয়া শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। তবে মৎস্যজীবীদের নামে অধিকাংশ সময়ে তা ভোগ করেছে প্রভাবশালীরা। নদটির অনেক স্থানে প্রভাবশালীরা যোগসাজসে প্রায় ৩০০ একর নিজেদের নামে লিখে নিয়ে অবৈধভাবে দখল করে আসছে।

চাকিরপশার সুরক্ষা আন্দোলনকারীরা জানান, নদটির লিজ বাতিল করে তা দখলমুক্ত করে উন্মুক্ত জলাশয় করতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এবং ভূমি মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসককে অনেকবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। বর্তমান রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম আন্দোলনকরীদের লিখিত আবেদন পেয়ে কাজ শুরু করেন। মাত্র তিন মাসের মাথায় তিনি চাকিরপশার ১৪১.২৯ একর বদ্ধ জলাশয় ঘোষিত অংশকে উন্মুক্ত করার অনুমোদন দেন । কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক গত ২০ মার্চ বিজ্ঞপ্তি আকারে তা প্রকাশ করেন।

চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি রিভারাইন পিপল ও গণ কমিটি নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর ভেতরে সেতুবিহীন আড়াআড়ি সড়কে সেতু স্থাপন এবং জনসাধারণকে নদীতে নামার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় পাঁচ বছর ধরে অহিংস আন্দোলন করে আসছে। চাকিরপশার ১৪১ দশমিক ২৯ একর স্থান উন্মুক্ত জলাশয় ঘোষণা তাদের আন্দোলনের প্রাথমিক প্রাপ্তি হিসেবে দেখছে সংগঠনটি।

৬১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares