শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে বিদ্যালয়ে জাল স্বাক্ষরে শিক্ষক নিয়োগসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে  নানা অনিয়ম ।

ডোমারে বিদ্যালয়ে জাল স্বাক্ষরে শিক্ষক নিয়োগসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে  নানা অনিয়ম ।

 রবিউল হক রতন , ডোমার (নীলফামারী ) প্রতিনিধিঃ   নীলফামারীর ডোমার বিদ্যালয়ে জাল স্বাক্ষর সহ নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে । এতে করে শিক্ষার মান যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, অপরদিকে অনেক অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের পড়ালেখা  নিয়ে দূচিন্তায় পড়েছেন।
 সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের, বামুনিয়া বালিকা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়বুল ইসলাম দীর্ঘ ছয় বছর ধরে একই ব্যাক্তিবর্গকে এডহক কমিটিতে রেখে তাদের স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন রকম দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছেন। এরই মাঝে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদেরকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তিও করিয়েছেন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি প্রেক্ষাপটের আলোকে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ রমিজ আলমের বরাবরে লিখিত অভিযোগ হয়েছে ।
জানা গেছে, গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে নীলফামারী-১ ডোমার-ডিমলা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন সরকার বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য তার বরাদ্দকৃত প্রকল্প থেকে কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। উক্ত বরাদ্ধকৃত অর্থ প্রধান শিক্ষক ও এডহক কমিটি মিলে বিদ্যালয়ের সংস্কার না করেই তারা সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন।অপরদিকে ছাত্রীদের উপবৃত্তি কার্ড করে দেওয়ার নাম করে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহন করেছেন প্রধান শিক্ষক ময়বুল ইসলাম।
ইতিপূর্বে সুচিত্রা নামের এক প্রতিবন্ধী ছাত্রীর আটাশ হাজার টাকা নিজের মেয়েকে প্রতিবন্ধী সুচিত্রা সাজিয়ে উক্ত টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে সেই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।
২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে প্রধান শিক্ষক ও এহডক কমিটির সমন্বয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে ৪টি বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করেন যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৬০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় প্রধান শিক্ষক ময়বুল ইসলাম ২০১৪ ইং সালে রেজাউল নামে এক বেকার যুবকের নিকট উক্ত বিদ্যালয়ে চাকুরী দেওয়ার নাম করে ১২ লক্ষ টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বেকার যুবক রেজাউল প্রধান শিক্ষক ময়বুলের নামে কোর্টে মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং- সিআর- ১৩১/২২ উক্ত মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে।
সরকারী নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে জোসনা বানু ও ফিরুজুল ইসলাম নামে ২ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ প্রদান করা হবে মর্মে তাদের নিকট হতে ১৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ১৮ বছর পূর্বে অথার্ৎ ২০০৪ সালে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিজির প্রতিনিধি, এবং মরহুম সাবেক সভাপতিকে বদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তাদের অনুমতি এবং স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক শিক্ষিকাকে নিয়োগ পত্র প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষক যাদেরকে নিয়োগ প্রদান করেছেন তাদেরকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং  অভিভাবকসহ স্থানীয় মানুষজন আজবধি কোনদিনও তাদেরকে দেখেননি। নিয়োগকৃত শিক্ষিকা জােসনা বানু জানুয়ারী মাসের ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চন পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযাগ থাকলেও অৃদশ্য কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি ।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের সম্প্রতি অবসরে যাওয়া অফিস সহকারী মাহাফুজুল হক বলেন,আমি গত ডিসেম্বর মাসে অবসরে গেছি । জোসনা নামে কাউকে আমি দেখিনি কোনদিন । আপনার কাছ থেকে এটা প্রথম নাম শুনলাম । তবে ফিরুজুল নামে এক শিক্ষকের নাম গত নভেম্বর (২০২১) থেকে শুনে আসতেছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়বুল ইসলাম বলেন, করোনার কারনে নিয়মিত কমিটি করা যায়নি। কাবিটা প্রকল্পের এক লক্ষ টাকার বিষয়ে তিনি বলেন বিদ্যালয়ের ৫টি জানালা,দুটি দরজা এবং বাকী টাকার মাটি ভরাট করা হয়েছে। নিজের মেয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীর ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন স্থানীয় সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। গাছ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন নতুন ভবন করার জন্য জায়গা প্রয়োজন হওয়ায় গাছ নিলামে বিক্রি করে ২৩ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের একাউন্টে জমা আছে। টাকা জমার রিসিভ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, বার লক্ষ টাকা নয় ছয় লক্ষ টাকা নিয়েছি ওকে লাইব্রেরীয়ান পদে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলাম ,সে তা করবে না বলে কোর্টে মামলা করেছে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে জোসনা বানু ও ফিরুজুল নামের ০২ (দুই) জনের নিয়োগ এবং ২৩/০৯/২০১৮ সালে অধিদপ্তর থেকে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন ও নিরীক্ষাকালে তাদের বিষয়গুলো দেখাননি কেন প্রশ্ন করলে প্রধান শিক্ষক বলেন মিনিষ্ট্রি অডিট ওভারলুক করেছে হয়ত, বিদ্যালয়ের ৮টি ফ্যান ও ৩ বান টিন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানায়, বিদ্যালয়ে রাখলে চুরি হয়ে যায় তাই বাড়িতে রেখেছি। জোসনা বানু এবং ফিরুজুলের নিয়োগের বিষয় রেজুলেশন এবং হাজিরা খাতায় উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে মাধ্যমিক ম্যাডাম শোকজ করেছে আমি সেখানেই সব কাগজপত্র হস্তান্তর করবো। এবং প্রতিবেদকের সামনে প্রমানপত্র দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নিয়োগকৃত শিক্ষিকা জোসনা বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনাদের যা কিছু জানার আছে আপনারা প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে জেনে নেন।
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাকেরিনা বেগম বলেন, প্রতিবন্ধীর টাকা সে নিয়েছিল,পরে সেই টাকা দিয়ে দিছে।এই বিষয়টি আমি দুদককে জানিয়েছি। একজন ইউপি সদস্য একটি অভিযোগ দিয়ে গেছে। ইউএনও স্যার আমাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন, আমি স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রধান শিক্ষক ময়বুল ইসলামকে কৈফিয়ত তলব করেছি কিন্তু প্রধান শিক্ষক নির্দ্ধারিত তারিখে নর্মালী জবাব দাখিল করায় আমি তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ব্যাখ্য চেয়ে পূর্ণরায় জবাব দাখিল করতে বলেছি। তারপর তিনি চিঠিতে কি জবাব দেয় দেখব। ইউএনও স্যারকে বলে দিব টিআর,কাবিখা না দিতে। তাহলে আর এডহক কমিটি আনতে পারবে না।একজন গ্রন্থাগারিক নিয়োগের বিষয়ে অনেক টাকা নিয়েছিল এটা আমিও জেনেছি।অবৈধ্য নিয়োগ দিলে তা বিল করতে পারবে না, তাছাড়া ওই স্কুলে খুবই অনিয়ম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলোর প্রত্যেকটির সত্যতা রয়েছে। আমরা মুখ খুললেই বিপদ তখন তিনি আমাদের উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
এবিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আহবায়ক সাইদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদকের কাছে ভিষণ কাকুতি মিনতি করে বলেন প্লিজ আপনারা তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত করবেন না। বেচারা গরীব মানুষ,আমরা সবাই মিলে বসে সবকিছু ঠিক করে নিবো।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রমিজ আলম অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বামুনিয়া বালিকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়টির তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।এখন কিছু বলা যাচ্ছে না, তদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।
২৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS