সোমবার- ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে জেনারেল ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোর ভুল রিপোর্টে মাদ্রাসা ছাত্রী গর্ভবতী!

ডোমারে জেনারেল ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোর ভুল রিপোর্টে মাদ্রাসা ছাত্রী গর্ভবতী!

রবিউল হক রতন ,ডোমার নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডোমার উপজেলা মাঠ সংলগ্ন দক্ষিণ দিকে অবস্থিত জেনারেল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সেখানে পেটে ব্যাথা নিয়ে ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসে গর্ভবতী হওয়ার খবর পেয়েছেন ১৩ বছরের অবিবাহিতা মাদরাসা ছাত্রী। আলট্রাসনোগ্রাফি ও প্রস্রাব পরীক্ষার পর এই রিপোর্ট হাতে পেয়ে সে অসুস্থ হয়ে পরে চিকিৎসা নিতে আসা অবিবাহিত ওই শিক্ষার্থী। ভুল চিকিৎসা দেয়ায় ক্লিনিক বন্ধের দাবী জানান ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনা সুত্রে জানাযায় জেনারেল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোববার বিকেলে ১৩ বছর বয়সী এক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় পেটের ব্যাথার চিকিৎসার জন্য। ওই ক্লিনিকে অবসরপ্রাপ্ত ডাঃ নিহার রঞ্জন সাহা মেয়েটির আলট্রাসনোগ্রাফি করে রিপোর্টে লিখেন শিশুটি গর্ভবতী। এরপর সেখানে তারা শিশুটির  প্রসার পরীক্ষা করেও একই রিপোর্ট দেয়। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর থেকে পরিবারের লোকজনের মাথায় বাঁজ ভেঙে পড়ে। অবিবাহিত এতো ছোট একটি মেয়ে কিভাবে গর্ভবর্তী হয়? এরপর রাতেই পরিবারের লোকজন শিশুটিকে নিয়ে অন্য আরও দু’টি ক্লিনিকে একই পরীক্ষা করে জানতে পারেন, তাদের মেয়ে গর্ভবর্তী নয়।
খবরটি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই ক্লিনিক অবরোধ করে রাখেন রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এবিষয়ে মেয়েটির বড় বোন বলেন, আমার বোন ওই রিপোর্ট শুনার পর থেকে সে শুধু কাঁন্নাকাটি করছে।কোনো খাওয়া দাওয়া করছে না। সে অস্বাভাবিক আচরণ করায় আমরা সারারাত তাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছি, তবে আমার বোনটি কোন ভাবেই এ বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না।
মেয়েটির নানী বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা আমার নাতনিকে ডিএনসি করার জন্য আমার কাছে সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। আমরা গরিব মানুষ টাকা জোগাড় করতে না পারায় ডিএনসি করতে পারি নাই। এলাকাবাসী অনেকে আবার অন্য ক্লিনিকে পরীক্ষার কথা বললে, আমরা আরো দু’টি ক্লিনিকে পরীক্ষা করে উল্টো রিপোর্ট পাই।পরে জানতে পারি ওই ক্লিনিকে নাকি কোন ডাক্তার থাকে না। নার্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষাসহ অপারেশনের কাজ করায়।
মেয়েটির মামা বলেন, ক্লিনিকের লোকজন আজকে বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে মিমাংসা করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি তাদের কোন প্রস্তাবে রাজি হইনি, আমি ওই ক্লিনিকটি বন্ধের দাবি করছি।যাতে করে আমাদের মতো আর কোন মানুষ যেন চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদে না পড়ে। আমার উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে একটাই চাওয়া অচিরেই এই ক্লিনিকটিকে সিলগালা করে দেন।
ভূক্তভোগী মেয়েটি কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, আমার পেটে ব্যথার কারণে চিকিৎসা নিতে এসে তারা আমাকে গর্ভবতী বানিয়ে দিয়ে আমার মান সন্মানসহ ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে দিল। ক্লিনিকের লোকজন টাকা খাওয়ার জন্য আমাকে নিয়ে যে অপবাদ তৈরি করল আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করার পাশাপাশি ডাক্তার বিহীন এ ক্লিনিকটি আজীবনের জন্য বন্দ্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে জেনারেল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ইসলাম বলেন, ডাঃ নিহার রঞ্জন সাহা আলট্রাসনোগ্রাফি করেছে। আর প্যাথলোজি ট্যাকনোলোজিস্ট লক্ষন রায় প্রসাব পরীক্ষা করে গর্ভবতী হওয়ার রিপোর্ট দিয়েছে। হয়তো তারা ভুল রিপোর্ট দিয়েছে।
ভুল রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করে ডাঃ নিহার রঞ্জন সাহা বলেন, হয়তো মেশিনের সমস্যার কারণে আলট্রাসনোগ্রাফিতে ভুল রিপোর্ট এসেছে।
প্রসাব পরিক্ষার বিষয়ে টেকনোলোজিস্ট লক্ষন রায় বলেন, ওই ক্লিনিকে আমি কোনো প্রসাব পরীক্ষা করি নাই। হয়তো ক্লিনিকের কেউ করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ রায়হান বারী বলেন, এ বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি।তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৭৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares