মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২টি পুরনো ইউনিট বিক্রি, সরকারের ক্ষতি ১শ কোটি টাকা

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২টি পুরনো ইউনিট বিক্রি, সরকারের ক্ষতি ১শ কোটি টাকা

মোঃ ফারুক মিয়া আশুগঞ্জ থেকে : আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) ৬৪ মেগাওয়াটের দু’টি পুরনো ইউনিট বিক্রির নিলামে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিলাম নিয়ন্ত্রণের কারণে সরকারের শত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। নিলামপ্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের দাপটে ১০-১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারেনি। একাধিক ঠিকাদারকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে নিলামের টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়া হয়নি। এ কারণে সরকার প্রকৃত মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শত কোটি টাকা মূল্যের ইউনিট দু’টির প্রস্তাবিত প্রাক্কলিত মূল্য মাত্র ২১ কোটি টাকা নির্ধারণ করায় এ নিলাম আয়োজনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনো কারসাজি আছে কি না সেটি নিয়ে সচেতন মহলে এখন প্রশ্ন উঠেছে।
সব নিলামপ্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষের অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা ও অসততায় বাজারমূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক কম মূল্যে ইউনিট দু’টির প্রস্তাবিত মূল্য নির্ধারণ, নানা অনিয়ম, ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ প্রভাব ও নিলামে অবৈধ হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। মুখ খুলে কিছু না জানালেও রাষ্ট্রীয় আর্থিক স্বার্থে পুরো নিলামপ্রক্রিয়াটি তদন্ত করে বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পুনঃপ্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ ও নিলামের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের দাবি জানান তারা। তবে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি নিয়ম মেনেই নিলামপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৭০ সালে ৬৪ মেগাওয়াটের দুটি থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (ইউনিট) স্থাপনের মধ্য দিয়ে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। যা পরবর্তীতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) নামকরণ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থাপিত দু’টি ইউনিটের আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০০৫ সালে শেষ হয়ে যায়। ফলে ২০১৪ সালে ইউনিট-১ এবং ২০১৮ সালে ইউনিট-কে অবসরে নেয়া হয়। এ দিকে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎচাহিদা পূরণে পুরনো এই ইউনিট দু’টির স্থলে নতুন অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সে মোতাবেক ইউনিট দু’টি নিলামে বিক্রি ও অপসারণের উদ্দেশ্যে এদের প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণে এপিএসসিএলের প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। জানা গেছে, এ কমিটির প্রধানসহ কমিটির কোনো সদস্যেরই এ ধরনের কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তারা ইউনিট দু’টির প্রস্তাবিত (প্রাক্কলিত) মূল্য নির্ধারণ করেন মাত্র ২১ কোটি টাকা, যা বাস্তবতাবিবর্জিত।ইউনিট দু’টি বিক্রির জন্য গত ডিসেম্বরে পত্রিকায় দরপত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। এপিএসসিএলসহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় হতে দরপত্র সংগ্রহের স্থান উল্লেখ করা হলেও দরপত্র জমা কেবল তাদের নিজস্ব কার্যালয়েই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। ফলে ১০০টির বেশি দরপত্র বিক্রি হলেও মাত্র ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে। অপর দিকে একাধিক বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ নিলামে অংশগ্রহণে বাধা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র জমাদানেও স্থানীয় ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের বাধাদান ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ছয়টি দরপত্র দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান হলো- মেসার্স সফিউল্লাহ ট্রেডার্স (৩৭ কোটি ৪০ লাখ), নীরা স্টিল করপোরেশন (৩৮ কোটি সাড়ে ৬২ লাখ), মেসার্স নাবিল এন্টারপ্রাইজ (৬১ কোটি সাড়ে ৮৭ লাখ), চন্দ্রপুরি এন্টারপ্রাইজ (৩২ কোটি ২০ লাখ), ত্রিরতœ ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স মায়াবী এন্টারপ্রাইজ (কোনো মূল্য দেয়া হয়নি)। নিলামে অংশগ্রহণকারী নাবিলা এন্টারপ্রাইজ ৬১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা দর দিয়ে কাজ ভাগিয়ে নেয়ায় সম্পূর্ণ নিলামপ্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদেরকে নিলামে অংশগ্রহণ করতে বাধা দিয়ে জোরপূর্বক নিলামটি ভাগিয়ে নেয়। তারা জানান, নিলামপ্রক্রিয়াটি বাতিল না করা হলে কোম্পানি প্রায় শত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান মোবাইলফোনে জানান, যথাযথ ব্যবস্থায় নিলামপ্রক্রিয়া হয়েছে। এখনো কাউকে কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। কোনো রকম অনিয়ম থাকলে তা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

১৭৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares