শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের জন্য টিউলিপ ফুল সহ টিউলিপ হোটেল শুভ উদ্ভোধন 

তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের জন্য টিউলিপ ফুল সহ টিউলিপ হোটেল শুভ উদ্ভোধন 

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)  প্রতিনিধি  : তেঁতুলিয়া পর্যটকদের জন্য এবার হোটেল চালু হলো টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায়। এখন থেকে পর্যটকরা টিউলিপ বাগান দেখতে এসে এ হোটেলে খেতে পারবেন স্থানীয় নানান প্রদের খাবার। মিলবে তেতুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। ইচ্ছে করলে পর্যটকরা রাত যাপন করে সকালের শিশির ঝরা ফুটন্ত টিউলিপ দেখতে পারবেন।
মঙ্গলবার বিকেলে দর্জিপাড়ায় পর্যটকদের জন্য হোটেলটি উদ্বোধন করেন ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড.সেলিমা আখতার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইএসডিও’র সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর আইনুল হকসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।
আয়োজকরা জানান, টিউলিপের একখন্ড নেদারল্যান্ড হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম দর্জিপাড়া। গত বছর প্রথম ৪০ শতক জমিতে টিউলিপ চাষ হলে তা দেখতে প্রচুর পরিমানে পর্যটকদের আগমন ঘটে এ এলাকায়। গতবারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার দুই একর জমিতে এক লাখ টিউলিপ রোপন করা হয়েছে। টিউলিপ দেখতে আসা পর্যটকদের সেবার জন্য নেয়া হয়েছে কিছু নতুন উদ্যোগ। এসব উদ্যোগের মধ্যে হোটেলে থাকা-খাবার ব্যবস্থা ও যানবাহনের ব্যবস্থা।
এ বছর ১০ প্রজাতির টিউলিপ লাগানো হয়েছে। প্রজাতি ও রংগুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল),  ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ),   ষ্ট্রং গোল্ড (হলুদ),  জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)। দশ প্রজাতির এসব টিউলিপ রাজকীয় সৌন্দর্য ছড়াবে।
জানা যায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র উদ্যোগে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের অর্থায়নে দুই একর জমিতে লাগানো হয়েছে  টিউলিপ ফুল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ঘুরতে এসে পর্যটকদের সেবা দিতে বাগান সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য বাগানে জায়গায় জায়গায় বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা সেখানে বসে টিউলিপের মোহনীয় রূপ উপভোগ করতে পারবেন। ছবি তুলতে ও ফুল কিনে প্রিয়জনদের উপহার দিতে পারবেন।
বাগান ঘুরে দেখা যায়, ফুল ফুটতে শুরু করেছে। বাগানের বেশ কিছু সারিতে কলি ফুটে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।  বাগানের মাঝখানে চতুর্ভুজ তৈরি করে সবুজ গমের চারার ভেতর মাঝখানে গোলবৃত্ত তৈরি করে টিউলিপ রোপন করে পতাকা তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি অন্যরকম দৃশ্য মনে হবে। বিশেষ করে ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাস জুড়ে এখানকার আচার-অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাঙাবে এ টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোন পর্যটকদের। পর্যটকরা নির্ধারিত ফি প্রদান করে বাগানে প্রবেশ করে ভিনদেশি টিউলিপীয় সৌন্দর্যে মোহিত হতে পারবেন।
টিউলিপ শীত প্রধান অঞ্চলের একটি মাধুর্যময় ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডস’র ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভূক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য শংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবি ও শীত প্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।
ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন,  উত্তরাঞ্চলের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে আমরা ইকো ট্যুরিজম হিসেবে দর্জিপাড়া গ্রামে দুই একর জমিতে টিউলিপ রোপন করেছি। এ বছর বড় পরিসরে টিউলিপের চাষ শুরু করেছি।  ফুল চাষে যারা দরিদ্র চাষিরা কাজ করছে তারাও স্বাবলম্বী হবে। বিশেষ করে পর্যটকদের সেবা প্রদানে এখানে টিউলিপ হোটেল দেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পর্যটক এখানে আসবেন, তারা হোটেলে স্থানীয় ঘরোয়া রান্না হিসেবে হাঁস-মুরগী, কবুতর মাংস, লাফা শাকের ঝোল, আলুর ভর্তা, শীদলের ভর্তাসহ তেঁতুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো এখানে খেতে পারবেন। তারা চাইলে রাত যাপন করতে ইএসডিও মহানন্দা কটেজসহ এখানেও থাকতে পারবেন।
৩৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares