বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঝালকাঠি জেলা করাগারের লাগামহীন দূর্নীতি,জিম্মি বন্ধীরা!

ঝালকাঠি জেলা করাগারের লাগামহীন দূর্নীতি,জিম্মি বন্ধীরা!

গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি:: ঝালকাঠি জেলা কারাগারে লাগামহীন দুর্নীতির মহাচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে আসামি ও কয়েদিরা। ঝালকাঠি জেলা কারাগার এ যেন এক দূরনীতির আতুর ঘর। কারা অভ্যšত্মরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বড় একটি ক্ষেত্র হলো কারা ক্যান্টিন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও বন্ধীদের সরকারি খাবারের নিয়ম তোয়াক্কা না করে কারাকর্তিপক্ষ নিুমানের খাবার দিচ্ছে যা,বন্ধীদের খাওয়ার উপযোগী নয় যে,কারণে কারাকর্তিপক্ষের ইচ্ছে-মত হাঁকানো মূল্যে কারা ক্যান্টিনের খাবার ক্রয়করে খেতে হয় বন্ধীদের। এক কথায় কারাকর্তিপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বন্ধীরা। অপরদিকে করোনার অজুহাতে বন্ধীদের সাথে ১৫দিন পরপর স্বাক্ষাত ও ৭দিন পর ফোনে ১০মিনিট করে কথা বলার নিয়ম করে কারা কর্তিপক্ষ। কিন্তু কারা কর্তিপক্ষকে প্রতিস্বাক্ষাতে দুই হাজার টাকা নজরানা দিলেই প্রতিদিন স্বাক্ষাত মেলে এমন অভিযোগ বন্ধীদের স্বজনদের। এসব অভিযোগ ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো.আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে জেলার মো.আক্তার হোসেন যোগদানের পর থেকেই জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে লাগামহীন এ দূরনীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অভিযোগে আরো জানাজায়, কারা ক্যান্টিনে গরুর মাংশের কেজি বিক্রি হয় ১৬শ টাকায় এরপর রান্নার খরচসহ গুনতে হয় ২২শ থেকে ২৪শত টাকা। এরকম প্রতিটি পণ্য ক্রয় করতে হয় মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ দিয়ে। এ দূরনীতির টাকা জেলার আক্তার হোসেন নিজেই হাতিয়ে নেন।
ঝালকাঠি জেলা কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সারা দেশ থেকে যার একটা অংশ কারা অধিদপ্তরেও যায়। যে কারণে তাদের তদারকি না থাকায় জেলা কারাগারটি দূরনীতির স্বর্গরাজ্যে পরি-নত হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি-পাওয়া মো.জসিম হাওলাদার,বাচ্চু,রনি,শুভসহ কয়েকজন বন্ধীদের সাথে কথা হলে তারা জানান,সাক্ষাৎ বাণিজ্য, কারা হাসপাতালের সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ বাণিজ্য এবং জামিন হলে দ্রুত মুক্তির বাণিজ্যের নামেও বিপুল অঙ্কের ঘুস বাণিজ্য করে আসছে জেলার আক্তার হোসেন। বন্ধীরা কোন প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নির্যাতন ও সেলে আটক রাখা হয়। যে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না।
কারাগারের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন চলমান থাকলে কারা অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলার অবনতি যে কোনো সময় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যান্টিন থেকে বিক্রীত মালামালের তালিকা পিসি কার্ডে মূল্যসহ অবশ্যই লিপিবদ্ধ করার জন্য দাবি জানান কয়েকজন বন্ধী।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো.আক্তার হোসেন শেখ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি যোগদানের পর এরকমরে কোন ঘটনা নেই। তবে আমি গত এক সপ্তাহ ছুটিতে ছিলাম তখন দায়িত্বে ছিলেন মো.মিজানুর রহমান তখন হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। জেলা কারাগারের একের পর এক লাগামহীন দূরনীতির কথা তুলে ধরলে তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায় প্রতিবেদকের সাথে কুশল বিনিময় করার প্রস্তাব দেন তিনি। এরপর জেলা কারাগারের গুণকীর্তন করে বলেন,জেলা প্রশাসক মহোদয়,এডিসি মহোদয়,মেয়র মহোদয়, পিপি মহোদয়, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মহোদয় তারাও জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন। তাদের কাছে জেনে নেবেন। তারাতো মাসে একবার পরিদর্শনে যান এবং বন্ধীরা ভয়ে কথা বলতে পারেন না। প্রতিদিনের দূরনীতি তারা কি করে জানবেন,এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পরেননি তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা কারাগারের জেল সুপার মিলন চাকমা বলেন, এরকমের অভিযোগ আমিও শুনেছি। আমি আমার মত করে সতর্ক করেছি। বন্ধীরাও ভয়ে হয়তো মুখ খুলছে না। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোন ব্যবস্থা নিতে পার ছিনা। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। এর আগেও আমি এসকল দূরনীতির বিষয় মৌখিক ভাবে শুনেছি। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না থাকায় তেমন কিছু করার ছিলও না। তবে আমি কারা কর্তিপক্ষকে সতর্ক করে দূরনীতি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।

৪০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares