বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উমেদার খলিলের ভাগ্য বদল করে দিয়েছে পিআইও অফিস

উমেদার খলিলের ভাগ্য বদল করে দিয়েছে পিআইও অফিস

তানোর প্রতিনিধি: প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উমেদার খলিল। পিআইও অফিসের উমেদার হলে কি হবে, পিআইও অফিসের কারিশমায় ব্যাপক ভাবে ভাগ্য বদল হয়ে গেছে তার। হবেই না কেন উমেদার হলেও তিনি অফিসের কর্নধর বলেই সবাই জানে। উমেদার হলে কি হবে সরকারী লাল রংয়ের হাঙ্গ  বাইকে অফিসে যাতায়াত থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্প দেখভাল বিল তৈরি কোথায় কি দিতে হবে বা লাগবে সেটা খলিল ছাড়া অসম্ভব। যেন তিনিই এক প্রকার অফিস নিয়ন্ত্রক। কামিয়েছেন কাড়িকাড়ি টাকা, হয়েছেন সম্পদের মালিক, করেছেন আলিশান পাকা বাড়ি। এসব মাত্র ১৫ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে যেন উমেদার খলিল আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। বলছিলাম রাজশাহীর তানোরে প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসে উমেদার হিসেবে কর্মরত খলিলের কথা। তার বাড়ি উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন(ইউপির) আড়াদিঘি গ্রামে। অবশ্য গ্রাম বাসী তাকে ডিসি এসপি হিসেবেই জানেন। কারন গ্রামে সরকারী কোন কাজ খলিল ছাড়া হতেই পারে না। আবার তাকে তুষ্ট করতে না পারলে ভাগ্যে কিছুই জুটবে না। এই খলিলের অন্যের কামলা দিয়ে জীবন চলত। খেত নাসির বিড়ি। আসলে বিধাতা কার কি ভাবে কপাল খুলে দেয় বলা মুসকিল তো। এখন সেই খলিল নাসির বিড়ি তো দুরে থাক ব্যানসন সিগারেট ছাড়া চলে না। হাং বাইক ব্যানসন সিগারেট না হলে বে মানান। এতই অবৈধ পথে টাকা কামিয়েছেন যে তার শ্যালককেও পিআইও অফিসের মধু গিলতে রেখেছেন। তারও চলাফেরা অফিসারের মতই। ফলে উমেদার খলিলের সম্পদ ও কাড়িকাড়ি টাকার মালিক বনে যাওয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি তুলেছেন তার গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, বিগত ২০০৩ সাল অথবা ২০০৪ সালে তৎকালিন বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন ( পিআইও) অফিসে উপজেলার তালন্দ ইউপির আড়াদিঘি গ্রামের খোদাবক্সের পুত্র খলিল কে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিএনপি নেতা ও ওই সময়ের মেম্বার শামসুদ্দিনের
তদবিরে উমেদার হিসেবে  কাজ করার সুযোগ দেন । এর কয়েক বছর পর থেকেই খলিলের ভাগ্য বদল হওয়া শুরু হয় এবং এক প্রকার অফিস নিয়ন্ত্রনে নেয় খলিল। সেই থেকে অদ্যবদি খলিল অফিসের সকল কাজের নিয়ন্ত্রক। দীর্ঘ দিন উমেদারের চাকুরী করলেও  অনিয়ম দুর্নীতি কিভাবে করতে হবে, কিভাবে ঢাকতে হবে সবই তার জানা। একজন উমেদারের কাজ কর্মকর্তাদের চা খাওয়ানো আয় বারাতি করা। দৈনিক যত সামান্য মুজুরির মাধ্যমেই উমেদারের রোজগার। কিন্ত খলিল সেই উমেদার না, উপজেলায় যত প্রকল্প চলে সব দায়িত্ব খলিলের। কোন প্রকল্পে কত পারসেন নিতে হবে, কাকে কিভাবে দিতে হবে তিনিই সব। সম্প্রতি শারদীয় দূর্গা পুজায় সরকারী ভাবে প্রতিটি মন্দিরে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়। উপজেলায় ৫৯ টি মন্দির রয়েছে। ডিও প্রতি খলিলকে দিতে হয়েছে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে। তবে এসব টাকা উমেদার খলিলের চা খরচ হিসেবেই দেন মন্দির কমিটি বলেও নিশ্চিত করেন অনেকে। তাহলে ভাবুন একজন উমেদারকে চা খরচ হিসেবে যদি ডিও প্রতি এপরিমান টাকা দিতে হলে প্রকল্পের কাজে কত দিতে হবে।
আড়াদিঘিগ্রামের বাসিন্দারা জানান, খলিল চাকুরী পাওয়ার আগে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করত এবং নাসির বিড়ি খেত। কিন্তু কি এমন চাকুরী পেল যে, গ্রামের মধ্যে অন্যতম ধনী ও টাকার মালিক হয়ে গেলেন। সে তানোর পৌর সদরে ফেয়ার সার্ভিস স্টেশন সংলগ্ন জায়গা কিনেছেন ১০ লাখ টাকা দিয়ে, তারগ্রামের মেম্বার শামসুদ্দিনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে ১ বিঘা ১৩ কাঠার মত জমি কিনেছেন। তিনি এভাবে ১২ থেকে ১৪ বিঘা জমির মালিক। অবশ্য তার দাদির জমি পেয়েছিল প্রায় ৩ বিঘার মত। প্রতি বছরে ২৫ থেকে ৩০ বিঘা আলুর চাষাবাদ করেন এবং অগ্রিম পেড বুকিং। এসব দৃশ্যমান সম্পদ, তবে অদৃশ্য কত আছে সেটা অজানা।
সুত্র মতে, একজন উমেদার কিভাবে এত সম্পদের মালিক হন এবং তিনি কিভাবে সরকারী বাইকে অফিস করেন এমন প্রশ্ন খোদ অফিস পাড়ায়। শুধু অফিস না বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও হয় তার মাধ্যমে। খলিলের গ্রামে সরকারী বাড়ী, টিন দেওয়ার নামেও আদায় করেন হাজার হাজার টাকা বলেও অহরহ অভিযোগ। আবার এসব নিয়ে কেউ মুক খুললে তার পরিনাম হয় ভয়াবহ। এজন্য কেউ মুক না খুললেও প্রচুর ক্ষোভ তার উপরে। এমনকি চলতি মৌসুমে আলু রোপনের জন্য প্রয়োজনীয় সার মজুদ করে রেখেছেন খলিল।
উমেদার খলিলের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিশ্রম করলে তার সফলতা পাওয়া যায়। আপনি সরকারি বাইক নিয়ে অফিস ও দেদারসে চালাতে পারেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, আমি যা কিছু করি স্যারের হুকুমে বলেও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন।
পিআইও প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম জানান, খলিল উমেদার হলেও সে কাজ বুঝে ভালো। আর সরকারী বাইক চালায় তার নিজের খরচে বলে দায় এড়িয়ে যান। একজন উমেদার অফিসারের গাড়ী অফিস সময় ছাড়াও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে একই ধরনের কথা বলেন এই কর্মকর্তা।
৯০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares