শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে পাখির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত

ডোমারে পাখির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত

রবিউল হক রতন,ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ  ডোমারে পাখির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত এলাকা বাসি। পাখিগুলো দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজারো মানুষের সমাগম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জানা পাখির মধ্যে সাদাবক, ডাহুক, রাতচড়া, পানকৌড়ি, কোড়া, শ্যামা,দোয়েল,কাক,ঘুঘু ,শালিক, বাবুইসহ নাম না জানা লক্ষ্যধিক অতিথি পাখি বাসা বেঁধেছে সেই বাঁশঝাড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়  উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মজিদুল ইসলাম(৫১) ওরফে শেখ সাহেবের বাড়ির বাঁশঝাড়ে নাম না জানা লক্ষ্যধিক অতিথি পাখির আবাস ভূমি । পাখির আবাসন হওয়ায় এলাকার মানুষ ঐ বাড়িটিকে পাখিলাগা বাড়ি হিসেবে নামকরণ করেছেন।ওই এলাকায় এমন কোন মানুষ নেই যে পাখিলাগা বাড়ির কথা বললে ছোট থেকে বড় সকলেই এক নামে তাকে চিনে।সকালবেলা পাখিদেরকলকাকলীতে এলাকার চারপাশের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে,বাঁশঝাড়ের মাঝখানে উঁকি দিয়ে বেড়ে উঠেছে কয়েকটি কড়াই গাছ বিকেলের সোনালী রোদে কড়াই গাছের ডালে বসে থাকা পানকৌড়ি পাখির পালক জ্বলজ্বল করছে, এমন দৃশ্য চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেনা। সন্ধ্যা হওয়ার মুহূর্তে পাখির কিচির মিচির শব্দে পুরো এলাকা জুড়ে মনে হয় এটা পাখিদের  অভআশ্রম।
এবিষয়ে কথা হয় বাড়ির মালিক মজিদুল ইসলাম ওরফে শেখ সাহেবের সাথে তিনি বলেন, আমার দাদার বাবা থেকে শুরু করে আমার বাবার আমল আর এখন আমার আমল পর্যন্ত প্রায় ২ শত বছর ধরে এই পাখিগুলো আমাদের এখানে আশ্রয় গ্রহণ করে দেশ বিদেশের নাম না জানা বাহারী রঙের অতিথি পাখিরা এখানে বসবাস করছে।এরমধ্যে ফাল্গুন মাসের দিকে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে এবং ফাল্গুন মাস থেকে শুরু করে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই আট মাস এখানে থেকে পাখিরা ৩ বার বাচ্চা প্রসব করে আশ্বিনের শেষের দিকে চলে যায় এবং পূর্ণরায় আবার ফাল্গুন মাসের শুরুতেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা এখানে এসে বাসা বাঁধে। অতিথি পাখিদের সাথে আমাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এমন সখ্যতা গড়ে উঠেছে দেখলে মনে হয় তারা আমাদের পোষা প্রাণী। ঘরের আঙ্গিনা থেকে শুরু করে বিছানা পর্যন্ত সবজায়গায় তাদের চলাফেরা এবং নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করে বেড়াচ্ছে। তবে ঝড় বৃষ্টির সময় আমাদের বাড়ির পুরো ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে তখন আমরা সকল ঘরের দরজা জানালা খুলে দেই। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের এখানে দীর্ঘদিন ধরে নানা জাতের  অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে সেই দিক বিবেচনা করে এই এলাকাটিকে সরকারি ভাবে পাখির অভআরণ্যে ঘোষণা করা দরকার। তাছাড়া আমাদের ৩ একর জমির উপর এই পাখিদের বসবাস, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার পাখি প্রেমী হাজারো মানুষের সমাগম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এজন্য সরকারি কোন অনুদানের মাধ্যমে ঝড়বৃষ্টির কারণে পাখিদের নিরাপদের জন্য একটি ঘর এবং পাখি দেখতে আসা মানুষদের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা খুবেই প্রয়োজন হয়ে দ্বাড়িয়েছে, সরকারি কোন কর্মকর্তা যদি এই সহযোগিতাটুকু করেন তাহলে হয়তোবা আমাদের পরিবার উপকৃত হইতো। আপনাদের মাধ্যমে আমার একটা দাবী জানাচ্ছি, ঘরের চেয়েও আরেকটি বড় বিষয় হলো সরকারি ভাবে যদি এই এলাকায় মাইকিং এর মাধ্যমে ঘোষণা করা যেত কেউ যেন এই অতিথি পাখি স্বীকার না করে, অথবা এই এলাকার বিভিন্ন মোড়ে বা রাস্তার ধারে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্যে হিসেবে ঘোষণা প্রদান করেন তাহলে আমরাও উপকৃত হইতাম।
 সরকারি ভাবে অনুদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন ডোমার উপজেলার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার বরাবরে পাখিদের গোসলসহ পানি খাওয়ার জন্য একটি পুকুর খনন এবং গাছ লাগানোর সহায়তার জন্য আবেদন করি তখন তিনি নিজেই সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে সবকিছু দেখে পুকুর খনন, গাছ লাগানো এবং শ্রমিকদের মজুরিসহ ১লক্ষ ৫ হাজার টাকার অনুদান দিয়েছিলেন। তখন থেকে আজবধী আর কোন সরকারি অনুদান পাইনি।
 পাখিদের আবাসন,খাওয়া এবং গোসলের অসুবিধার কারণে পাখি গুলোকে আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পাখি গুলোকে নিরাপদ অভআরণ্য, খাওয়া ও গোসলের জন্য আরো ২/৩ টা পুকুর খনন করা দরকার এবং পাখির নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আরো গাছের চারা লাগানো প্রয়োজনের পাশাপাশি শিকারিরা যেন রাতে পাখি শিকার করতে না পারে সেজন্য চারদিক আলোকিত করার জন্য সোলারের ব্যবস্থা করা হলে পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয় পাবে।এখানে পাখিরা প্রায় ২ শত বছর ধরে নিরাপদে বসবাস করছে।পাশ্ববর্তী এলাকার ফাহিম দিনে ও রাতে ফাঁদ বসিয়ে পাখি গুলো শিকার করে।এভাবে সে প্রতিদিন ফাঁদ বসিয়ে শত শত পাখি শিকার করছে প্রতিবেশী মিঠু ওরফে বেনাই এর ছেলে ফাহিম(১৬)  নিষেধ করতে গিয়ে গত ২৫-০৮-২০২২ইং তারিখে ফাহিম সহ ওর দাদা বাবলু হোসেন, চাচা আপেল আমার ছেলে সাকিল এবং আমার ভাইকে মারপিট শুরু করে। এমতাবস্থায় আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রমিজ আলম এর ফোনে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করি।এরপর ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশক্রমে চিলাহাটি তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই হামিদুল ঘটনাস্থলে এসে মৃত পাখি এবং ফাঁদ গুলোর ছবি তুলে নিয়ে যায় তিনি চলে যাওয়ার পর তারা দলবদ্ধ হয়ে আবারো আমার পরিবারের লোকজনকে মারপিটসহ প্রানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।এরই প্রেক্ষাপটে আমি গত ০৮-০৯-২০২২ ইং তারিখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করি।বিষয়টি এখনো ইউএনও মহোদয়ের নিকট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।আমি আপনাদের মিডিয়ার সরনাপন্ন হয়েছি পাখিগুলো রক্ষার স্বার্থে আমি এর সঠিক বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
এবিষয়ে কথা হয় কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসসি অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য বর্তমানে দেখতে পাওয়া বড়ই কঠিন। সকাল সন্ধ্যায় হাজারোও পাখির কলতানের শব্দ অন্য রকম এক আবহ তৈরি করে।আর তা খুবই আনন্দদায়ক ও মনোমুগ্ধকর। পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই পাখিদের প্রতি সবাইকে সহনশীল হতে হবে। পাশাপাশি পাখি গুলোর নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে।

এবিষয়ে উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্চ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, আমি সরেজমিনে পাখিগুলোকে দেখার জন্য গিয়েছিলাম, সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবাসস্থল প্রয়োজন। এ ব্যপারে আমি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি ওনারা সরেজমিনে পরিদর্শন করার সম্মতি ঞ্জাপন করেছেন।এছাড়াও তারা আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে করে অবাধে কেউ পাখি স্বীকার করতে না পারে। পাশাপাশি আমি উক্ত  এলাকার সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথেও কথা বলেছি এবং তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন এখন থেকে কেউ এখানে পাখি স্বীকার করবেনা। ওই এলাকায় পাখির আবাসস্থল প্রাকৃতিক ভাবেই  গড়ে উঠেছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের অভায়াশ্রম নিরাপত্তায় অত্র এলাকার বিট  কর্মকর্তা সব সময় খোঁজ খবর রাখছেন। এর পরে ও যদি কেউ ফাঁদ পেতে বা অন্যকোন উপায়ে পাখি শিকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বণ্যপ্রানী আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে পাখিগুলো রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রমিজ আলম বলেন, আমি সেখানে গিয়েছি, পুজা শেষ হলে আবার যাব, তারপর আমরা সকলেই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের যদি কিছু করণীয় থাকে তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

৫৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares