শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রবাসে অনাহারে ৪শ্রমিক,প্রতারণার অভিযোগ ইব্রাহিম-স্বপ্না দম্পতির বিরুদ্ধে।

প্রবাসে অনাহারে ৪শ্রমিক,প্রতারণার অভিযোগ ইব্রাহিম-স্বপ্না দম্পতির বিরুদ্ধে।

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ৪ জন শ্রমিক ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পাড়ি জমায় সৌদিতে। নিজেদের শেষ সম্বল টুকু একই এলাকার  প্রবাসী ইব্রাহিম-স্বপ্না দম্পতির হাতে তুলে দিয়েও কাজ না পেয়ে প্রবাসে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

তবে এবিষয়ে কোন প্রকার দায়বদ্ধতা বা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখে বরং তাদের সাথে প্রতারণা করছে প্রবাসী ইব্রাহিম-স্বপ্না দম্পতি এমনি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের  পরিবারের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভালো কোম্পানিতে এসি রুমে কাজ, মাসিক বেতন ৭০ -৮০ হাজার টাকা, সৌদিতে পৌঁছানোসহ এক বছরের আকামা। এই প্রতিশ্রæতিতে প্রত্যেকের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা করে নেই প্রবাসী ইব্রাহিম-স্বপ্না দম্পতি। কিন্তু পরে আরো এক লক্ষ টাকার দাবি করে তারা । মোট ১৫ লক্ষ টাকা নেয় ৩ জনের কাছ থেকে এবং অপর জনের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকার পরিবর্তে ৫ কাঠা জমি (বসত ভিটা) নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেয় ইব্রাহিমের স্ত্রী স্বপ্না বেগম। এরপর তাদের পাঠানো হয় সৌদিতে। কিন্তু আকামা ছাড়াই বিভিন্ন কোম্পানিতে চোরের মত চার মাস কাজ করিয়ে এক মাসের বেতন দেওয়া হয় তাদের। এমতাবস্থায় তারা খেয়ে না খেয়ে প্রায় এক মাস যাবৎ গৃহবন্দী অবস্থায় আছে একটি রুমের মধ্যে।

প্রবাসে মানবেতর জীবন যাপন করছেন যারা তারা হলেন, বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হেদাতীপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিত এর ছেলে সোহেল আলী, সয়েন উদ্দিনের ছেলে হাকিবুল ইসলাম, আবুল কালামের ছেলে আসাদুল ইসলাম ও তহির উদ্দিনের ছেলে ফয়েজ উদ্দিন।

এ বিষয়ে ফয়েজ জানান, ৫ লক্ষ টাকার দিতে না পেরে ৫ কাঠা জমি স্বপ্নার নামে লিখে দিয়েছে সে। এবং আরও এক লক্ষ টাকা তাদের অন্যান্য খরচ হয়েছে। ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশে এসেছি ৪ মাস যাবৎ। দেশে মা হারা দুই ছেলে (শিশু সন্তান) কে ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে রেখে এসেছি। তবে আমি এখনো কোন কাজ পাইনি। কাজ নেই, বেতন নেই, রুম থেকে বের হতে পারিনা, এক বেলা খেয়ে আছি ১ মাস যাবৎ। বিষয়টা বারবার ইব্রাহিম কে জানালে সে কোন গুরুত্বই দিচ্ছেনা আমাদের কথায়। আমরা এখানে বিপদের মধ্যে আছি।

সোহেল, আসাদুল ও হাকিবুল এর পরিবারের লোকজন জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে ধার দেনা ও কয়েকটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ গেছেন তারা। ৫ মাসে মাত্র ১ মাসের বেতন পেয়েছে। এখন কোন কাজ নেই। এমনকি বাহিরে বের হতেও পারছেনা তারা। গত ৫ দিনে খাবারের জন্য মাত্র ১০০ টাকা দিয়েছে তাদের। বারবার বলার পরেও আকামা করে দিচ্ছে না ইব্রাহিম। বাড়িতে প্রতিনিয়ত পাওনাদারেরা টাকা চাইতে আসছে। বিষয় টা ইব্রাহিম এর স্ত্রীকে বললে সে খারাপ ব্যবহার করছে। এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য লোকজনদের কাছে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। আমরা সবাই ইব্রাহিম এর বড় ভাই প্রভাষক আবু তাহের এর হাতদিয়ে টাকা গুলো স্বপ্নাকে দিয়েছিলাম, এছাড়াও এলাকার সকলেই জানে লেনদেনের বিষয়ে। তারপরও স্বপ্না এখন বলে টাকা নেওয়ার প্রমান কি? যা ইচ্ছে করতে পারিস! আরো অনেক কথা। ইব্রাহিম ও স্বপ্নার কারণে আমরা ৪ টি পরিবার এখন ধংষের দিকে। একই এলাকায় মানুষ হয়ে তারা আমাদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করবে কখনো ভাবতেই পারিনি।আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

এ ব্যাপারে স্বপ্না বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ খবর রাখছেন। নিজের থেকে খাবার জন্য ওদের ৭০০ রিয়েল দিয়েছে সে। এরা চারজন একজোট হয়ে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমে তাদের ৬ মাসের আকামা করে দেওয়া হয়েছিল। নতুনভাবে আকামা করতে সময় এবং কিছু নিয়মের বিষয়। তারাহুরো করলে হয় বলেন? তারপরও তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, সোহেলের ভাই মিঠুন আমার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে (অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ) । আমি এবং আমার মেয়ের, বাসায় থেকে বের হতে পারিনা তার ভয়ে। এরপরও তাদের সহায়তা করার জন্য আমার স্বামী কে বলেছি।

এবিষয়ে এসআই (নিরস্ত্র) জয়দেব কুমার সরকার জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রবাসী ইব্রাহিম এর বাসায় গিয়ে৷  তার স্ত্রী স্বপ্নাকে বিষয়টি খুব দ্রæত সমাধানের বিষয়ে বলে এসেছি।

২০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS