ঘোড়াঘাটে গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত


আজহারুল ইসাম সাথী ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলায় গবাদিপশুর মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ও চর্মরোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুরবানির ঈদ সামনে রেখে এলএসডিভির প্রকোপ খামারি ও গৃহস্থদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ভাইরাসজনিত এই সংক্রামক রোগে প্রতিদিনই নতুন গরু আক্রান্ত হচ্ছে। লাম্পি স্কিন রোগে কশিগাড়ী খামার গ্রামে সিরাজুল ইসলামের একটি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক উদ্বেগে রয়েছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রণীর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। প্রাণীর নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়। প্রাণীর চামড়ার নিচে ফোসকা বা গুটি দেখা দিয়ে সেই স্থানের লোম উঠে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মুখ ও পায়ে ক্ষত হয় এবং চলাফেরা ও খাদ্য গ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত প্রাণীটি দুর্বল হয়ে রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে। উপজেলা কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই কম বেশি এই রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। আক্রান্ত গরুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রায় অর্ধশতাধিক গরুতে এলএসডির উপসর্গ দেখা গেছে। এর মধ্যে অল্প বয়সী ও সংকর জাতের গরু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত গরুর শরীরে চামড়ার ওপর গুটি গুটি ফোলা, জ্বর, গলা ফুলা, মুখ ও নাক দিয়ে লালারস ঝরার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। রোগের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন ছোট-বড় গৃহস্থরা ও খামারিরা। কশিগাড়ী খামারের মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৪-৫ দিন আগে আমার দুইটি বাছুর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শরীরে ঘা হচ্ছে, ঠিকমতো খেতে পারছে না। প্রতিদিন ওষুধ দিতে হচ্ছে, খরচ বাড়ছে। আশপাশেও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গরুগুলো কষ্ট পাচ্ছে, দুশ্চিন্তায় আছি। অপরদিকে দিনমজুর আশরাফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অভাবের সংসারে কাজ করে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে একটা গরু কিনেছিলাম। এখন সেই গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসায় এরই মধ্যে ২-৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। যদি সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হতো, এতটা বিপদে পড়তে হতো না। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২-৩ বছর বয়সী বা সংকর জাতের গরু। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সেই সাথে এলএসডি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, প্রচার, চিকিৎসা এবং টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এখনো কোনো গবাদিপশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, তবুও গৃহস্থ খামারিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গৃহস্থরা ও খামারিরা জানান, এভাবে রোগ ছড়াতে থাকলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই দ্রæত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ রোগে আক্রান্ত হলে যথাসময়ে চিকিৎসা দিতে হবে, খামার বা গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পশুকে মশারির নিচে রাখা এবং সুস্থ গরু থেকে আক্রান্ত গরুকে আলাদা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।