শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঠিকাদারের গাফিলতিতে আক্কেলপুরে উদ্বোধনের দুই বছর পরেও নির্মিত হয়নি নতুন ভবন

ঠিকাদারের গাফিলতিতে আক্কেলপুরে উদ্বোধনের দুই বছর পরেও নির্মিত হয়নি নতুন ভবন

মওদুদ আহম্মেদ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঠিকাদারের গাফিলতিতে উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের সুজালদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও শুরু হয়নি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ। ফেটে যাওয়া জরাজির্ণ পুরাতন ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে নিয়মিত পাঠদান। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান। এ ঘটনায় অভিভাবকদের পাশাপাশি শঙ্কিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের সুজালদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১১৩ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে এবং ৩জন শিক্ষক পাঠদান করেন। পুরাতন জরাজির্ণ ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষে দুইটি শিফটে আলদাভাবে চলে পাঠদান। এতে শিক্ষার পরিবেশও ব্যবহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন হয় গত ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর। উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের বর্তমান হুইপ এবং জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। যার চুক্তি মূল্য ছিল ৫৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৯’শ ৪১ টাকা। এটি বাস্তবায়নে এলজিইডি আক্কেলপুর। তবে এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়নি। নতুন ভবনের কাজ না হওয়ার কারণ অজানা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক সহ অন্যদের। বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রাখতে ফেটে যাওয়া জরাজির্ণ ভবনেই নিয়মিত চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় নষ্ট হওয়া সামগ্রীও রাখতে হয় শ্রেণিকক্ষে। এতে কমে এসেছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা।

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের ক্লাসে কিছুদিন আগে একটি বিষধর সাপ বের হয়েছিল। পরে স্যারদের সহায়তায় সাপটি মারা হয়েছিল। ঘড় ভাঙ্গা থাকায় আমাদের ক্লাস করতে ভয় লাগে।

ওই বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণি পড়–য়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আজিজুল হক বলেন, ‘ফেটে যাওয়া ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় হয়। উদ্বোধনের পরেও কেন ভবন হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই। তবে দ্রæত নতুন ভবন হওয়া জরুরী’।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার বসাক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ কেন হয়নি তা আমার জানা নেই। পুরাতন ফেটে যাওয়া ভবনে আমরা নিয়মিত পাঠদান করি। জায়গা না থাকায় শ্রেণি কক্ষের ভেতরেই রাখতে হয় বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত নষ্ট সামগ্রী। ফেটে যাওয়া ভবনের পাঠদান করতে অভিভাবকদের পাশাপাশি আমরাও আতঙ্কে থাকি’।

ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি উজ্জল হোসেন বলে, ‘ফেটে যাওয়া ভবনে পাঠদান অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুরাতন ভবনটি আমরা কয়েকবার সংস্কার করেছি। নতুন ভবন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার বলেছি’।

আক্কেলপুর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ নওগাঁ জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির সাথে কাজের চুক্তি হয় ২০২০ সালের ৮ই নভেম্বর ও কাজ সমাপ্ত হওয়ার সময়সীমা ছিল ২০২১ সালের ৮ই আগষ্ট। নতুন ভবনের কাজের জন্য বাজেট ছিল ৭৭ লক্ষ ১৪ হাজার ৪’শ ৯৪ টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সাথে ২৩.৭৮% কমে চুক্তি হয়েছিল ৫৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৯’শ ৪১ টাকা ৯৫ পয়সা। তাদের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এলজিইডি। তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ করে তাগাদা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। তাদের গাফিলতিতেই এখনো ওই বিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়নি।

এখন পর্যন্ত কাজ শুরু না হওয়ার বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মালামাল সংকটের কারণে এখনও কাজ এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি। দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে’।

আক্কেলপুর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী রকিব হাসান বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও ঠিকাদার কাজ শুরু না করায় তাকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির কোন উত্তর না পাওয়ায় তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে’।

১২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS