শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ফেসবুকে পরিচয়ে প্রেম, পরে শিক্ষিকাকে কলেজ ছাত্রের বিয়ের ৬ মাস পর জানাজানিতে ভাইরাল

ফেসবুকে পরিচয়ে প্রেম, পরে শিক্ষিকাকে কলেজ ছাত্রের বিয়ের ৬ মাস পর জানাজানিতে ভাইরাল

ইসাহাক আলী, নাটোর, ৩১ জুলাই- ফেসবুকে পরিচয় ডিভোর্সী কলেজ শিক্ষিকা নাহারের সাথে একই উপজেলার কলেজ ছাত্র মামুনের। প্রথমে দুজনার বিষয়টি গোপন রেখেই এক বছর চলে এই অসম প্রেম। পরে দুজনেই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ভুলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। দুজনের মতে অফিসে গিয়ে বিয়ে করলেও গোপনেই চলতে থাকে তাদের পরিণয়। তবে সম্প্রতি ৬ মাসের লুকোচুরি কাটিয়ে শহরে বাসা নিয়ে সংসার করছেন ওই দম্পত্তি। আর তারপরই বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনা আর সমালোচনায় রুপ নিয়েছে ৪৭ বছরের কলেজ শিক্ষিকা নাহারের সাথে ২২ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র মামুনের হোসেনের বিয়ে ও প্রেম কাহিনী। তবে বিয়েটি মানুনের পরিবার মেনে নিলেও মেনে নেয়নি নাহারের পরিবার। তাই নাহার এলাকা ও কর্মস্থল ছেড়ে এসে মামুনের কলেজ শহরে হওয়ায় শহরে বাসা নিয়েছেন ওই দম্পত্তি। এদিকে এলাকা ও পরিচিতজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন কাহিনী। এই বিয়েকে ঘিরে এখন নানা কাহিনীও বেড়িয়ে আসছে। অনেকেই এটাকে নেতিবাচক ভাবে দেখছেন। এক সন্তানের জননী নাহারের আগের সংসার না টেকায় নেতিবাচক গল্প চাউর হয়ে উঠছে। তবে প্রেমিক দম্পত্তির দাবি তারা সুখে আছেন সারাজীবন এভাবেই জীবন পার করতে চান।

নাটোরের গুরুদাসপুরে খাইরুন নাহার (৪৫) নামে একজন কলেজ শিক্ষিকাকে বিয়ে করেছেন মো. মামুন হোসেন (২২) নামের এক কলেজছাত্র। এই অসম প্রেম ও বিয়ের ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এলাকাবাসী, ওই দম্পত্তি ও পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে ফেসবুকে শিক্ষিকা খাইরুন নাহারের সাথে একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর ছেলে কলেজছাত্র মামুনের পরিচয় হয়। পরে তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে দুজনই বিয়ের সিন্ধান্ত নেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বরে গোপনে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের ৬ মাস পর সম্প্রতি তারা নাটোর শহরে একই বাসায় বসবাস করায় তা প্রথমে বন্ধু মহলে ও পরে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে জানাজানি হলে ছেলে মামুনের পরিবার বিয়েটি মেনে নিলেও শিক্ষিকা নাহারের পরিবার মেনে নেয়নি। শিক্ষিকা মোছা. খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গুরুদাসপুরের খামার নাচকৈড় এলাকার বাসিন্দা আর কলেজ ছাত্র মামুন হোসেন নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারী কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এর আগে ওই শিক্ষিকা নাহার প্রথমে বিয়ে করেছিলেন রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার এক ছেলেকে। পারিবারিক কলহে সেই সংসার বেশিদিন না টিকলেও সেই স্বামীর ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে একজন কলেজ পড়–য়া ও একজন স্কুলে পড়ে। বাবার বাড়ির পাশে আলাদা বাড়িতে বসবাস করতেন নাহার।

কলেজ ছাত্রকে বিয়ের বিষয়ে খাইরুন নাহার বলেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সেই সময় ফেসবুকে মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর আমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে ভালবাসা হয়। তারপর দু’জন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে করি। সমাজে কে কী বললো তা বড় বিষয় না। আমরা যদি দুজন ঠিক থাকি, তাহলে সব ঠিক। আমার পরিবার থেকে সম্পর্ক মেনে নেয়নি। মামুনের বাড়ি থেকে আমাদের বিয়ে মেনে নিয়েছে। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি অনেক সুখে আছি।

আর মামুন বলেন, খাইরুনকে বিয়ে করে আমি খুশি এবং সুখি। সবার দোয়ায় সারাজীবন এভাবেই থাকতে চাই।

এদিকে এই বিয়ের খবরে পক্ষ বিপক্ষে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মতামত দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষিকা জানান, চাকুরিজীবি স্বামী বাহিরে থাকায় কিছুটা বেপরোয়া জীবনযাপনের কারনে স্বামীর সাথে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে নাহারের। তারই জেরে সংসার ভাঙ্গে তাদের। পরে বিবাহ বিচ্ছেদের পর একাকিত্ব মানসিক কারণে অনেকটাই বেপরোয়া জীবন যাপন করতো সে। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার পর কলেজেও কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। এরই মধ্যে মামুনের সাথে পরিচয় ও প্রণয় হলে সে আশ্রয় হিসাবে সম্পর্কটাকে স্থায়ী করতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে মামুনের ব্যাপারে ব্যাপক নেতিবাচক সমালোচনা পাওয়া যায় এলাকা ও ক্যাম্পাসে। কলেজের আনুষঙ্গিক খরচের সাথে বাড়তি বদ কিছু অভ্যাসের কারণে অর্থ যোগান দিতেই চাকুরিজীবি মেয়েকে বিয়ে করেছে সে এমন কথা বলছেন কাছের মানুষজন।

তবে নাহার মামুনের প্রেমের পক্ষে অবস্থানকারী এটাকে অপপ্রচার আখ্যা দিয়ে খাইরুন-মামুনের ভালোবাসার পরিণতি বিয়ে যাতে স্থায়ী হয় সে ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ভাইরালও হয়েছে। এতে কেউ পক্ষে দোয়া আর্শিবাদ কামনা করে বাহবা দিয়েছেন আবার অনেকে কতদিন টিকবে তাদের সংসার তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে এ ব্যাপারে, খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইদ বলেন, খায়রুন নাহার আমার প্রতিষ্ঠানের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রোববার ফেসবুকের এই খবর দেখে প্রথমে ঘটনা জানলাম। ওই শিক্ষিকা বছর খানেক আগে বলেছিলেন, তিনি নাটোর শহরে বাসা নিবেন। এতটুকুই জানতাম। কলেজে আসলে ওই শিক্ষিকার সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।

১০৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares