শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল চিকিৎসক সংকটে কাঙ্খীত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা

ভোলা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল চিকিৎসক সংকটে কাঙ্খীত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা

ভোলা প্রতিনিধিঃ চিকিৎসক সংকটে ভোলা জেনারেল হাসপাতালে এসে রোগীরা কাঙ্খীত সেবা পাচ্ছেন না। এখানে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এতে দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছুটছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোলা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ এলাকা, এখানে ডাক্তাররা থাকতে চান না। কেউ কেউ যোগদান করেই আবার চলে যান। চলমান সংকট দূর করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক ও আন্তঃবিভাগে চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে ৬১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ২৫ জন। একজন সহকারী পরিচালক, ছয়জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ৯ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, অ্যানেসথেটিস্ট ৪ জন, রেডিওলজিস্ট ১ জন, ৯জন সহকারী রেজিস্ট্রার, দু’জন মেডিকেল অফিসারসহ ৩৬ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে দির্ঘদিন। নিউরোলজি ও কার্ডিওলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চিকিৎসক নেই। ২১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির ২৯টি, তৃতীয় শ্রেণির ২০টি ও চতুর্থ শ্রেণির ১৮টি পদ খালি পড়ে আছে বছরের পর বছর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীরা কোনো সেবাই পাচ্ছেন না।

স¤প্রতি বোরহানউদ্দিনের জয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক না থাকায় স্বজনরা তাঁকে বরিশাল নিয়ে যান। বুকের ব্যথা নিয়ে কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি হন নাসরিন আক্তার। ভর্তির সময় জরুরী বিভাগে ইসিজিসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে আনলেও চিকিৎসকের অভাবে ২৪ ঘণ্টায়ও রিপোর্ট দেখানো সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে নাসরিন আক্তারকে স্বজনেরা ঢাকায় নিয়ে যান। রফিকুল ইসলাম ও নাসরিনের মতো এমন ভোগান্তি এ হাসপাতালে প্রতিদিনের চিত্র।

হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে আসা কয়েকজনে জানান, এ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুই মেলে। জটিল সমস্যা নিয়ে আসা রোগীরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ রোগীকেই বরিশালের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় অনেক পরীক্ষাই বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচের পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

এদিকে প্রতিবছর হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার করা হয়, সেই সরঞ্জাম দিয়ে কি করে, কোথায় আছে সেগুলো, নাকি আদৌ কেনা হয়নি তা। ভোলা হাসপাতাল নিয়ে বিভিন্ন র্দূনীতির অভিযোগ থাকলেও এগুলো দেখবাল করার কেউ কি আছেন ?

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। যে কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিউরোলজি, কার্ডিওলজিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা উন্নয়ন বজায় রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে দ্বীপজেলার মানুষ সেবা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু চিকিৎসক পদায়নের পরই চলে যান। সেটি রোধ করতে পারলেই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা উন্নত হবে, উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ।

হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন নানা ধরনের রোগী আসছে। তাদের সামলাতে বেগ পেতে হয়। জনবল স্বল্পতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

৬৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares