সোমবার- ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রেলের জমি নিয়ে বিরামপুরে সংঘাত বাড়ছে

রেলের জমি নিয়ে বিরামপুরে সংঘাত বাড়ছে

মোঃ আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি ; বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের পার্বতীপুর কাচারীর ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলামের নিয়ম বহির্ভূত ভাবে দাগ নম্বর বিহীন এবং মৃত: ব্যক্তির নামে লাইসেন্স প্রদানের কারণে বিরামপুরে রেলের ভূমি লীজ গ্রহীতাদের মাঝে সংঘাত বাড়ছে। লাইসেন্সে দাগ নম্বর না থাকার কারণে এক লাইসেন্স গ্রহীতা অন্য লাইসেন্স গ্রহীতাদের জমি জবর দখলের চেষ্টা করায় প্রতিনিয়ত ঝগড়াঝাঁটি ও মারামারির ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামে বসবাসকারী মৃত: ইয়াছিন আলীর ছেলে আবু সাঈদ তার বাড়ির সামনে রেলের ১৪ শতক জমি লীজ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগ দখল করে আসছেন। তিনি দেবীপুর মৌজার দাগ নম্বর ৯৮৪এর অংশ ৭৯ নং প্ল্যানের ১৪ শতক জমির চলতি সনের খাজনাও পরিশোধ করেছেন। বাংলাদেশ গেজেটের রেলপথ মন্ত্রনালয় ভূমি শাখার প্রজ্ঞাপনের ২৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির নিজস্ব বাড়ি কিংবা পুকুর/জলাশয়ের সাথে একীভুত রেলওয়ের কোন জমির অবস্থান এমন হয় যে, তা অন্য কোন ব্যক্তিকে লাইসেন্স প্রদান করা হলে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে সে ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের অনুকুলে বিনা টেন্ডারে বছর ভিত্তিক লাইসেন্স প্রদান করা যাবে। ঐ গেজেটের ২৯নং ধারা অনুযায়ী আবু সাঈদের বাড়ির সামনের জমি আবু সাঈদ অগ্রাধিকার ভাবে লীজ পাবেন। সেই হিসাবে তিনি লীজ গ্রহণ করে শান্তিপুর্ণ ভাবে ভোগ দখল করে আসছেন।
ঐ গেজেটের লাইসেন্স চুক্তি নবায়ন সংক্রান্ত ৫০ নং ধারায় বলা হয়েছে, সংগত কারণে কোন ব্যক্তি তিন বঝর যাবত লাইসেন্স ফি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে ক্ষেত্রে প্রথম বছরের জন্য ১০ শতাংশ, ২য় বছরের জন্য ২০ শতাংশ এবং ৩য় বছরের জন্য ৩০ শতাংশ বর্ধিত হারে ফি প্রদানের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবেন। তবে তিন বছরের মধ্যে কোন লাইসেন্স ফি পরিশোধ করে লাইসেন্স নবায়নে ব্যর্থ হলে সেই লাইসেন্স বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু দেবীপুর মৌজার আঃ গফফারের মৃত: স্ত্রী লাইলী বেগমের তিন বছরের অধিক সময় ফি বকেয়া থাকার কারণে লাইসেন্স বাতিল না করে এক সাথে চার বছরের ফি জমা নিয়ে পার্বতীপুর কাচারীর ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম নিয়ম বহির্ভূত ভাবে লাইসেন্স নবায়ন করে দিয়েছেন। গেজেটের ধারা লঙ্ঘন করে সরকারি স্বার্থ হরণ করে এক সাথে চার বছরের ফি জমা নিয়ে মৃত: ব্যক্তির নামে লাইসেন্স প্রদান করায় এলাকাবাসীর মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। মৃত: লাইলী বেগমের ছেলে দ্বারা প্রভাবিত ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম মৃত: লাইলী বেগমের নবায়নকৃত লাইসেন্সে জমির দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর প্রদান করেন নাই। একারণে লাইলী বেগমের ছেলে সাইম মিয়া তার বাহিনী নিয়ে ঐ মৌজার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে লীজ ও ভোগদখলকৃত জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সাইম মিয়া ঐ মৌজায় রেলওয়ের কৃষি জমি নষ্ট করে বাণিজ্যিক ভাবে ২০/২৫টি দোকান ঘর তুলে তা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট মৌখিক ভাবে বিক্রি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এবার বৃদ্ধ আবু সাঈদের বাড়ির সামনের জায়গা দখলে নেমেছেন। জমি বেহাতের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য আবু সাঈদ পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার নিকট আবদেন করলে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নূরুজ্জামান আবু সাঈদের লীজকৃত জায়গার সীমানা নির্ধরণ করে দেওয়ার জন্য গত ০৬/০৫/২০২৪ তারিখে পার্বতীপুরের ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলামকে লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম সাইম বাহিনী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আবু সাঈদকে জায়গা বুঝে দিতে আসেন নাই। বিষয়টি নিয়ে সাইম বাহিনীর সাথে আবু সাঈদের কয়েকবার ঝগড়াঝাঁটি ও গত ১৮/০৬/২০২৪ তারিখে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আবু সাঈদের আহত মেয়ে শাহানাজ বেগম বিরামপুর থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন। পার্বতীপুরের কানুনগোর সাজ্জাদুল ইসলাম অবৈধ ভাবে লাইলী বেগমকে দাগ নম্বর বিহীন লাইসেন্স প্রদানের কারণে ঐ এলাকায় প্রতিনিয়ত সংঘাতের ঘটনা ঘটে চলেছে।
ভুক্তভুগি আবু সাঈদের পরিবার উপরোক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন। অপরদিকে ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য পার্বতীপুরের কানুনগোর সাজ্জাদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।

৮৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares