শুক্রবার- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মন্দিরে আগুন -এলাকা রণক্ষেত্র মধুখালীতে পিটিয়ে আপন দুইভাইকে হত্যা- পুলিশসহ আহত ৮

মন্দিরে আগুন -এলাকা রণক্ষেত্র মধুখালীতে পিটিয়ে আপন দুইভাইকে হত্যা- পুলিশসহ আহত ৮

সংবাদদাতা শাহজাহান হেলাল, মধুখালী(ফরিদপুর) ১৯ এপ্রিল ২০২ খ্রি.শুক্রবার: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন সার্বজনীন কালি মন্দিরে আগুন দেয়ার অভিযোগে ওই স্কুলে দ্বিতলা বিশিষ্ঠ ওয়াশ বøক ণির্মানে নিয়োজিত শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। উক্ত ঘটনায় উত্তেজিত জনতার পিটনীতে ঘটনাস্থলেই আপন দুই ভাইসহ ণির্মান শ্রমিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি মধুখালী থানার ওসিসহ ৭জন আহত হন।

হামলার ঘটনায় নিহত আপন দুই ভাই উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপের ঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল খান (১৭) ও আসাদুল খান (১৫)। এসময় জনতা পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং স্কুলের ভিতরে অবস্থান রত ণির্মান শ্রমিকদের উপর হামলা করে তাদেরকে নিহত ও আহত করে। আহতদের মধ্যে মধুখালী থানা পুলিশের একাধিক সদস্য রয়েছেন। জানা যায় প্রায় দুইমাস ধরে স্থানীয় কালি মন্দির সংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ওয়াশ বøক ণির্মানের কাজ চলছিলো। হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী কালি মন্দিরে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। মন্দিরের পূজারী তপতী মন্ডল বলেন, পূজা শেষে লাকড়ি নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে দেখেন শ্রমিকরা মন্দির সংলগ্ন নসিমন হতে মালামাল নামাচ্ছে এবং এর কিছুক্ষণ পরেই তারা মন্দিরে আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। তার পরপরই বিক্ষুদ্ধ জনতা সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় মধুখালী থানা-পুলিশ। তারা আহত শ্রমিকদের উদ্ধারের সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের জানান মাগরিবের নামাজ শেষে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবুর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান হাজার হাজার জনতা। তিনি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে ফোনে অবহিত করেন। পরবর্তীতে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় পুরো এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। সেখানে মধুখালী থানা পুলিশের পাশাপাশি বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ, ফরিদপুর জেলা পুলিশ, রাজবাড়ী জেলা পুলিশ, র‌্যাব-১০, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা রয়েছেন। তবে স্থানীয় লোকজনকে খুব একটা দেখা যায়নি।

পুলিশ কিছুক্ষণ পর পর ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রাথমিক অবস্থায় ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকরাও জনতার বাধার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে জেলা পুলিশের বড় বহর এসে তাদের উদ্ধার করে। জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, “একটি মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, মারপিট করেছে।”জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার জানান, তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে।

তারা শুক্রবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে।মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিরাজ হোসেন বলেন, মন্দিরে আগুনের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে স্কুলের ভিতর থেকে াচেতন অবস্থায় ৪শ্রমিককে উদ্ধার করে ফরিদপুর শেখ মুজিব কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষনা করে।এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ দিকে বিকেল ৫ টায় উপজেলার নিহতদের বাড়ীতে জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার ও জেলা পুলিশ সুপার মোর্শেদ —- লাশ নিয়ে পৌছালে হুদয়বিদারক সৃষ্টি হয় এলায় । হাজার হাজার শোকার্থ মানুষের ঢল নামে এলাকায়। দুই ভাইয়ের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

১১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS