মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহীতে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য,অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন

রাজশাহীতে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য,অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন

নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজশাহীতে আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার। প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা তাদের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন এ কোচিং বাণিজ্যকে। তারা এ প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারিভাবে প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ করা হলেও এ পর্যান্ত রাজশাহী জেলায় তার বাস্তবায়ন নেই।তাই অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্লে-গ্রুপ থেকে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি, অনার্সসহ উচ্চতর শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিংয়ের নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। অনেক কোচিং সেন্টার ৮০% থেকে ১০০% নম্বর বা এ+ পাওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে দেদারসে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।এ ছাড়া বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এমনকি ক্লাস শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা বিষয় ভিত্তিক প্রতি মাসে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কোচিংয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব না দিয়ে প্রাইভেটে কিংবা কোচিং সেন্টারে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এদিকে,শতভাগ পাশের নিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন। তারা পরীক্ষায় কৃতকার্য ভালো ফলাফলের আশায় এসব কোচিং সেন্টারে বেশি টাকা দিয়ে হলেও ভর্তি হওয়ার অসম প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজশাহী শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নের অলি-গলির মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠেছে শত শত কোচিং এবং প্রাইভেট সেন্টার। কোচিং বাণিজ্যের শিক্ষকরা বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা রাস্তার পাশের একটি ছোট কক্ষ ভাড়া নিয়ে উপরে বড় বড় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে চালু করা হয়েছে কোচিং সেন্টার। সেখানে ছোট কক্ষে কয়েকটি বেঞ্চ বসিয়ে ২৫-৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানান, অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়। কারণ স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ার ফলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। যারা স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ে না তারা এ বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। একাধিক অভিভাবক জানান, সন্তানদের প্রাইভেট পড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে পাঠাতে হয়। কারণ প্রাইভেট সেন্টারে পাঠালে সন্তানরা একটু বাড়তি যত্ন পায়। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষেই যদি শিক্ষকরা দায়িত্বসহকারে শিক্ষাদান করতেন তা হলে সন্তানদের প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে পাঠানোর দরকার হতো না।এদিকে, অনেক শিক্ষক সঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না এসে নিজস্ব কোচিং সেন্টারে ক্লাস করিয়ে থাকেন। বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্কুল কলেজের শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ করা হলেও এ পর্যান্ত রাজশাহী জেলায় তার বাস্তবায়ন নেই। এ বিষয়ে সচেতন ও অভিভাবক মহল অচিরেই অবৈধ প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার বন্ধের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

৫০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares