মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জয়পুরহাটে ঈদের দিনেও কান্নায় ভারি কবরস্থান..

জয়পুরহাটে ঈদের দিনেও কান্নায় ভারি কবরস্থান..

রনি আকন্দ জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ  জন্মিলে মৃত্যু আছে। এটাই চিরন্তন সত্য। প্রত্যেক পরিবারের কারো দাদা-দাদি, কারো মা-বাবা কিংবা ভাই-বোন বার্ধক্যসহ নানা কারণে মারা গেছেন। জীবিতদের দায়িত্ব তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় কবর জিয়ারত, দোয়া ও দান খায়রাত করা। স্বজনরা সময় সুযোগ অনুযায়ী কেউ শুক্রবার, কেউ বা শবে বরাত, শবে কদর, কেউ ঈদে ও মৃত্যু বার্ষিকীতে করব জিয়ারত ও দোয়া করে থাকেন। তবে ঈদের সময় কবর জিয়ারত সব চেয়ে বেশি দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় শেষে জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পারিবারিক কবরস্থানে অসংখ্য লোকজনকে কবর জিয়ারত ও দোয়া করতে দেখা যায়। শুধু পৌরসভা নয় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এই বিশেষ দিনে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় জিয়ারত করছেন। পাশাপাশি অনেকে আবার দান খায়রাত ও অসহায় লোকদেরকে খাবার খাওয়াচ্ছেন। অন্য সময়ের চাইতে এই দিনে বেশি কবর জিয়ারত করতে দেখা যায়। কারণ কিছু কিছু গল্প থাকে যা বলা যায় না। কোনো কোনো ছবি কাউকে দেখানো যায় না। অনেক প্রাপ্তির জীবনেও অনেক হারানোর গল্প থাকে। দুনিয়ার অনেক কিছু ফিরে পাওয়া যায় কিন্তু হারানো বা মৃতদের আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাই জীবিতরা সাধ্যানুযায়ী তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছেন। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় শেষে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত করতে দেখা যায়। এই দিনে কর্ম ব্যস্ত লোকেরা সবাই একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কবর জিয়ারত ও দোয়া করছেন।

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। সাধারণভাবে ঈদ মানে হচ্ছে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এক চিরায়ত প্রথা। এসব কিছুর পরেও কবরস্থানে অনেক আপনজন, পরিজনদের নীরব উপস্থিতি ঘটছে। শত কষ্ট সহ্য করে দু’হাত তুলে তারা মহান আল্লাহর কাছে মৃতদের শান্তি কামনায় দোয়া করছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কবরস্থান, মসজিদ মাঠ সংলগ্ন পুকুরপাড় সংলগ্ন কবরস্থানে মুসল্লিদের ভিড়। সবাই কবরস্থানের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মৃতদের জন্য, দোয়া ও মোনাজাত করছেন। এ সময় অনেককেই চোখের পানি ফেলে দু’হাত তুলে প্রিয়জনদের জন্য মোনাজাত করতে দেখা যায়।

কালাই পৌরশহরের পূর্বপাড়া গ্রামের রিদয় আকন্দ বলেন, আমাদের অনেক প্রিয়জন পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। তারা এখন কবরবাসী। তাদের জন্য দোয়া করতে মূলত এখানে আসা। কর্মব্যস্ত থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্বেও এখানে আসতে পারি না। তাই প্রতি বছর দুই ঈদে চেষ্টা করি এখানে আসতে। আমাদের বাড়ির ছোটবড় সবাই সম্মিলিতভাবে কবর জিয়ারত ও দোয়া করেছি।

লিটন, জামাল, মনোয়ার, আলেকসহ অনেকে বলেন, ঈদগাহ মাঠের পাশে কবরস্থান রয়েছে। এখানে দাদা-দাদি ও আত্মীয় স্বজনদের কবর দেওয়া হয়েছে। আমি প্রায় সময় সন্তানদের নিয়ে এখানে কবর জিয়ারতে আসি। আজকের ঈদের এই বিশেষ দিনে বাবা-চাচা ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কবর জিয়ারত করতে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

এ রকম আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় অমার সংবাদ এর। তাঁদের ভেতরে তোফাজ্জল আকন্দ বলেন, ‘আমার বাবা-মা, এক ভাই আর এক ছেলে এখানে শুয়ে আছেন। বলতে পারেন পুরো পরিবারই শুয়ে আছেন। এখানে এলে মনে হয় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’ বলতে বলতে চোখ মুছেন।

৭৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares