বুধবার- ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পঞ্চগড়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটসহ আটক ৩

পঞ্চগড়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটসহ আটক ৩

পঞ্চগড়: ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করার অভিযোগে এক ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।
পঞ্চগড় জেলা শহরে স্যামসাং শো রুমের তৃতীয় তলায় বাংলাদেশ কনজুমার রাইটর্স সোসাইটি নামের একটি ব্যানার টানিয়ে অফিস ভাড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল চক্রটি। এদিকে গত সোমবার (১ এপ্রিল) ভুয়া নথির মাধ্যমে জরিমানার একটি নথি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নজরে আসলে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও জেলার বোদা উপজেলার আমতলা কাজীপাড়া এলাকার মফিজুল ইসলাম (৫২), সংগঠনটির সহসভাপতি ও পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের ঝাকুয়াকালি এলাকার আমিনুল ইসলাম (৪৭) এবং সাধারণ সম্পাদক ও শহরের মসজিদপাড়া এলাকার সাদেকুল ইসলাম (৪৫)। তবে তিনজনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন আমিনুল ইসলাম।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও সম্পাদকসহ কমিটির ১০ সদস্য বিভিন্ন স্থানে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও জরিমানা আদায় করে আসছিলেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষের দোকানে অভিযান চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন টাকা।
গত সোমবার (১ এপ্রিল) পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় গ্রামে তাদের জরিমানা করা একটি রশিদ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে। একই রশিদে দেখা যায় পঞ্চগড় জেলা শহরের স্যামসাং শো রুম ভবনের তৃতীয় তলায় করেছেন তাদের অফিস।
জানা গেছে, সেখান থেকেই চলতো তাদের কার্যক্রম। মঙ্গলবার দুপুরে একই কায়দায় মাইক্রোবাস নিয়ে তারা অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় তাদের ৩ জনকে আটক করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী।
পরে বিকেলে তাদের পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার স্বাক্ষরিত পঞ্চগড় জেলা কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহসভাপতি লুপনা আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া পায়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক সোলেমান আলী, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, আইন বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাজিদা আক্তার ও জেসমিন আক্তার।
১০ সদস্যের এই ভুয়া ভ্রাম্যমান আদালত টিম গত সোমবার পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ২টি প্রতিষ্ঠানে ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করে টাকা আদায় করে।
পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় বাজারের দোকানদার ভুক্তভোগি তরিকুল ইসলাম বলেন, তারা ৫ জন একটি মাইক্রোবাসে করে আমাদের বাজারে আসে।
এ সময় নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আমাদের জানায় তাদের ২ লাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রথমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে চায়। পরে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা দিয়ে দ্রুত চলে যায়। আমাদের সন্দেহ হলে আমরা বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হই এরা প্রতারক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে আর কেউ গরিব মানুষের সাথে এমন অন্যায় করার সাহস না পায়।
বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও আটক মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। গত দুইদিন আগে অফিস ভাড়া করেছি। আমরা প্রাকটিস করছিলাম। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাদেরকে ছোট ছোট জরিমানা করেছি।
আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলেছেন যে আমরা ছোট খাটো জরিমানা করতে পারবো। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করছিল।
শুধু পঞ্চগড় নয় অন্য জেলাতেও এমনটি করেছে। তাদের সাথে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোন সম্পর্ক নেই। কখনোই ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরাই মামলা করছে। এখানে তাদের কোন কার্যালয় যেন না থাকে আমরা সেই ব্যবস্থা নেবো।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এ ঘটনায় থানার মামলার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। এছাড়া এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

১৮৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares