মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হাঁসের খামারে মহুবারের দিনবদল 

হাঁসের খামারে মহুবারের দিনবদল 

রানা ইসলাম বদরগঞ্জ রংপুর : রংপুরের বদরগঞ্জে দামোদপুর ইউনিয়নের চম্পাতলীর চাকলা গ্রামে হতদরিদ্র মহুবারের দরিদ্র ঘরে জন্ম গ্রহন করেন।৯ভাই বোনের মধ্যে মহুবার ছিল চতুর্থ।তখন তার বাবার সংসারে অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল।একবেলা খেলে আরেকবেলা খাবার জুটতো না সবার।প্রায় ১০বছর বয়সে মহুবার হোসেনের বাবা হযরত আলী মারা যান।পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা যাওয়ায় তারা অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হতো।তখন মহুবার বাধ্য হয়ে প্রতিবেশী থাক বাড়িতে পেটে ভাতে চুক্তি হয় ৩০০টাকা
সেখানে মহুবারকে প্রায় দিনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হতো। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে মহুবার হোসেন ধান ছেটে গ্রামে ভ্রাম্যমান চালের ব্যবসা করেন।অন্তত চার বছর এই ব্যবসা করে বেশ কিছু টাকা লোকসান হয় তার।তিনি মানুষের কাছে টাকা ধার নিয়ে চালের ব্যবসা শুরু করছিলেন। এসময় তিনি বিয়েও করেন।চালের ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। ব্যবসায় তার লোকসান পরিমান দাঁড়ায় অন্তত ৪ লাখ টাকা।পুঁজি হারিয়ে এবং পাওনাদারের চাপে ২০০৯ সালে তিনি রাতের অন্ধকারে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।
মহুবার বলেন,ঢাকায় গিয়ে প্রথমে কোন কাজ না পেয়ে বেকায়দায় পড়েন। পরে স্ত্রী মরিয়ম বেগমের পোশাক কারখানায় চাকরি জোটে।দুই ছেলে সন্তানকে রাখেন ঢাকার সদরঘাট একটি দর্জি দোকানে।তারপর তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতে থাকেন।
হাঁসের খামারে যেভাবে শুরু
মহুবার ও তার স্ত্রী দুই ছেলে ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আয় করতে শুরু করেন।মহুবার পরে তাদের আয়ের টাকা দিয়ে পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করে কিছু সঞ্চয় করতে শুরু করেন।সঞ্চয়ের প্রায় ৭ লক্ষ টাকা টাকা দিয়ে গ্রামে টিনশেড বাড়ি নির্মান করেন।২০২০ সালে করনোর সময় ঢাকায় সপরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েন।এতে সংসার পুনরায় টান পড়তে শুরু করেন।বাধ্য হয়ে সপরিবার ঢাকা থেকে গ্রামে চলে আসেন।মহুবার দিশেহারা হয়ে পড়েন কিভাবে তার সংসার চলবে সেই চিন্তায় তার কতরাত নির্ঘুম পার হয়ে যায়। এরপর মহুবার চিন্তা করে সংসার চালানো ভালো আয় হয় এমন কিছু করা।তখনই মহুবারে মাথায় হাস  পালনের কথা আসে।বাড়ির পাশে ১৮শতক জমি ইজারা নিয়ে ৫০০বাচ্চা কিনে শুরু করেন হাঁস পালন। পুকুর পাড়ে তৈরি করেন হাঁসের ঘর।
মহুবারের হোসেন বলেন, বর্তমানে তার খামারে হাঁস রয়েছে ১হাজার। এরমধ্যে ঘরে প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে ৫০০ট হাঁস। ৭০টাকা হালি হিসেবে বাড়ি থেকে ওই ডিম বিক্রি শুরু করেন।
মহুবার হোসেন জানান,খাদ্য সহ সব মিলিয়ে হাঁসের পিছনে দৈনিক খরচ চার হাজার টাকা। ৫০০ডিম বিক্রি করে প্রতিদিন পাচ্ছেন ৮হাজার ৭০০টাকা।এতে দেখা যায় যাবতীয় খরচ বাদে মাসে ডিম বিক্রি করেই তিনি বর্তমানে দৈনিক আয় করছেন ৪হাজার ৫৫০টাকা।এতে মাসিক লাভের পরিমাণ দাড়ায় ১লাখ ৩৬হাজার ৫০০টাকা।
বদরগঞ্জে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, হাঁসের খামার গড়ে মহুবারের সফলতার বিষয় আমরা জানি।একাজে আমরা সব সময় মহুবারকে উৎসাহিত ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।
১৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS