বুধবার- ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তেতুলিয়ায় নিজ বাড়িতে শিকলে বন্দী নুর

তেতুলিয়ায় নিজ বাড়িতে শিকলে বন্দী নুর

পঞ্চগড়: বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান নুর বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে একটা সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহানন্দা নদীতে নূড়ি পাথর উত্তোলনের কাজ করতেন নুর আলম (৪০)। পাথর উত্তোলনের মাঝে সীমান্ত অতিক্রম করায় আটক হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে নুর আলম।
ভারতে কারাবন্দী হয়ে জীবন কাটিয়েছে সে তিনতিনটি বছর। ৩ বছর পরে বন্দী দশা থেকে দেশে ফিরলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আবারো নিজ বাড়িতে ৭ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন কাটাচ্ছে নুর আলম। এক সময় পরিবারটি হাসিখুশি সেই ছোট্র সংসারে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নেমে আসে অন্ধকার।
ঘটনাটি ঘটেছে সীমান্তবর্তী সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়। মানসিক ভারসাম্যহীন নুর আলম উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের মৃত হকিকুল ইসলামের ছেলে।
পারিবারিক ভাবে জানা গেছে, বছর দশেক আগে-ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছিল নুর আলমের। সংসার জীবনে ৩ মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। এর মাঝে বিএসএফের হাতে আটকের পর দীর্ঘ ৩ বছরের অধীক সময়ের পর দেশে ফিরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এর মাঝে স্থানীয়দের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও স্ত্রীর উপর হামলা চালালে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শিকল বন্দী করে রাখা হয়। এতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন নুর আলমের।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা সংবাদ প্রতিক্ষনকে বলেন, চোখের আড়াল হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নুর আলম। এর মাঝে কোন কারণ ছাড়াই স্থানীয়দের উপর হামলার করেন সে।
কথা হয় নুর আলমের মা নুর নেহারের সাথে। তিনি সংবাদ প্রতিক্ষনকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে নুর ১০-১২ বছর আগে ভালো ছিল। নদীতে মা-ছেলে একসাথে পাথর উত্তোলনের কাজ করতে গেলে একসময় সে ভারতের ওপাশে ভুল করে চলে যায়। এতে বিএসএফ তাকে আটক করে জেলে পাঠায়। ভারত থেকে বন্দী জীবন শেষে দেশে ফিরেই পাগল হয়ে যায় আমার আদরের ছেলে। এখন তাকে ঘরে শিকল বন্দী অবস্থায় রেখে আমরা নিরুপায় হয়ে মানুষের দারে গিয়ে সাহায্য নিয়ে চলছি। যে বয়সে কাজ করে মাকে খাওয়াবে ছেলে, সে বয়সে ছেলেকে বন্দী রেখে কাজ করে খাওয়াতে হচ্ছে।
কথা হয় নুর আলমের সন্তানদের সাথে বলেন, যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকে বাবাকে পাগল অবস্থায় দেখছি। খুব কষ্ট হয় বাবার এমন দশা দেখে। অন্যদের মত আমাদেরও ইচ্ছে করে বাবার সাথে একটু ভালো ভাবে থাকতে।
এদিকে স্থানীয়রা বলছে,ভারতের জেল থেকে বের হয়ে লোকদের সাথে খারাপ আচরণের কারণেই তাকে শিকল বন্দী রাখা হয়েছে। পরিবারটি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে নুর আলম আবারো সুস্থ্য হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন সকলেই।
স্থানীয় প্রতিবেশী বর্ষা আক্তার, লিটন ইসলাম ও উসমান গণি সংবাদ প্রতিক্ষনকে বলেন, নুর আমার ফুফাতো ভাই দীর্ঘ ৭ বছর থেকে এমন অবস্থায় খুব কষ্টে আছে পরিবারটি। আয় রোজগারের লোক না থাকায় অনেক সময় অনাহারে দিন অতিবাহিত করে তারা। এর মাঝে আমরা স্থানীয়রা যতটুকু পারি তাদের সহায়তা করি। নুরকে শিকল থেকে বের করলে লোকদের উপর হামলা করে। টাকার অভাবে পরিবারটি নুরকে চিকিৎসা করাতে পারে নি। যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় নুর আলম আবারো সুস্থ্য হয়ে উঠবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি সংবাদ প্রতিক্ষনকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এর আগেও বিষয়টি অবগত হয়েছি। নুর আলম ভারসাম্যহিনতার কারনে লোকদের উপর হামলা করায় জনপ্রতিনিধীদের সিদ্ধান্তে পরিবারটি তাকে শিকল বন্দী করে রেখেছে। যতটুকু সম্ভব দারিদ্র পরিবারটির পাশে থেকে চিকিৎসার সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।

১৩৯ বার ভিউ হয়েছে
0Shares