মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে পারে মার্চে

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে পারে মার্চে

আরিফুল ইসলাম সিকদার বরকলঃ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে স্থানীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। মার্চ মাসে শুরু হয়ে কয়েক দফায় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। মার্চে প্রথম দফায় শতাধিক উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পরিষদের প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ওই পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী, এর মধ্যে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ নির্বাচন শুরু হয়ে পাঁচ ধাপে জুনে গিয়ে শেষ হয়।

এবারও পাঁচ থেকে সাত ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা, মার্চে রোজা শুরু ও এপ্রিলে ঈদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে ইসি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, উপজেলা পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকারের বিভাগ।

গ্রামীণ জনপদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্নে উপজেলা পরিষদই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। বেশির ভাগ উপজেলার মেয়াদ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে শেষ হবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের পদত্যাগের কারণে বেশ কয়েকটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সুত্র থেকে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।দ্রুতই পুরো কমিশন বসে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। কত উপজেলায় নির্বাচন হবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা হয় নি। তবে এই মুহূর্তে ৪০০ উপজেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলাগুলোতেও শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করার আশ্বাস দিয়েছে কমিশন। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে সুত্রটি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ইসির মাঠ কর্মকর্তাদেরও উপজেলা নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্য দিতে বলেছে ইসি। এসংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ১৭(১)(গ) ধারা অনুসারে পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের শপথ গ্রহণ ও প্রথম সভার তারিখের তথ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।

অন্যান্যবারের মতো এবারও প্রথম ধাপে শ খানেক উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে পারে। চার বা পাঁচ ধাপে ভোট শেষ করা হতে পারে। রোজার সময় তো ভোট করা হবে না। রোজার আগে প্রথম ধাপ ও পরে অন্য ধাপগুলো হবে। সে ক্ষেত্রে উপজেলার সংখ্যা ও ভোটের তারিখ কমিশন সভায় চূড়ান্ত হবে। ভোটের জন্য ২০০ উপজেলা প্রস্তুত রয়েছে। তবে কয় ধাপে, কয়টি উপজেলার বা প্রথমে কোন কোন উপজেলায় নির্বাচন হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

উপজেলা পরিষদ চালুর পর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও পরে উপজেলা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবারও উপজেলা পরিষদ চালু করে। ওই বছর তৃতীয়বার নির্বাচন হয়।

উক্ত প্রচলিত আইন অনুযায়ী মার্চে শেষ হতে যাচ্ছে বরকল উপজেলা পরিষদের মেয়েদকাল।বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন পার্বত্যচট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সমর্থিত বিধান চাকমা।এছাড়া একই সংগঠন থেকেই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শ্যামরতন চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুচরিতা চাকমা দায়িত্ব পালন করছেন।

অত্র উপজেলার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে অত্র পরিষদের দীর্ঘ পাচ বছর দায়িত্ব পালনকালের উল্লেখযোগ্য বিষয়াদি নিয়ে জানতে চাইলে তারা জানান,দীর্ঘ পাচ বছরে অত্র পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমার সব চাইতে বড় সফলতা ছিলো অত্র অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক কোন অরাজকতা সৃষ্টি হয় নি।তবে তিনি বরকলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন কোন দৃশ্যমান ভুমিকা রাখতে সফল হয় নি বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা।যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সড়ক যোগাযোগে পিছিয়ে থাকা বরকল উপজেলা আজও যেন সেই অবস্থানেই দাড়িয়ে আছে।তাছাড়া শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করনেও তাদের তেমন সফলতা চোখে পড়ে না।তবে উপজেলা পরিষদের বহুতল ভবন,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডরমিটরি, বাইরের টুরিস্টদের আকর্ষন করতে তিনটি রেস্ট হাউজ নির্মানের উদ্যোগ,বরকল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নির্মান,ভুষনছড়া কলেজসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের যথেষ্ট ভুমিকা পরিলক্ষিত হয়েছে।

বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা এবং আগামীর প্রস্তুতি নিয়ে অত্র উপজেলার চেয়ারম্যান বিধান চাকমার সাথে কথা বললে তিনি জানান,বিগত সময় আমার দায়িত্বপালনকালে আমাদের পরিধিরেখার মধ্যে থেকে বরকলের যথাসাধ্য উন্নয়ন করেছি।অত্র উপজেলা পরিষদের সীমিত বরাদ্দের মধ্যেই আমরা রাস্তাঘাট নির্মান ও সংস্কার, ব্রীজ নির্মান,বিভীন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত উন্নয়ন,প্রেসক্লাব,কর্মচারী ও অফিসারসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানসহ অসংখ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগামী প্রস্তুতি নিয়ে তিনি তেমন কোন মন্তব্য না করলেও তিনি জনতার ওপড় তার আস্থা আছে বলে তিনি জানান।

এছাড়াও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী হিসেবেও দল থেকে মনোনীত ব্যাক্তি ছাড়াও একাধিক সতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করার বিষয়ে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়।গতবার আওয়ামী লীগ হতে সবির কুমার চাকমা নির্বাচন করলেও এবার তার কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।তবে উক্ত সংগঠনটির একাধিক ব্যাক্তি ইতিমধ্যে প্রার্থী হবার জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।

৭৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares