বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মানসিক অশান্তিতে’ আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিলেন যবিপ্রবি’র গাড়িচালক

মানসিক অশান্তিতে’ আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিলেন যবিপ্রবি’র গাড়িচালক

ইয়ানূর রহমান : কর্মস্থলে মানসিক চাপ ও পারিবারিক অশান্তি সহ্য করতে না পেরে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জ্যেষ্ঠ চালক মফিজুর রহমান। গত ২৯ ডিসেম্বর গায়ে আগুন দেয়ার পর বছরের প্রথম দিন সোমবার রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যবিপ্রবি’র পরিবহন বিভাগের এক হেলপারের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নেয়ার ঘটনায় ও পারিবারিক মামলার অভিযোগে মফিজুর রহমানকে প্রায় ছয় মাস বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় তাকে গাড়ি চালানোর চালানো থেকে বিরত রাখা হয়। সম্প্রতি ‘জব অব নেচার’ পরিবর্তন করে তাকে অফিসের কাজে সংযুক্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়।

এদিকে দ্বিতীয় বিয়ের পর পারিবারিক অশান্তির মধ্যে পড়েন মফিজুর। সবমিলিয়ে মানসিক অশান্তিতে তিনি ২৯ ডিসেম্বর রাতে বাড়িতে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে আগুন নিভিয়ে তাকে যশোর
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে (১জানুয়ারি) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে মৃত্যুর আগে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেসবুক ভিডিওতে তিনি কর্মস্থলে ‘মানসিক নির্যাতনের’ অভিযোগ করেন এবং মারা গেলে যবিপ্রবি’র পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।

এছাড়া মফিজুরের গায়ে আগুন দেয়ার পর পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যবিপ্রবি’র ২২ জন চালক ও হেলপার। অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলাম বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। ড্রাইভার মফিজুর রহমানের চরিত্র ভাল না। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হেলপারের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। এখন তার দুই স্ত্রী। এসব
কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাকে গাড়ি থেকে সরিয়ে এনে পরিবহন পুলের গাড়ির সুপারভিশন করার দায়িত্ব দেয়া হয়। রেজিস্ট্রারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। মূলত পারিবারিক বিষয় নিয়ে কলহে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। পারিবারিক কারণে সে গায়ে আগুন দিতে পারে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসনে বলেন, একজন সহকর্মীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে ‘গ্রাউন্ডস্’ করা হয়েছে। শুধু মফিজুর নয়; তিনজন চালকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরও যেহেতু সে সিনিয়র ড্রাইভার এ কারণে তাকে গাড়িগুলোর অফিসিয়াল সুপারভাইজারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে তার অভিযোগ সঠিক নয়। এরপরও যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে এজন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে,ড্রাইভার মফিজুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মফিজুরের অপরিসীম অবদান ছিল । তাঁর অসুস্থতার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সহ সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে।

২৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS