শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হিমাগারের নৈরাজ্য

তানোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হিমাগারের নৈরাজ্য

তানোর প্রতিনিধি: আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে রাজশাহীর তানোরে হিমাগার কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের কঠোর নির্দেশনা ৫০ কেজির বস্তার উপরে আলু রাখা যাবে না। সেই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ৬৫-৭০ কেজির বস্তায় রাখছে আলু যা দিবালোকের মত পরিস্কার। কিন্তু মাঠে প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার কিংবা শ্রম অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে চলছে এমন নৈরাজ্য বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। এতে করে আলু চাষিরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে ৫০ কেজির বস্তায় রাখা এবং ১৫০ টাকা ভাড়ার দাবি তুলেছেন কৃষকরা।
আলু চাষিরা জানান, বিগত ২০১৮ সালের আগে হিমাগারে ৯০-১০০ কেজির বস্তা আলু রাখা হত। যা বহনে শ্রমিকদের জন্য প্রচুর কষ্টকর। সেই বিবেচনায় মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশ দেন ৫০ কেজির বস্তা রাখতে হবে মর্মে বিগত ২০১৭ সালে রায় দেন এবং পরিপত্র জারি করা হয়। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে কার্যকর করা হয়। ২০১৮-১৯ সালে হিমাগারগুলোতে শুরু হয় অভিযান। হিমাগারগুলো বাধ্য হয় ৫০-৫৫ কেজির বস্তা রাখত। এদু বছর কিছুটা নিয়ম মানা হলেও ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় হিমাগার কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেট।
খোজ নিয়ে জানা যায়, যখন ৯০-১০০ কেজির বস্তা রাখা হত তখন বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া নিত হিমাগার। কিন্তু ৫০-৫৫ কেজির বস্তাতেও নামমাত্র কমিয়ে ২৭০-২৮০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হত। হিমাগারের ভাড়া সিন্ডিকেটের কারনে কৃষকরাও ৬৫-৭০ কেজির বস্তায় রাখা শুরু করেন।
এক কৃষক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, বিগত ২০১৭ সালের আগে ১০০ কেজির বস্তায় ভাড়া নিত ৩০০ টাকা।  কিন্ত আদালত নির্দেশ দেন ৫০ কেজির বস্তা রাখার। কিন্তু ৫০ কেজির বস্তায় ভাড়া নিত ২৭০-২৮০ টাকা করে। তখন আমরা আন্দোলন শুরু করে দাবি জানানো হয় ৫০ কেজির বস্তায় ভাড়া নিতে হবে ১৫০ টাকা করে। কিন্তু হিমাগার কোনভাবেই ভাড়া কম নেই না। এজন্য আমরা দাবি তুলি ভাড়া না কমালে ৭০ কেজির বস্তা আলু রাখতে হবে। সে অনুযায়ী হিমাগার কর্তৃপক্ষ ৭০ কেজির বস্তা রাখা শুরু করে এবং ভাড়া ২৭৫-২৮০ টাকা করে নিত। কিন্তু চলতি মৌসুমে ৭০ কেজির বস্তায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া নির্ধারন করেছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষের দাবি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে প্রতি বস্তায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া নির্ধারন করেছেন। তবে আদালতে নির্দেশ মেনে ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০ টাকা ভাড়া নিলে কৃষকরা রক্ষা পেত। তাদের কাছে অসহায় কৃষক। এক বিঘা জমিতে আলু রোপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ৫৫-৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। আবার ভাড়াও বাড়তি কৃষক যাবে কোথাই, সব মেনে কৃষক ফসল উৎপাদন করেই চলেছেন।
তানোরে পাচটি হিমাগার রয়েছে। এর মধ্যে তানোর টু মুন্ডুমালা রাস্তা সংলগ্ন দেবিপুর মোড়ের পশ্চিমে ও পূর্বে রহমান গ্রুপের দুটি, থানা মোড় টু কালিগঞ্জ হাটের উত্তরে মুল রাস্তা সংলগ্ন তামান্না গ্রুপের তামান্ন হিমাগার ১ টি, দক্ষিণে মুল রাস্তার পশ্চিমে আল মদিনা নামের একটি ও আমান গ্রুপের আমান হিমাগার একটি।
আল মদিনা হিমাগারের ম্যানেজার জানান, হিমাগারে আলু আসতে শুরু করেছে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক কোন কৃষক ৫০ কেজির বস্তায় আলু আনেন না। তবে হিমাগারের ভিতরে রাখার সময় রিপ্যাক করে ৫০-৫৫ কেজির বস্তা রাখা হবে বলেন তিনি। তবে কোন রিপ্যাক না করে ৭০ কেজির বস্তা রাখছেন। ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যুতের বাড়তি দামের জন্য ভাড়া ৩০০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, হিমাগারগুলো এমন ঘটনার জন্ম দিলে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৪২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares