শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে প্রতিবন্ধী নেতাকে পিটিয়ে আহত করলেন মেয়র সাইদুর ও রাব্বানী

তানোরে প্রতিবন্ধী নেতাকে পিটিয়ে আহত করলেন মেয়র সাইদুর ও রাব্বানী

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে আস্থা প্রতিবন্ধী সংস্থার সভাপতি জাতীয় তৃনমুল প্রতিবন্ধী সংস্থার সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদক শামসুল আলমকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান ও সাবেক মেয়র সাবেক আওয়ামীলীগ  সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন।গতকাল বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে মুন্ডুমালা বাজারে ঘটে এহামলার ঘটনাটি। এঘটনায় প্রতিবন্ধী শামসুল মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ধীন রয়েছেন। তার বাড়ি মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চিনাশো গ্রামে। সে ইউসুফ আলীর পুত্র। সাবেক ও বর্তমান মেয়রের এমন হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই সাথে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন প্রতিবন্ধী সংস্থা থেকে শুরু করে সচেতন মহল।
মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান জানান, শামসুল ফেসবুকে বাজে কথা লিখে পোষ্ট করেন। একারনে বুধবার মুন্ডুমালা বাজারে তার উপর হামলা করে আনাদের লোকজন। খবর পেয়ে ছুটে আসি। আমি না আসলে তাকে মেরে ফেলত। আপনি তার মুখে আংটি পরা হাত দিয়ে  কিল মেরে ক্ষত করে দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন আমি মারলে তার বেচে থাকার কথা না। তবে ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে লাগতে পারে। ফেসবুকে বাজে কিছু লিখলে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে একজন প্রতিবন্ধী নেতাকে কিভাবে মারেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, সে দীর্ঘ দিন ধরে আমার ও রাব্বানী ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখে এজন্য উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে বলেও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
সাবেক মেয়র ও সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী জানান, মুন্ডুমালা বাজারের ডাক্তার হাসানের মায়ের জানাযা শেষে বাজারে যাওয়ার সময় হট্রগোল দেখে কাছে যায়। গিয়ে দেখি শামসুলকে মারছে। উত্তেজিত লোকজনকে থামায়। আমি কেন মারব। আপনিও নাকি কিল ঘুষি মেরেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, মিথ্যা বলব না, আমি একটি চড় মেরেছি। কি কারনে হামলা জানতে চাইলে তিনি জানান, ফেসবুকে পরিবারকে নিয়ে টানা হেছড়া করেছে এজন্য অনেকে মানতে পারেনি। শামসুল ফেসবুকে পোষ্ট করেনি তাকে কেন মারলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, আমি গাড়িতে উঠছি পরে কথা বলছি।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান,  ডাক্তার হাসানের মায়ের জানাযা শেষ করে বাজারে এসে দেখি শামসুলকে পেটাচ্ছে মেয়র সাইদুর ও রাব্বানী। শামসুলের দুই পা অচল, সে ভালো ভাবে হাটতে পারে না। আর মেয়র সাইদুর ও রাব্বানী কি ভাবে শামসুলের মত ব্যক্তির গায়ে হাত তুলেন। সাইদুরের যে হাতে পাথরের আংটি ছিল সেই হাত দিয়ে মুখে কিল মারার সাথে সাথে চামড়া উঠে গর্ত হয়ে প্রচুর রক্ত বের হতে থাকে। তারপর পাইকাড়ি ভাবে কিল ঘুষি মারতে থাকেন। এর চেয়ে লজ্জার ঘৃনার কি হতে পারে। তারা নাকি সেবক, জনতার খাদেম, এটাই তাদের প্রকৃত রুপ, যা মুন্ডুমালা বাজারের ব্যবসায়ীরা দেখল। তাকেই পিটিয়ে পুলিশকে মেয়র সাইদুর হুমক দিচ্ছেন জেলে দেওয়ার জন্য। শামসুল যদি ফেসবুকে পরিবার নিয়ে বাজে কিছু লিখে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। আবার জানতে হবে এটা কোন ফেক আইডি কিনা, যাচাই বাছাই না করে তাকে ফিল্মি স্টাইলে মারা ঠিক হয় নি, মানবতা বিরোধী। এর কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
আহত শামসুল মেডিকেলের বেডে সুয়ে থেকে কাতরাতে কাতরাতে বলেন, ফেসবুকে পোষ্ট হয়েছে তানোরের উন্নয়ন নামে ফেক আইডি থেকে। আমি মেয়র সাইদুর ও রাব্বানীকে বারবার বলছি, আমি লিখিনি বা পোষ্ট করিনি, যদি প্রমান হয় যে শাস্তি দিবেন মেনে নিব। কিন্তু কোন কথা না শোনে সাইদুরের হাতের আঙ্গুলে পাথরের আংটি ছিল, সেই হাত দিয়ে মুখের ডান সাইডে চোখের নিচে কিল মেরে ক্ষত করে দিয়েছে। অল্পের জন্য চোখে লাগেনি। শুধু মেয়র সাইদুর না গোলাম রাব্বানীও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারে। বাজারে সিসি ক্যামেরা যেখানে যাবেনা সেখানে টেনে হিছড়ে নিয়ে গিয়ে মেরেছি। মুখের জখম দিয়ে রক্ত বের হতেই আছে। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে তারা। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। থানার ওসি দেখতে এসেছিল মেডিকেলে। আমার কেউ নেয়, একটু রক্ত বের হওয়া বন্ধ হলে থানায় অভিযোগ করব।
সেখানেই ছিলেন শামসুলের স্ত্রী নুরনাহার বেগম, তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যে মানুষটি ভালো করে হাটতে পারেনা, তার গায়ে কিভাবে অমানুষের মত মারতে পারে। এখন টাকা ওয়ালা হয়েছে, এজন্য দাম্ভিকতা। আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আপাতত ক্ষত জায়গায় ব্যান্ডিজ করা হয়েছে, রক্ত বন্ধ না হলে উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে এবং পরিক্ষা নিরিক্ষার পর শরীরের কোথায় কি অবস্থা বলা যাবে।
জাতীয় তৃনমূল প্রতিবন্ধী সংস্থার প্রচার সম্পাদক রাসেল জানান, ঘটনা শোনার পর ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হয়ে প্রতিবন্ধী কে মেরে রক্তাক্ত করতে পারে এই প্রথম। তাকে মারতে হাত কাপল না। এর প্রতিবাদে, বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি দিয়ে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, সংবাদ পেয়ে আহত প্রতিবন্ধী নেতা শামসুলকে মেডিকেলে দেখে এসেছি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS