বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলায় প্রবাসীর তেঁতুলিয়া ব্রিকস দখল করে নেয়ার অভিযোগ

ভোলায় প্রবাসীর তেঁতুলিয়া ব্রিকস দখল করে নেয়ার অভিযোগ

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়ায় ইউনিয়নে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর তেঁতুলিয়া ব্রিকস জোরপূর্বক দখলে নিয়ে গাজী ব্রিকস নামে ইট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে নুরুল হুদা গোলদারের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ প্রায় ২ মাসের উপরে ইটভাটাটি দখলে রেখে সেখানে গাজী ব্রিকস নামে ইট তৈরি করছেন নুরুল হুদা। তেঁতুলিয়া ব্রিকস ফিল্ড জোরপূর্বক দখলে নিয়ে নুরুল হুদার হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে ব্রিকস ফিল্ডে প্রবেশ করতে পারছেন না জিয়াউর রহমানের দায়িত্বে থাকা লোকজন। তেঁতুলিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার মাইনুদ্দিন লিখিতভাবে এমন অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভোলা শহরের মৃত এবিএম বজলুল হক গোলদারের ছেলে মোঃ সিরাজ গোলদার, মোঃ হারুন অর রশিদ গোলদার, মোঃ মোকাম্মেল হক গোলদার, মোঃ নুরুল হুদা গোলদারের কাছ থেকে তাদের মালিকানাধীন নয় একর ৬০ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ‘তেঁতুলিয়া ব্রিকস’ ফিল্ডটি পশ্চিম ইলিশার মৃত এ্যাড: মোঃ রহুল আমিনের ছেলে মোঃ জিয়াউর রহমান ১৫ বছরের জন্য লিজ (লগ্নি) নেন। উক্ত ব্রিকস ফিল্ডের লগ্নি বাবদ বছরে ৪ লক্ষ টাকা জিয়াউর রহমান জমির মালিকগণকে প্রদান করবেন শর্তে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তিনামা স্ট্যাম্পে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিয়াউর রহমান লগ্নি মালিকানাসত্তে¡ ইট উৎপাদনের জন্য তেঁতুলিয়া ব্রিকসের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অফিসের অনুমতি নিয়ে ইট উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেন। তেঁতুলিয়া ব্রিকস চালুর জন্য প্রবাসী জিয়াউর রহমান শাহিন অনেক টাকা ব্যয় করে ইট তৈরি জন্য যাবতীয় মালামাল ক্রয় করেন এবং ইটভাটাটিকে সুন্দরভাবেভাবে গুছিয়ে নেন। জিয়াউর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় তার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ‘আম-মোক্তার নামা’ করে তাছলিমা আক্তারকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তেঁতুলিয়া ব্রিকসের মালিক জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে দায়িত্ব পেয়ে তাছলিমা বেগম ও তার স্বামী মাইনুদ্দিন ব্রিকসটি পরিচালনা করে আসছিলেন। মাইনুদ্দিন তেঁতুলিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তেঁতুলিয়া ব্রিকস ফিল্ড পরিচালনার সুবিধার্থে জিয়াউর রহমান নুরুল হুদা গোলদারকেও সেখানে দায়িত্ব দেন। কিছুদিন তেঁতুলিয়া ব্রিকসটি ঠিকঠাক চলছিলো।এর পর করোনাভাইরাসের মহামারী শুরু হলে ব্রিকস ফিল্ড বন্ধ রাখতে হয়। এর কিছুদিন পর ঘূর্ণিঝড়ে ব্রিকস ফিল্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় জিয়াউর রহমানকে। সবকিছু কাটিয়ে জিয়াউর রহমান নতুনভাবে তার দায়িত্বে থাকা লোকজন দিয়ে তেঁতুলিয়া ব্রিকসের ইটের ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। চুক্তির পর থেকে দীর্ঘ ৪ বছর যাবৎ ইট উৎপাদন করে ব্যবসা চালিয়ে আসেন জিয়াউর রহমান। হঠাৎ গত দুই মাস আগে জমির মূল মালিক নুরুল হুদা গোলদার চুক্তি অমান্য করে লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক তেঁতুলিয়া ব্রিকসে প্রবেশ করে জিয়াউর রহমানের লোকজনদেরকে মারধর করে ইটভাটা দখল করে নেয়। নুরুল হুদা ব্রিকস ফিল্ডে থাকা জিয়াউর রহমানের উৎপাদিত ইটসহ ইট উৎপাদনের ব্যবহারিত অন্যান্য মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। নুরুল হুদা পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলার দায়িত্বরত তোতা মিয়ার কাছ থেকে অবস্থানরত একটি ছাড়পত্র নেন। বিষয়টি জানতে পেরে তেঁতুলিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার মাইনুদ্দিন পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল অফিসকে অবহিত করলে বরিশাল অফিসের মোঃ হালিম,তোতা মিয়াকে তলব করেন এবং সরজমিনে গিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন। নুরুল হুদা ইটভাটা দখলে নেওয়ায় ম্যানেজার মাইনুদ্দিন ভোলা থানায় একটি অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে নুরুল হুদাকে ইট উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশন দেন। পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে নুরুল হুদা ইট উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে ইটভাটা দখলের ব্যাপারে তেঁতুলিয়া ব্রিকসের মালিক জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ইটভাটা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া তাছলিমা আক্তার বাদী হয়ে মোঃ নুরুল হুদা, এম ইসলাম আজাদ, মোঃ খলিল, কালু, মাইনুদ্দিন, হাসানসহ অজ্ঞাত নামা আরও ৩/৪জনকে আসামী করে ভোলার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-এমপি ৫৯৭/২২। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। আদালতের নির্দেশে ভোলার ডিবি পুলিশের একটি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন পরিচালিত তেঁতুলিয়া ব্রিকস (ইটভাটা) নুরুল হুদা গোলদার জোরপূর্বক দখল করে গাজী ব্রিকস নামে পরিচালনা করছেন। ডিবি পুলিশ নুরুল হুদা গোলদারের জোরপূর্বক ইটভাটা দখলের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

অন্যদিকে, সকল কাগজপত্র থাকা সত্বেও নুরুল হুদা গোলদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোঃ জিয়াউর রহমানের তেঁতুলিয়া ব্রিকস ফিল্ড দখল করে নেওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছেন জিয়াউর রহমান। ইটের ব্যবসা করার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন জিয়াউর রহমান। এই ব্যবসা করার জন্য তিনি কিছু ঋণ গ্রহণ করেন। ইটভাটা বেদখল হয়ে যাওয়ায় মানুষের দেনা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন জিয়াউর রহমান।

তেঁতুলিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ মাইনুদ্দিন জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিয়াউর রহমান নুরুল হুদা গোলদার ও তার ভাইদের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য তেঁতুলিয়া ব্রিকস ফিল্ড লিজ (লগ্নি) নিয়ে ইটের ব্যবসা শুরু করেন। জিয়াউর রহমান প্রবাসে থাকায় আমার স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে ইটভাটা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। আমি তেঁতুলিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। গত দুই মাস আগে নুরুল হুদা লোকজন নিয়ে তেঁতুলিয়া ব্রিকস জোরপূর্বক দখলে নিয়ে গাজী ব্রিকস নাম দিয়ে ইট উৎপাদন করছে। আমাদেরকে ইটভাটায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এখনো ইটভাটার চুংগায় তেঁতুলিয়া ব্রিকসের নাম লেখা রয়েছে। আমরা ব্রিকস ফিল্ডে প্রবেশ করতে চাইলে নুরুল হুদা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। আমরা যাতে তেঁতুলিয়া ব্রিকস ফিল্ডটি উদ্ধার করতে পারি সে জন্য প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নুরুল হুদা গোলদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিয়াউর রহমান শাহিন স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে আমাদের মালিকানাধীন তেঁতুলিয়া ব্রিকস ফিল্ডটি লিজ (লগ্নি) নেন। লগ্নি নেওয়ার পর জিয়াউর রহমান শাহিন আমাদের জমির মাটি কেটে জমি নষ্ট করে ইট তৈরি করা এবং আমাদের জমি দেখিয়ে ধারদেনা করাতে জিয়াউর রহমান শাহিনের সাথে আমাদের ৪ ভাইয়ের জমি লগ্নি চুক্তি নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বাতিল করি এবং জিয়াউর রহমানকে তার স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দিয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

২৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS