মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলার ৪টি আসনেই আ’লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী

ভোলার ৪টি আসনেই আ’লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী

ভোলা প্রতিনিধিঃ ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর ভোলার আওয়ামী লীগে স্বস্তি নেই। অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ-কলহ আর উপদলীয় বিরোধে বিপর্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা। ভোলার ৪টি আসনেই বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছেন ২ ডর্জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। ফলে এক একটি আসনে তৈরি হয়েছে কয়েকটি গ্রæপ। এতে আওয়ামী লীগের শত্রæ হয়ে উঠেছে একই দলের নেতাকর্মীরা। বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনুসারী নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। এমনকি মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও একে অপরের কড়া সমালোচনা করছেন। নির্বাচনের আগে এসব বিরোধ মেটাতে না পারলে ভোলায় দলটির ভরাডুবি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন,বর্তমানে যারা এমপি আছেন, তারা নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন, জয়লাভ করতে হলে সে সব আসনে নতুন মুখ প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দিলে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেবেন নেতারা।

ভোলা-১ (সদর) আসনে ৪ জনে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন-তোফায়েল আহন্মে, সভাপতি ফজলুলকাদের মজনু মোল্লা, ঢাকা উত্তর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মাহাবুবুর রহমান হিরন, ছাত্র নেতা হেমায়েত উদ্দিন ।

এ আসনের এমপি সাবেক শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহন্মেদের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকর্মীর। এমপি তোফায়েল আহন্মেদ ও তার অনুসারিরা মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতারা প্রকাশ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। ফলে দিন দিন পরিবেশ হচ্ছে ঘোলাটে। মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহাবুবুর রহমান হিরন বলছেন, তোফায়েল আহন্মেদ এমপি হয়ে সংগঠনে বিএনপি-জামায়াতকে ভিড়িয়েছেন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়েছেন। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আওয়ামী লীগে সভাপতি ও প্রধান মন্ত্রী শেখহাসিনা তার বক্তব্যে তোফায়েল আহন্মেদের সব ফাস করে দিয়েছেন। ভোলা-১ আসন ঠিক রাখতে হলে নতুন প্রার্থীর দরকার বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রীয় যুবনেতা ডঃ আশিকুর রহমান শান্ত ভোলা-১ আসনে জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য দলের চেয়ারপার্সনের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ১১ জন। এরা হলেন- কেন্দ্রীয় যুব নেতা ডঃ আশিকুন রহমান শান্ত, বর্তমান এমপি আলী আজম মুকুল, কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডঃ ইউছুফ হোসেন হুমায়ুন, তার ছেলে ডাঃ আফতাফ হোসেন রাজ, কাদের খানসহ অন্যরা।

বর্তমান এমপি আলী আজম মুকুল চাচার দাপটে আওয়ামী লীগের সমর্থনে এমপি হলেও দলটির নেতাদের সঙ্গে নেই সুসম্পর্ক। স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে মোটা অংকের ছালামী দিতে হয়েছে বলে জানান যুবলীগ নেতা ও চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন। নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন, মামলা-হামলায় ত্যাগী নেতারা অন্য প্রার্থী খুজছেন। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের নেতারা অনেকে কেন্দ্রীয় যুব নেতা ডঃ আশিকুর রহমান শান্তর সাথে যোগা যোগ রাখছেন। তিনি কয়েক বছরে দৌলতখান-বোরহান উদ্দিন আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করে সাজিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় নেতারা। এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বেশ কয়েক বছর পাল্টা পাল্টি সভা ও বক্তব্য চলছে। তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন বলে নেতা-কর্মীরা জানান। তবে মুকুল বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো আছে। রাজনীতি করতে গেলে সমস্যা হয়ই, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও সমস্যা হয়। আমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ডঃ আশিকুর রহমান শান্ত বলেন, ভোলা-২ আসনে ঠিকাদারী কমিশন, চর দখল, চাষাদের কাছ থেকে চাদা আদায়, স্থানীয় নির্বাচনে মোটা অংকের ছালামী, নেতা-কর্মীদের নির্যাতন, মামলা-হামলা করে বাড়ি ছাড়া করা নেতা-কর্মীদের নিয়ে আর সমজতার সুযোগ নাই। ২ আসনে নতুন মুখ না আসলে আসনটি হাত ছাড়া হয়ে যাবে।

ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে ৬ জন দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- বর্তমান এমপি নুরুনবী চৌধুরী শাওন, কেন্দ্রীয় উপকুমিটির নেতা ইঞ্জিনিয়র নোমান হাওলাদার, মেজর (অবঃ) জসিম উদ্দিনসহ অন্যরা। এ অসনের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা দির্ঘদিন নির্যাতিত থাকলেও ইঞ্জিনিয়র নোমান হাওলাদার মাঠ গুছানোর সাথে সাথে নেতা-কর্মীদের মোড় ঘুরে যায়। দ্বন্ধ শুরু হয় নোমান-শাওন। কদরও বাড়তে শুরু করে নেতা-কর্মীদের। নোমান সকল নেতা-কর্মীকে দ্বন্ধ-সংঘাত এড়িয়ে নৌকা তথা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এক হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। সে থেকে নোমানের দিকে ঝুকে পরেন নেতা-কর্মীরা। তিনি ঘোষনা দেন যে সব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এমপি ৫ মিনিটে ১৩টি মামলা করেছেন সেই সব মামলা আর থাকবেনা। কমিশন বানিজ্য, নদীর বালু চুরি, বেড়ি বাধের টাকা আতœসাত, চাদা বাজি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি ৩ আসনে শিল্প কারখানা করে বেকারত্ব দুর করার ঘোষনা দেন। দেশ নেত্রী লালমোহন-তজুমদ্দিনে যাকে নৌকা প্রতীক দিবেন আমরা সবাই তার জন্য কাজ করবো।

নুরুনবী চৌধুরী শাওন এমপি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমার ১৪ বছরের সাজানো সংসার কেউ বিকাশ আর নগদ দিয়ে নিতে পারবেনা। তিনি তার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন আমাকে আবার নৌকায় মনোনয়ন দিলে আমি বাকী উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত ও ৩ আসনের বেকারত্ব দুর করবো।

ভোলা-৪(চরফ্যাশন-মনপুরা)আসনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ২জন। তারা হলেন – বর্তমান এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহন্মেদ। এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নেতা-কর্মীরা ছিলেন হিসাবের বাহিরে। তাদের মুল্য কি ছিল তা তারা জানতেননা বলে জানান। এমপির আতœীয় ও কিছু বাহিনীর হাতে জিন্মি ছিলেন নেতা-কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে মধুমতী ব্যাংক ও নারী ক্লেংকারী, অর্থ পাচার, সাংবাদিক নির্যাতন, ঠিকাদারী কমিশন বানিজ্য, নদী ও চর দখল, কৃষকদের কাছ থেকে চাদা আদায় ও স্থানীয় নির্বাচনে মোটা অংকের ছালামী গ্রহনসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার বাহিনী নিয়ন্ত্রন করতেন চরফ্যাশন-মনপুরা।

সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহন্মেদ চরফ্যাশন-মনপুরায় দলীয় ও সামাজিক কর্মকান্ড শুরু করলে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা তার দিকে ঝাপিয়ে পরেন বলে দাবী করেন নেতারা। এ দেখে জ্যাকব কয়েক কর্মীকে ধরে পুলিশে দেন। হামলা করেন মেজবাহ উদ্দিন উদ্দিনের সভা, সমাবেশে। এনিয়ে মিডিয়ায় শিরোনামও হয়। সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন কয়েক বছরে ৪ আসনের আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদেরকে সুসংগঠিত করেছেন বলে জানান নেতারা।

মেজবাহ উদ্দিন জানান, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের দলের নেতা-কর্মীরা ও ৪ আসনের মানুষেরা নির্যাতিত হবে তা জননেত্রী ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বেচে থাকতে তা হতে পারেনা। জাতির পিতার নাম বাদ দিয়ে আমি আমার নামে কোন কিছুন নামকরন করবোনা আর করতেও দিবনা। আমি জননেত্রী ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য চরফ্যাশন ও মনপুরার মানুষকে সুসংগঠিত করেছি। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন আমি সবাইকে নিয়ে নৌকার কাজ করবো। এমপি জ্যাকবকে তার মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি।

১১৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares